শহীদ আবরার ফাহাদ আমাদের প্রেরণার বাতিঘর: সাদিক কায়েম

বক্তব্য রাখছেন ডাকসু ভিপি আবু সাদিক কায়েম
বক্তব্য রাখছেন ডাকসু ভিপি আবু সাদিক কায়েম  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি আবু সাদিক কায়েম বলেছেন, জীবিত আবরার ফাহাদের চেয়ে শহীদ আবরার ফাহাদ অনেক বেশি শক্তিশালী। শহীদ আবরার ফাহাদ আমাদের দেখিয়েছেন কিভাবে আধিপত্যবাদ ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে হয়, কিভাবে ন্যায্যতার পক্ষে দাঁড়াতে হয়। সর্বোপরি শহীদ আবরার ফাহাদ আমাদের প্রেরণার বাতিঘর।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর. সি. মজুমদার আর্টস অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব: স্মরণে শহীদ আবরার ফাহাদ’ শীর্ষক সেমিনার ও “স্মরণে মননে শহীদ আবরার ফাহাদ” চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, আমার সঙ্গে শহীদ আবরারের কিছু মিল আছে, আবার কিছু অমিলও আছে। আমরা দুজনই বুয়েটের ছাত্র, দুজনেই শেরেবাংলা হলে ছিলাম, দুজনেই ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছি — এ মিলগুলো আমার কাছে গৌরবের। তবে অমিলের জায়গা হলো, আবরার ফাহাদ শহীদ হতে পেরেছেন, আমি পারিনি।

তিনি আরও বলেন, শহীদ আবরার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, তবুও তিনি দেশপ্রেমে উজ্জীবিত ছিলেন। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে তার অবস্থান ছিল অটল। সেই কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তার রক্ত বৃথা যায়নি,  তিনি জাতিকে জাগিয়ে তুলেছেন।

তিনি বলেন, আমাদের দেশ এক জটিল ভূরাজনৈতিক অবস্থানে রয়েছে- একদিকে হিন্দুত্ববাদী ভারত, অন্যদিকে মিয়ানমার। এই অবস্থায় আমাদের সংগ্রাম দীর্ঘমেয়াদি হবে। আমাদের তরুণরাই এই সংগ্রামের মূল শক্তি।

মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, আমি আজ আশাবাদী। কারণ তরুণরা জেগে উঠেছে। জুলাই বিপ্লবে আমরা যে জাতীয় চেতনার উত্থান দেখেছি, সেটিই প্রমাণ করে- বাংলাদেশ এখন স্বাধীনতার আসল অর্থ বুঝতে শুরু করেছে। শহিদ আবরার সেই জাগরণের প্রতীক।

আবরার ফাহাদের বাবা মো. বরকত উল্লাহ বলেন, ভারত কিভাবে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে, কিভাবে আমাদের উপর আগ্ৰাসন চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে আবরার ফাহাদ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিল যেন এদেশের মানুষ সচেতন হতে পারে। কিন্তু তৎকালীন সরকারের যে ফ্যাসিবাদী ছাত্রসংগঠন ছিল তাদের সহ্য না হওয়ার কারণে ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। যারা আবরার ফাহাদকে হত্যা করেছিল সেই দলকে যেসব ছাত্রসংগঠনগুলো নিষিদ্ধ করেছে তাদের ধন্যবাদ জানাই। কারণ তারা হলে যে রেগিং চালু করেছিল সেসময় অনেক ছাত্র তাদের অত্যাচারের শিকার হয়েছিল।

তিনি বলেন, আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ জানাই,  আপনারা যারা এখানে পড়াশোনা করতে আসছেন তারা যেন আবরার ফাহাদের মতো এই ধরণের হত্যাকাণ্ডের শিকার না হয়। আপনারা সবাই ভাই ভাই। সেইভাবেই এখানে লেখাপড়া করবেন।

আবরার ফাহাদের ভাই ও বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাইয়াজ বলেন, আবরার ফাহাদকে আমরা সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে তখনই রিপ্রেজেন্ট করতে পারবো, আমরা আগ্ৰাসনের বিরুদ্ধে তখনই দাঁড়াতে পারবো যখন আমরা নিজেদের মধ্যে সকল ভেদাভেদ ভুলে দাঁড়াতে পারবো।

তিনি বলেন, আমি যখন বুয়েটে ভর্তি হই ২০২২ সালের দিকে তখন এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে খুব একটা আসতে পারতাম না কারণ তখন বিভিন্ন ছাত্রলীগের নেতারা বলতো তুই এদিকে আসলে তোর পরিণতিও তোর ভাইয়ের মতো হবে।  এজন্য দেখা গেছে আমি ৫ আগস্টের আগে এক দুইবার এদিকে আসতে পেরেছি।

তিনি আরও বলেন, আজকের যে আয়োজন এটাও একটা প্রমাণ আমরা কোন পরিস্থিতি থেকে কোন পরিস্থিতিতে এসেছি। আজকে আমাদের যে মুক্তি এর জন্য জুলাই শহীদদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীন সীমান্তে আবার যদি আগ্রাসন ও আধিপত্যবাদ নেমে আসে, আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। শুধু বুয়েট নয়, বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কোটি কোটি আবরার দরকার আমাদের। সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের লক্ষ কোটি আবরার প্রয়োজন।

এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধু এভিনিউকে ‘শহীদ আবরার ফাহাদ এভিনিউ’হিসেবে নামকরণের দাবি জানান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদ আবরার ফাহাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। পরে উদ্বোধন করা হয় “স্মরণে মননে শহীদ আবরার ফাহাদ” শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী, যেখানে 
তরুণ শিল্পীরা আবরারের দেশপ্রেম, ন্যায় ও আদর্শকে শিল্পের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন।

ডাকসুর উদ্যোগে আয়োজিত এ সেমিনার ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শহীদ আবরারের পিতা মো. বরকত উল্লাহ।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেজাউল করিম রনি, শহীদের ভাই আবরার ফাইয়াজ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. মো. আব্দুর রব প্রমুখ।


সর্বশেষ সংবাদ