চার প্লাটফর্মে সক্রিয় আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের নীল দলের কার্যক্রম
- মো. জাফর আলী
- প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:১৪ AM , আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১০:১৪ AM
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সার্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক রাজনীতির পটেও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। যার সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ হল নীল দলের প্রভাব ও প্রকাশ্য কার্যক্রম অদৃশ্য হয়ে যাওয়া। বিশেষ করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কার্যক্রম অদৃশ্য হলেও ইতোমধ্যে দুইভাগ হয়ে গেছে একসময়কার প্রকাশ্য আওয়ামীপন্থি হিসেবে পরিচিত শিক্ষকদের এ সংগঠনটি, হয়েছে দুটি কমিটিও।
শুধু তাই নয়, নীল দলের নামে কোনো কার্যক্রম পরিচালনা না হলেও ‘প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারে তাদের কার্যক্রম চলছে। তবে গ্রুপিংয়ের কারণে এ ব্যানারের বাইরে আরেক গ্রুপ তৈরি করেছেন ‘গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ নামে আরেক প্লাটফর্ম। বর্তমানে সবমিলিয়ে চারটি প্লাটফর্মে চলছে নীল দলের কার্যক্রম। বিশেষ করে, এই প্লাটফর্ম দুটি শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই সীমাবদ্ধ নেই, বরং এগুলোতে সারাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েরই নীল দলের শিক্ষকরা যুক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আবার একসাথে দুটি প্লাটফর্মেই যুক্ত আছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নীল দলের শিক্ষকরা সরাসরি অর্থাৎ মাঠ পর্যায়ে নিজস্ব কোনো কার্যক্রম চালাতে না পারায় কৌশল হিসেবে ‘প্রগতিশীলতা’র ব্যানারে পরোক্ষভাবে এসব প্লাটফর্ম ব্যবহার করে মূলত আওয়ামী লীগ বা নীল দলের এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করছেন। যদিও নীল দল বলছে, ব্যক্তিগত জায়গা থেকে যেকেউ যেকোনো প্লাটফর্মে যুক্ত হতে পারেন, এটা দলীয় কোনো বিষয় নয়।
ভিন্ন ভিন্ন ব্যানার থেকে নীল দলের শিক্ষকদের এমন সক্রিয়তা নিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানপন্থিদের মাঝে যেমন উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে, ঠিক তেমনি নিজেদের মধ্যে বিভাজনের বিষয়টি নিয়েও দলটির (নীল) ভেতরে সাধারণ কর্মীদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে বিব্রতকর পরিস্থিতি।
“নীল দলের শিক্ষকরা অন্যতম। তারা ফ্যাসিবাদকে শুধু সমর্থনই দেননি, বরং ক্যাম্পাসে তা প্রতিষ্ঠাও করেছেন। তাদের ফ্যাসিবাদী নেত্রীর পতনের পরও ঘাপটি মেরে বসে থেকে তারা নামে-বেনামে বা প্রগতিশীলতার ব্যানারে বিভিন্ন প্লাটফর্মের মাধ্যমে আবার ফ্যাসিবাদেরই সুর বাজাচ্ছে”-মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক, ডাকসু।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৭ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়েছেন। এই রায় ঘোষণার পর তা প্রত্যাখ্যান করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহবুব আলম প্রদীপের স্বাক্ষরে এবং প্রগতিশীল শিক্ষকসমাজের ব্যানারে একটি বিবৃতি দেন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি (নীল দল) ১০০১ শিক্ষক।
গত ৯ নভেম্বর আন্দোলনরত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ এবং তাদের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শিক্ষকসমাজের ব্যানারে বিবৃতি দেন বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি ৬০১ শিক্ষক। যেখানে ঢাবির অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান, জিনাত হুদা এবং আ. ক. ম. জামাল উদ্দিনসহ বিতর্কিত ও বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত নীল দলের শিক্ষকদের নামও ছিল।
“নীল দলের শিক্ষকরা ভিন্ন কোনো নামে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের ভাবধারা বা আদর্শের সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো কার্যক্রম অব্যাহত রাখলে তা পতিত ফ্যাসিবাদের অংশ হিসেবেই গণ্য হবে”-শেখ তানভীর বারী হামিম, ঢাবি ছাত্রদল নেতা।
গত ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে জাতীয় ৪ নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিবৃতি দেন তাদের মধ্যকার ৫৭১ শিক্ষক। এর আগে, তাদেরই ৪৭১ শিক্ষক জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে গত ১৩ অক্টোবর বিবৃতি দেন।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ৩৮১ জন শিক্ষক বিবৃতি দিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেফতারকৃত আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের নিঃশর্ত মুক্তি প্রদান, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, শিক্ষকদের চাকরিচ্যুতি/বহিষ্কার/সাময়িক বহিষ্কার এবং একাডেমিক ও প্রশাসনিক যেকোনো ধরনের শাস্তি বাতিলের দাবিতে এই বিবৃতি দেন তারা।
তারও আগে, গত ১০ জুলাই সর্বপ্রথম দেশের নানা ঘটনাকে ‘মব সন্ত্রাস’ আখ্যা দিয়ে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১জন শিক্ষক বিবৃতি দেন, যাদের অধিকাংশই নীল দলের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। এই বিবৃতিই শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরে আওয়ামীপন্থি বা নীল দলের শিক্ষকদের প্রথম দৃশ্যমান কর্মসূচি ছিল। যেটিতে অনেক শিক্ষকের নাম অন্তর্ভুক্ত করা ও না করা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন ওঠে।
ভিন্ন ব্যানারে কিংবা ছায়া প্লাটফর্মের মাধ্যমে নীল দলের কার্যক্রম পরিচালনা প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদে (ডাকসু) ছাত্রদল প্যানেলের সাবেক জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নীল দলের শিক্ষকরা ভিন্ন কোনো নামে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের ভাবধারা বা আদর্শের সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো কার্যক্রম অব্যাহত রাখলে তা পতিত ফ্যাসিবাদের অংশ হিসেবেই গণ্য হবে। আর তাদের বিরুদ্ধে যেন বিশ্ববিদ্যালয় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, শিক্ষার্থী হিসেবে আমি সে দাবিই জানাই।
আরও পড়ুন: বিবৃতি পাঠানো হয়েছে অস্ট্রেলিয়া থেকে, অনেকের নাম যুক্ত করা হয়েছে ‘অনুমতি ছাড়াই’
ডাকসুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মা হিসেবে কাজ করে শেখ হাসিনাকে যারা খুনী হাসিনা বানাতে সহযোগিতা করেছে, তাদের মধ্যে এই নীল দলের শিক্ষকরা অন্যতম। তারা ফ্যাসিবাদকে শুধু সমর্থনই দেননি, বরং ক্যাম্পাসে তা প্রতিষ্ঠাও করেছেন। তাদের ফ্যাসিবাদী নেত্রীর পতনের পরও ঘাপটি মেরে বসে থেকে তারা নামে-বেনামে বা প্রগতিশীলতার ব্যানারে বিভিন্ন প্লাটফর্মের মাধ্যমে আবার ফ্যাসিবাদেরই সুর বাজাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, তারা শেখ হাসিনার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী, দেশকে সংকটে ফেলার অপচেষ্টা ও ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। তাদেরকে প্রতিহত করা ছাড়া উপায় নেই। যেখানে লীগ, সেখানেই আমাদের প্রতিরোধ নীতিতে যেতে হবে।
ঢাবি নীল দলে বিভাজন ও ছায়া প্লাটফর্মের আত্মপ্রকাশ যেভাবে:
জানা যায়, গত বছরের (২০২৪) মে মাসে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মো. আমজাদ আলীকে আহ্বায়ক এবং চারুকলার সিরামিক বিভাগের অধ্যাপক মো. রবিউল ইসলাম ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমানকে যুগ্ম-আহ্বায়ক করে ঢাবি নীল দলের নতুন কমিটি গঠিত হয়। এরই মাঝে, জুনে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু হয় এবং আগস্টে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের শোচনীয় পতন ঘটে। এদিকে, আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিরোধিতা করায় নীল দলও নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা ও প্রাসঙ্গিকতা হারায়। যার কারণে, প্লাটফর্মটির ব্যানার থেকে কার্যক্রম চালানো অনিশ্চয়তায় পড়ে যায় এবং নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াও অন্তত ৫ মাস পিছিয়ে যায়। ফলে প্লাটফর্মটির সাধারণ শিক্ষকদের মাঝে নেতাদের প্রতি আস্থাহীনতা ও ক্ষোভ তৈরি হয়।
নীল দলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নেতাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে নীল দলের কিছু শিক্ষক উদ্যোগী হয়ে গত ১০ জুলাই ‘প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ নামে এক প্লাটফর্মের আত্মপ্রকাশ ঘটান। এদিন তারা ‘মানবাধিকার ও মব’ পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিবৃতি দেন। যেখানে নীল দলের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম (রফিক শাহরিয়ার), ফার্মেসী বিভাগের অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ, ক্লিনিক্যাল ফার্মেসী এন্ড ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: আব্দুল মুহিত, সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপক ড. সঞ্চিতা গুহ, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. সুরাইয়া আক্তার, ফারসি বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম খান, আইআরের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান লিটু, ফলিত বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জাভীদ ইকবাল বাঙালীসহ গোলাপী (বাম) দলের কিছু শিক্ষক স্বাক্ষর করেন।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগের ধ্বংস করে দেয়া শিক্ষাব্যবস্থাকে ঠিক করতে ২০-৩০ বছর লাগবে
এ বিবৃতিতে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানান সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আ. ক. ম. জামাল উদ্দিন। কিন্তু বিতর্কিত থাকার কারণে নাম না দেওয়ায় তিনি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এম ওয়াহিদুজ্জামান (চাঁন)-সহ নীল দলের কিছু শিক্ষক নিয়ে ‘গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ নামে নতুন আরেকটা প্লাটফর্ম তৈরি করেন এবং পরে এতে সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদেরকে যুক্ত করেন। এরপর বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা করে বিভিন্ন সময়ে বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অবস্থান ও কার্যক্রমের বিষয়ে জানান দেন।
পাশাপাশি, এ বিদ্রোহী গ্রুপটি নীল দলের মূল কমিটির বাইরে গিয়ে 'নীল দল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়' নামে আলাদা একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে এবং অনেক শিক্ষককে যুক্ত করে। শুধু তাই নয়, গত ৩১ অক্টোবর অনলাইনে একটি ভার্চুয়াল সভা ডেকে তারা নতুন একটি কমিটিও ঘোষণা করেন। যেটিতে আহ্বায়ক করা হয় অধ্যাপক ড. আ. ক. ম. জামাল উদ্দিনকে। এতে জয়েন্ট কনভেনার করা হয় ফার্মেসী অনুষদের সাবেক ডিন ড. এস. এম আব্দুর রহমান, জীববিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহবুব হাসান এবং ব্যাংকিং এন্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে। এছাড়া, কো-কনভেনার করা হয় বোটানী বিভাগের শিক্ষক ড. আজমল হোসাইন ভূঁইয়া, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক শবনম জাহান এবং ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. সুরাইয়া আখতারকে। এর বাইরে, যারা ওই ভার্চুয়াল সভায় অংশ নেন তাদের অধিকাংশকেই এমনকি নীল দলের কমিটি গঠনের ডেকোরাম না মেনে অস্বাভাবিকভাবে পদায়িত করা হয়। যদিও এ কমিটি থেকে নিজেদের নাম অনেকেই প্রত্যাহার করে নেন।
এরই মধ্যে শোনা যাচ্ছে, নীল দলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরপরই নতুন কমিটি গঠনের তৎপরতা শুরু করেছিল কেন্দ্রীয় কমিটি। নিয়মানুযায়ী সাধারণত নীল দলের নতুন কমিটি গঠিত হয় বিদ্যমান কমিটি সংশ্লিষ্টদের আলোচনা, মতামত ও ভোট প্রদান এবং দায়িত্ব হস্তান্তর হয় সাধারণ সভার মাধ্যমে। সে অনুযায়ীই কেন্দ্রের মোট ৩৯ জন সদস্যের ৪ জন শিক্ষা ছুটিতে এবং ৩ জনের ব্যাপারে গুরুতর অভিযোগ ও বিতর্ক থাকায় বাকী ৩২ জনের মতামতের ভিত্তিতে একটি নতুন কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এখনো কোনো সাধারণ সভা না করে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়নি বলে জানিয়েছেন প্লাটফর্মটির শিক্ষকরা। এ নিয়ে তাদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
তবে বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক ড. আমজাদ আলীর দাবি, নতুন কমিটিকে গত ২৬ অক্টোবর দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, এ কমিটিতে জীববিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহবুব হাসানকে আহ্বায়ক এবং ফার্সি বিভাগের অধ্যাপক ড. বাহাউদ্দিন ও ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাভীদ ইকবাল বাঙ্গালীকে যুগ্ম-আহ্বায়ক করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার পক্ষে পোস্ট, ঢাবির ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে বাসা থেকে আটক
এদিকে, নীল দলের অভ্যন্তরে হওয়া এমন বিভাজনে অতিষ্ঠ প্লাটফর্মটির সাধারণ শিক্ষকরা। এমন কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয় দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের। পরিচয় না প্রকাশের শর্তে তারা বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের সংকট অতিবাহিত হচ্ছে। এমন সময়ে দলের মধ্যে এরকম গ্রুপিং আমরা আশা করি না। যারা প্লাটফর্মের দায়িত্বে আছেন তারা কমিটি গঠন ও দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। অন্যদিকে, যারা পাল্টা কমিটি ও প্লাটফর্ম গঠন করেছেন তারা এমন বিতর্কিত যে, তাদের অধীনে আমাদের থাকাটা বেমানান। আর নীল দলকে কেউ কেউ ব্যক্তিগত সম্পদের পরিণত করে ফেলেছেন।
আরেক শিক্ষক বলেন, জুলাই আন্দোলন চলাকালে আমরা বলেছিলাম শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান নিতে, কিন্তু অন্ধভাবে অন্যায়ের পক্ষে সায় দেওয়া হয় এই প্লাটফর্ম থেকে। অথচ আমাদের এই প্লাটফর্মের সৃষ্টি কোনো রাজনৈতিক বা লেজুড়বৃত্তিক প্লাটফর্ম হিসেবে হয়নি, সম্পূর্ণই বুদ্ধিবৃত্তিক একটা সংগঠন। কিন্তু এটাকে যেমন অনেকবেশি রাজনৈতিক বানিয়ে ফেলা হয়েছে, ঠিক তেমনি ব্যক্তিগতও বানানো হয়েছে। এটাকে কেউ কেউ ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে মনে করেন, যা আসলে কাম্য নয়। আর এখনো চেষ্টা করলে এই প্লাটফর্ম শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করতে পারে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ কিছু নোংরামির কারণে আমরাও বিব্রত। আমরা চাই, ফ্রেশ ইমেজের লোকদের দিয়ে নীল দল চলুক।
নীল দলের নতুন কমিটি গঠনের ব্যাপারে অধ্যাপক ড. আমজাদ আলী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের মেয়াদ যেহেতু গত মে মাসেই শেষ হয়েছে, সেহেতু সবাই মিলে আলোচনা করে নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কারণে সাধারণ সভা করা যায়নি, তবে ব্যক্তিগতভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমাদের কমিটি নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে।
অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের পাল্টা কমিটি গঠনের ব্যাপারে অধ্যাপক আমজাদ আলী বলেন, নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং করার মত কিছু লোক সব জায়গায় থাকে। সেরকমই যখন আমরা কমিটি গঠনের বিষয়ে নিয়মনীতি অনুযায়ী আলোচনা করতে যাই, তখন সেই নীতির বাইরে গিয়ে অধ্যাপক জামাল ভাইদের মতো কয়েকজন মিলে আলাদা কমিটি গঠন করে। আমাদের গঠিত কমিটিতে যারা আছেন তাদের কয়েকজনকেও দেখলাম ওই কমিটিতে (বিদ্রোহী) রাখা হয়েছে, যদিও এ শিক্ষকরা সেখান থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করেছে। তাদের কমিটিটা রীতি-নীতি বা আইনসিদ্ধ নয়, বরং পূর্ববর্তী কমিটি যে কমিটি ঘোষণা করবে সেটাই রীতিসিদ্ধ এবং মূল কমিটি।
আরও পড়ুন: হাসিনার পক্ষে বিবৃতিদাতা অধিকাংশেরই বিচার চলছে, বাকিদের আইনগত পদক্ষেপের কথা ভাবছে ঢাবি প্রশাসন
নীল দলে এত বিভাজনের বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্লাটফর্মের ভেতরে এরকম বিভাজন আসলে কাম্য নয়। এখন এমনিতেই দলের কঠিন ও সংকটকালীন সময় যাচ্ছে। এই তারা (বিদ্রোহীরা) যখন নিয়মকানুন না মেনে বাড়াবাড়ি করে, তখন বিষয়টি ভাল দেখায় না। আর অধ্যাপক জামাল ভাই এবং অধ্যাপক জিনাত হুদাসহ কেউ কেউ ভাবেন নীল দল বলতে তারাই! যেন তারা লিজ নিয়েছেন! তারা মনে করেন, তারাই সব এবং তাদেরকে দায়িত্ব দিলেই সবচেয়ে ভাল হবে। অন্যদের মতামতের বিষয়ে ততটা গুরুত্ব তারা দিতে চান না।
প্রগতিশীল বা গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের মতো প্লাটফর্মের বিষয়ে অধ্যাপক আমজাদ আলী বলেন, এসব প্লাটফর্ম ব্যক্তিগতভাবে যেকেউ করতে পারেন। কিন্তু এগুলো নীল দলের এজেন্ডা নয়।
এ বিষয়ে বক্তব্য ও নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, নীল দলের বিদ্রোহী কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আ. ক. ম. জামাল উদ্দিন, মূল নীল দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রবিউল ইসলামকে একাধিকবার কল দিয়ে পাওয়া যায়নি।
ঢাবির মূল নীল দলের নতুন কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. জাভীদ ইকবাল বাঙালী এবং অধ্যাপক ড. বাহাউদ্দিনও এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।