বেগম রোকেয়াকে ‘কাফির-মুরতাদ’ বললেন রাবি শিক্ষক, সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৪৪ PM
নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্মদিনে রাজধানীতে বেগম রোকেয়া পদক ২০২৫ প্রদান করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নারী শিক্ষা, অধিকার ও মানবাধিকারে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে চার বিশিষ্ট নারীর হাতে এ সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়।
এদিনে সামাজিক মাধ্যমে বেগম রোকেয়াকে ‘কাফির’ ও ‘মুরতাদ’ আখ্যা দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান। তিনি নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে বেগম রোকেয়ার একটি ফটো কার্ড শেয়ার করে লেখেন ‘আজ মুরতাদ কাফির বেগম রোকেয়ার জন্মদিন।’ মুহূর্তেই পোস্টটি ভাইরাল হয়ে পড়ে; সামাজিক মাধ্যমে নিন্দার ঝড় ওঠে।
কার্ডটিতে রোকেয়ার বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সমালোচনামূলক মন্তব্য যুক্ত করা হয়েছে। তার পোস্টে অনেকেই আপত্তি জানান। একজন মন্তব্যকারী ‘সরি স্যার’ লিখে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল ইসলামের পোস্টের একটি স্ক্রিনশট যুক্ত করেন, যেখানে ‘আমিই রোকেয়া’ লোগোর সামনে প্রধান উপদেষ্টা দাঁড়িয়ে আছেন।
মাহমুদুল হাসান এর আগেও ৫ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়াকে নিয়ে অনুরূপ ধর্মীয় সমালোচনাধর্মী পোস্ট করেছিলেন বলে জানা যায়।
২০০৯ সালে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন মাহমুদুল হাসান। পরবর্তীতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শেষে ২০১৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দেন।
ঘটনাটি নিয়ে ছাত্র সংগঠনের নেতারা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। রাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক জায়িদ হাসান জোহা বলেন, ‘সবার নিজস্ব দর্শন থাকে, তবে প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য না করাই ভালো। এর বেশি বলতে চাই না।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিন বিশ্বাস এষা বলেন, ‘বেগম রোকেয়া উপমহাদেশজুড়ে নারী জাগরণের পথিকৃত। তাকে নিয়ে এমন মন্তব্য মানে নারী সমাজকেই অবমাননা করা। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আমি যে পোস্টে মন্তব্য করেছি, তাতে বিস্তারিত ব্যাখ্যা আছে। সত্যতা যাচাই করতে চাইলে কোনো ভালো আলেমের কাছে জানতে পারেন।’
সিনিয়র সাংবাদিক গাজী নাসিরুদ্দিন আহমেদ খোকন তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বেগম রোকেয়াকে ‘মুরতাদ’ বলার মতো ফিকাহজ্ঞান কি একজন পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপকের থাকার কথা? প্রফেসর আবদুস সালাম থেকে শুরু করে বিশ্বমানের বিজ্ঞানীরা নারী শিক্ষার গুরুত্ব স্বীকার করেছেন। শিক্ষিত মা মানে শিক্ষিত জাতি—এই বিশ্বাসই ছিল তাদের বিজ্ঞানমনস্কতার অংশ।’