রাকসু নির্বাচন
সাড়ে তিন যুগ পর ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে রাবি
- মারুফ হোসেন মিশন
- প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৪০ AM
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), সিনেট ছাত্রপ্রতিনিধি ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে অপেক্ষার প্রহর শেষ। এ নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কী হবে না, এমন সংশয় ও প্রশ্ন ছিল রাবির শিক্ষার্থীদের ও নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের মনে। তবে সব সংশয় কেটেছে। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আজ আবার নির্বাচন হচ্ছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হল দখল, গেস্টরুম সংস্কৃতি ও আধিপত্যের রাজনীতি এখন আপাতত বন্ধ আছে। কোনো রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের কর্মসূচিতে যাওয়া এখন আর শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রত্যাশা—জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা এই পরিবর্তনগুলো টেকসই রূপ পাবে, ছাত্ররাজনীতি সুস্থ ধারায় ফিরবে, আসবে গুণগত পরিবর্তন, শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষিত হবে। প্রার্থীরাও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যাকে কেন্দ্র করে তাদের ইশতেহার সাজানোর চেষ্টা করেছে। এ সব কিছুর মধ্যেই আজ বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), সিনেট ছাত্রপ্রতিনিধি ও হল সংসদ নির্বাচন।
রাকসু প্রতিষ্ঠার ৬৩ বছরের মাথায় ১৫তম নির্বাচন আজ। এর মাঝে পাকিস্তান আমলে নির্বাচন সবচেয়ে বেশি ৮বার। '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, '৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীকালে সকল স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাকসু ও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় যে, ছাত্র আন্দোলনের সোনালি অর্জনগুলো তা ছাত্র সংসদের কারণেই সম্ভবপর হয়েছিল। স্বাধীন হওয়ার পরও দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব তৈরিতে রাকসুর ভূমিকা ছিল। যদিও স্বাধীনতার পাঁচ দশকে রাকসু নির্বাচন হয়েছে সবচেয়ে কম, মাত্র ছয়বার। তবে '৮০-র দশকের পরবর্তী সময়ে কার্যত ঝিমিয়ে পরা এই রাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে।
প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠনগুলোর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্যানেলের প্রার্থীদের সৃজনশীল ও ভিন্নধর্মী প্রচারণা, সময়োপযোগী ইশতেহার ও ডিজিটাল ক্যাম্পেইন ভোটযুদ্ধকে করেছে আরও রঙিন। ক্যাম্পাসজুড়ে বিরাজ করেছে উৎসবমুখর পরিবেশ, যেখানে নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে এবং স্বাধীনভাবে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করার সুযোগ পাবেন বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করছেন শিক্ষার্থীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দু-একটি সংগঠনের মধ্যকার ঐতিহ্যগত দ্বন্দ্ব ছাপিয়ে এবারকার নির্বাচন হতে যাচ্ছে রাকসুর ইতিহাসে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। বেশ কয়েকটি দিক থেকে রেকর্ড গড়েছে এবারের নির্বাচন। যার মধ্যে রয়েছে সর্বোচ্চসংখ্যক প্রার্থীর লড়াই, প্রায় ২৯ হাজার শিক্ষার্থীর একসঙ্গে ভোটদান এবং প্রথমবারের মতো প্রার্থীতা বাছাইয়ে ডোপ টেস্ট।
৪৩ পদে লড়ছেন ৯১৮ জন প্রার্থী
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, সকল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। রাকসুর ২৩টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩০৫ জন, যার মধ্যে নারী ২৬ জন। এ ছাড়া সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ৫টি পদে ৫৮ জন এবং হল সংসদ নির্বাচনে ১৫টি পদে মোট ১৭টি হলে ৫৫৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। যা রাকসুর ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ১১ হাজার ৩০৫ এবং ছাত্র ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন। নয়টি ভবনে ১৭ কেন্দ্রের ৯৯০টি বুথে প্রত্যেক ভোটারের রাকসু ও হল সংসদের মোট ৪৩টি পদে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকছে।
এবারই প্রথম আবাসিক হলের বাইরে রাকসু সিনেট ছাত্রপ্রতিনিধি ও হল সংসদের ভোট গ্রহণ হচ্ছে। ক্যাম্পাসের নির্ধারিত নয়টি ভবনে (৯৯০টি বুথ) শিক্ষার্থীরা ভোট দেবেন। সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী একাডেমিক ভবনে ভোট দিবেন জুলাই-৩৬ ও রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা (৪৬৬৫ ভোট)। মমতাজ উদ্দিন কলা ভবন নির্ধারণ করা হয়েছে মন্নুজান হলের জন্য (ভোট ২৩৭৮)। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনে ৩ টি কেন্দ্রে ভোট দিবেন তাপসী রাবেয়া, বেগম খালেদা জিয়া, রহমতুন্নেসা হলের শিক্ষার্থীরা (ভোট ৪২৮২)।
এদিকে জাবির ইবনে হাইয়ান বিজ্ঞান ভবনে দুটি কেন্দ্রে ভোট দিবেন শহীদ হবিবুর রহমান ও শামসুজ্জোহা হলের ভোটাররা (ভোট ৪২৫৫)। জামাল নজরুল বিজ্ঞান ভবনের দুটি কক্ষে বিজয়-২৪ ও নবাব আবদুল লতিফ হলের ২৬৪৭ জন ভোটাররা ভোট দিবেন । সত্যেন্দ্রনাথ বসু অ্যাকাডেমিক ভবনে ফজলুল হক ও মতিহার হলের মোট ২৮৬৪ শিক্ষার্থী, জগদীশ চন্দ্র ভবনে মাদার বখশ ও সোহরাওয়ার্দী হলের জন ৩৭৫৫ ভোটাররা ভোট দিবেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে সৈয়দ আমীর আলী ও শাহ মখদুম হলের ৩০৪২ শিক্ষার্থীদের ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ভোটারদের মানতে হবে যেসব নিয়ম
নির্বাচন কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে ভোটকেন্দ্রে প্রর্থীদের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে প্রত্যেক ভোটারকে শিক্ষার্থী পরিচয়পত্র (Student ID Card) সঙ্গে আনতে হবে। এককেন্দ্রের ভোটার অন্যকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না। ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পূর্বে ভোটার তালিকায় নাম, ভোটকেন্দ্র ও টেবিল নম্বর যাচাই করে নিতে হবে। ভোট প্রদানের পূর্বে আঙ্গুলে অমোচনীয় কালি দেওয়া হবে।
এছাড়া ৩টি করণী ও ৪টি বর্জনীয় বিষয় ভোটারদের মেনে চলতে বলা হয়েছে। এগুলো হলো শান্তিপূর্ণভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি ও নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। পছন্দের প্রার্থীর নামের পার্শ্বের চারকোনা ঘরে সরবরাহকৃত সাইনপেন দিয়ে ক্রস (×) চিহ্ন দিতে হবে । ভোট প্রদান শেষে ভোট কেন্দ্রের ৫০ মিটারের মধ্যে অবস্থান করা যাবে না। ভোটকেন্দ্রে প্রচার-প্রচারণা করা যাবে না। ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা বা ভীতি প্রদর্শন করা যাবে না। ভোটকেন্দ্রে মোবাইল, ক্যামেরা বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস সঙ্গে আনা যাবে না।
ভোট জালিয়াতি ঠেকাতে ভোটারদের তিন স্তরের নজরদারিতে রাখা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল আকন্দ। তিনি বলেন, ভোটে কারচুপি ঠেকাতে আমরা শুধু অমোচনীয় কালির ওপর নির্ভর করছি না। আমরা থ্রি-ডাইমেনশনাল সিকিউরিটি সিস্টেম নিশ্চিত করছি। প্রথম ধাপে যাচাই করা হবে ভোটারের শিক্ষার্থী আইডি কার্ডের সত্যতা। দ্বিতীয় ধাপে মিলিয়ে দেখা হবে ভোটারের ইউনিক আইডি নম্বর। তৃতীয় ধাপে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা থেকে যাচাই শেষে ভোট দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। কোনো পর্যায়ে সন্দেহ তৈরি হলে বিশেষ কিউআর কোডের মাধ্যমে ভোটারের তথ্য যাচাই করা হবে।
সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা সাত ঘণ্টা চলবে এই ব্যালট যুদ্ধ। তবে চারটার মধ্যে যাঁরা ভোটকেন্দ্রের আঙিনায় প্রবেশ করবেন, যত সময় লাগুক, তাঁরা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। একজন ভোটার গড়ে ১০ মিনিট সময়ে কোনো রকম বিঘ্ন ছাড়াই সব কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ে ভোট দিতে সক্ষম হবেন বলে আশা করছে নির্বাচন কমিশন।
ভোট গণণা হবে ৬টি অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (ওএমআর) মেশিনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকেন্দ্রের ভোটগ্রহণ ও ফলাফল এলইডি স্ক্রিনে প্রদর্শিত হবে। ভোট গ্রহণ শেষে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ভোট গণনার পর ফলাফল ঘোষণা করা হবে। ভোট গণনার পুরো প্রক্রিয়া সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাভুক্ত থাকবে।
শীর্ষপদে এগিয়ে যারা
এবারের রাকসু ভোটে আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ মিলিয়ে অন্তত ১১টি প্যানেল অংশ নিচ্ছে। এর বাইরে স্বতন্ত্র হিসাবে লড়ছেন প্রার্থীদের আরেকটি অংশ। ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং স্বতন্ত্র কয়েকজন প্রার্থীরা এগিয়ে আছেন বলে জরিপ ও শিক্ষার্থীদের আলোচনায় উঠে এসেছে। এর বাইরে রাকসুর একমাত্র নারী ভিপি প্রার্থী তাসিন খান, আধিপত্যবাদ বিরোধী ঐক্য, ছাত্র-অধিকার পরিষদ, ও বামজোট সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরাও আলোচনায় রয়েছেন।
জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি সংস্থা, সোচ্চার- টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশ এক সংবাদ সম্মেলনে রাকসু নিয়ে একটি জরিপের ফল প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে শীর্ষ তিন পদে সবকটিতেই এগিয়ে রয়েছে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল 'সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট' প্যানেল। জরিপে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্হানে অবস্থান করছে যথাক্রমে স্বতন্ত্র ও ছাত্রদল সমর্থিত 'ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম' প্যানেলর প্রার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ২৮৪ আবাসিক ও অনাবাসিক সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে জরিপ পরিচালনা করেছে সোচ্চার। জরিপে অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে ৭৯.৬ শতাংশ শিক্ষার্থী রাকসুতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ছাত্রীদের মধ্যে এর হার ৬৯.৪ শতাংশ, ছাত্রদের মধ্যে ৮৬.৫ শতাংশ। ৮৫.৭ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। ৫৫.৭ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন রাকসু নির্বাচনে ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের ফলাফলের প্রভাব পড়বে।
জরিপ অনুযায়ী, ছাত্রশিবির সমর্থিত 'সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট' ভিপি পদে ৩৬.৫ শতাংশ, জিএস ৩১.৭ এবং এজিএস ৩৩.৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল 'ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম' ভিপি পদে ২.৩ শতাংশ, জিএস পদে ২.৬ শতাংশ এজিএস পদে ৬.১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। এছাড়া ভিপি পদে ১০.৩ শতাংশ, জিএস পদে ২০.১ শতাংশ এবং এজিএস পদে ১২.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দিবেন বলে মতামত জানিয়েছেন।
জয়-পরাজয়ের যে সমীকরণ
এবারের রাকসু হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের। কে জয়ী হবে আগেভাগে অনুমান করা কঠিন হলেও নারী ভোটার, অনাবাসিক শিক্ষার্থী ও প্রথম বর্ষের ভোটাররাই শেষ পর্যন্ত জয়-পরাজয়ের সমীকরণে পার্থক্য গড়ে দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে। মোট ভোটারের ৬৮ শতাংশ অনাবাসিক। আর নারী ভোটার প্রায় ৩৯.১ শতাংশ, সংখ্যায় যা ১১ হাজার ৩০৫। শিক্ষার্থীরা বলছেন, নারী ভোটারদের ভোট যারা বেশি পাবেন, তাদেরই জয়ী হওয়ার সম্ভবনা বেশি।
এ ছাড়া ছাত্রদলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে যুক্ত হওয়া প্রথম বর্ষের প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থীর ভোট জয়-পরাজয়ের সমীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে মোট ভোটারের প্রায় বেশিরভাগই অনাবাসিক শিক্ষার্থী। তাদের অনেকেই ছাত্র সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক আবহ থেকে থাকেন অনেকটাই দূরে। তাদের ভোটের পাল্লা যেদিকে বেশি ঝুলবে, সেসব প্রার্থীরাই অনেকটা এগিয়ে থাকবেন।
তিন স্তরে নিরাপত্তার জাল
রাকসু, সিনেট ছাত্রপ্রতিনিধি ও হল সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি)। আজ ভোটের দিন দুই হাজার পুলিশ, ১২ প্লাটুন র্যাব, ছয় প্লাটুন বিজিবি, গোয়েন্দা সংস্থা, বিএনসিসি ও স্কাউট সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন বলে জানিয়েছেন আরএমপি কমিশনার আবু সুফিয়ান। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান তিনটি প্রবেশমুখে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্টরা পরিচয়পত্র প্রদর্শনের পর প্রবেশ করতে পারবেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, আমরা চাই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। এজন্য তিন বাহিনীর সঙ্গে আমাদের নিয়মিত সমন্বয় হচ্ছে। হলগুলোতে যাতে কোনো বহিরাগত না থাকে বা কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য তল্লাশি কার্যক্রম চালানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি।
সার্বিক বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ. নজরুল ইসলাম বলেন, রাকসু নির্বাচনে সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে। আমরা অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন উপহার দিতে বদ্ধপরিকর। নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন ২১২ জন শিক্ষক। এর মধ্যে ১৭ জন প্রিজাইডিং অফিসার এবং বাকিরা সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি আরও জানান, ৯১ জন কর্মকর্তা পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন। নির্বাচনের ফলাফল প্রস্তুতের জন্য অভিজ্ঞ ও দক্ষ সদস্যদের সমন্বয়ে একটি গণনা ও ফলাফল প্রস্তুত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। শেষে তিনি বলেন, আমি নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সবার সহযোগিতা কামনা করছি এবং আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
রাকসুর ভোটের ইতিহাস
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার তিন বছর পর প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৫৬-৫৭ মেয়াদে। তখন এই সংসদের নাম ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (রাকসু)। ১৯৬২ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ রাকসু নামে যাত্রা শুরু করে। এরপর নির্বাচনের হয়েছে ১৪ বার। সর্বশেষ ১৯৯০ সালে রাকসু নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন রুহুল কবির রিজভী। তিনি রাবি ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র।
১৯৬২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সময়ে ২৮ বার নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়েছে মাত্র ১৪ বার। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) হিসেবে নির্বাচিত হন হায়দার আলী, নূরুল ইসলাম ঠান্ডু, ফজলুর রহমান পটল, ফজলে হোসেন বাদশা, রাগিব আহসান মুন্না। ৯০'এর পর পর থেকে রাকসু যেন অমাবস্যার চাঁদ হয়ে যায়। এর পর বিভিন্ন সময় ছোটখাটো আন্দোলন, সর্বশেষ ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনের পর কিছু দাবি উঠলেও রাকসু আর শেষমেশ বাস্তবায়িত হয়নি।