চাকসু নির্বাচন

আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ছাত্রদল-শিবিরের

চাকসু নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এনেছে ছাত্রদল-ছাত্রশিবির
চাকসু নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এনেছে ছাত্রদল-ছাত্রশিবির  © টিডিসি সম্পাদিত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (চাকসু) নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছে ও ছাত্রশিবির। বুধবার (৮ অক্টোবর) দুপুর ২টায় ছাত্রদল ও বিকেল ৫টায় ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা নির্বাচন কমিশন বরাবর আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ দেন। 

শিবির প্যানেলের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের লিখিত অভিযোগপত্রে বলা হয়, শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ভবনের (নতুন কলা ভবন) ৩য় তলায় ইতিহাস বিভাগের ৩৩২৩ নম্বর শ্রেনিকক্ষে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ’সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী ইব্রাহীম হোসেন রনি ২০ মিনিট সময় ক্লাসে উপস্থিত থাকা অবস্থায় সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে প্রচার চালিয়েছে, যা আচরণবিধি লঙ্ঘন।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘ছাত্রশিবির প্যানেলের প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন, এ তথ্য আমরা লিখিতভাবে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। আমরা নির্বাচন কমিশনের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করছি।’

আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে জানতে চাইলে ভিপি প্রার্থী ইব্রাহিম হোসেন রনি বলেন, ‘প্রথমত আমি সেখানে নির্বাচনের কোনো প্রচারণায় যায়নি। ডিপার্টমেন্টে একটা কাজে যাচ্ছিলাম। ক্লাসরুমে থাকা শিক্ষার্থীরা অনেকটা জোর করেই আমাকে রুমের ভেতরে নিয়ে যায়। আমি নিজেও যেহেতু ওই ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী, তাই তারা আমার থেকে অ্যালামনাইদের নিয়ে কিছু জানতে চায়। বাইরে অনেক বেশি নয়েজ থাকায় ক্লাসরুমের সাউন্ড সিস্টেমে আমি ১ মিনিটেরও কম সময় কথা বলেছি। এরপর বের হয়ে গেছি। আমার সঙ্গে কোনো লিফলেট বা কেউ ছিল না। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’

অপর দিকে ছাত্রদল প্যানেলের ভিপি প্রার্থীর লিফলেট দিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদপ্রার্থী মেহেদী হাসান সোহান।

আরও পড়ুন: ৬ শর্তে ১০ম গ্রেড পাচ্ছেন প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা

লিখিত অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের একটি ক্লাসরুমে অনুষ্ঠিত ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ক্লাস চলাকালীন আইন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাঈম উদ্দিন (ছাত্রদলের কর্মী) ক্লাসে প্রবেশ করে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। তিনি ক্লাস চলাকালে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারমূলক বক্তব্য প্রদান করেন লিফলেট বিতরণ করেন এবং অন্যান্য প্যানেলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক ও উত্তেজনাকর মন্তব্য করেন, যা চলমান পাঠদান কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এবং উপস্থিত শিক্ষার্থীদের জন্য অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করে।’

‘ফ্যাকাল্টির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করলে ঘটনার যথাযথ প্রমাণ পাওয়া যাবে। এ ছাড়া আমার কাছে ঘটনাটির ভিডিও প্রমাণ সংরক্ষিত রয়েছে, যা ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের সচিব বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।’

অভিযোগপত্রের সঙ্গে দেওয়া একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের কাছে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়ের লিফলেট বিতরণ করছেন। ঘটনার তদন্তপূর্বক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানায় এই প্রার্থী।

চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন আচরণবিধির ধারা ৪(৩) ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘কোনো প্রার্থী বা সমর্থক শ্রেণিকক্ষে, পরীক্ষার হলে, বা পাঠদান চলাকালে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবে না, শিক্ষাকার্যক্রমে ব্যাখাত সৃষ্টি করে এমন কোনো কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।’

অভিযোগপত্রের বিষয়ে চবি শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, ‘আইন অনুষদে আমাদের প্রার্থীরা যখন প্রচারণা চালাতে যায় সেখানে তারা একজন ছাত্রদল কর্মীকে ক্লাসে ঢুকে প্রচারণা চালাতে দেখে। আমাদের কাছে ভিডিওসহ প্রমাণ আছে। শুধু প্রচারণা নয় সেখানে সে বিভিন্ন দল ও ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্যও দিয়েছে। আমরা এ জন্য অভিযোগ জমা দিয়েছি। আশাকরি নির্বাচন কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’

আরও পড়ুন: পাঁচ বছর পর ‘স্বাভাবিক হচ্ছে’ এইচএসসির ফল, কমতে পারে পাস ও জিপিএ-৫

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় বলেন, ‘আমি বিষয়টি জেনেছি। বিভাগের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে চাকসু নিয়ে আলোচনা করছিল। কিন্তু কেউ যদি স্বপ্রণোদিত হয়ে লিফলেট বিতরণ বা প্রচারণা চালান এতে আমার দায়ভার নাই। তারা কেনো করেছে আমি জানি না।’

আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ও সদস্য সচিব ড. এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের কাছে সবাই সমান। আমরা দুপক্ষের অভিযোগ পেয়েছি। নির্বাচন কমিশনার ও আচরণবিধি মনিটরিং কমিটির প্রধান অধ্যাপক  ড. আমির মুহাম্মদ নসরুল্লাহ এ বিষয়টি দেখছেন। তিনি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন।’

উল্লেখ্য,১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চাকসু নির্বাচন। এদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পাঁচটি ভবনে ১৫টি হলের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটকেন্দ্র  সিসি ক্যামেরার আওতাধীন থাকবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।


সর্বশেষ সংবাদ