রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
উপ-রেজিস্ট্রারের দাড়ি ধরে টান, প্রোভিসিকে টেনে সিঁড়িতে ফেলে দেন আন্দোলনকারীরা
- রাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:০৪ PM , আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:১০ PM
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ধস্তাধস্তি ও ভাঙচুরের ঘটনায় উপ-উপাচার্যের হাত ধরে টেনে সিঁড়িতে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে এক উপ-রেজিস্ট্রারের দাড়ি ধরে টান এবং গলা চেপে ধরে ফেলে দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনের ফটকে এ ঘটনা ঘটে। ধস্তাধস্তিতে সাবেক সমন্বয়ক ও রাকসুর জিএস প্রার্থী সালাহউদ্দিন আম্মারসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।
জানা গেছে, পোষ্য কোটা পুনর্বহাল করে নোটিশ জারির পরই আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। আমরণ অনশন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে থাকেন তারা। তবে বিকেলের দিকে সহিংস রূপ নেয় তাদের কর্মসূচি। বেলা তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন প্রশাসনিক ভবন থেকে বের হলে তার গাড়ি আটকে তার গাড়ির উপরে প্রতীকি ‘ভিক্ষা’ ছুড়ে মারেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা উপ-উপাচার্যকে ভিক্ষা দেওয়ার জন্য সবাইকে আহ্বান করলে পাশে থাকা রিকশাচালকও গাড়ির উপরে ৫ টাকা ভিক্ষা দেন। এমনকি ১০ টাকা দিয়েছেন এক ভিক্ষুকও।
এক পর্যায়ে উপ-উপাচার্যের গাড়ির চাবি কেড়ে নেন বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা। ফলে তিনি পায়ে হেটে বাসভবনের দিকে রওনা দিলে তার বাসভবনে ঢুকতে না দিয়ে গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তিনি প্রক্টর মাহবুবর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে জুবেরী ভবনের দিকে যান। শিক্ষার্থীরাও পিছু পিছু হাটতে শুরু করে। উপ-উপাচার্যকে জুবেরী ভবনে উঠতে না দিয়ে তাকে জাপটে ধরে আটকে রাখেন আন্দোলনকারীরা।
এক পর্যায়ে সেখানে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে তুমুল ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। উপ-উপাচার্য মাঈন উদ্দীনসহ কয়েকজনকে সামনে থেকে বাধা দেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় পাশে থাকা প্রক্টর ও শিক্ষকরা উপ-উপাচার্যকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। উভয়পক্ষের ভিতরে টানহেঁচড়া হয়। ওই সময় উপ-রেজিস্ট্রার রবিউল ইসলামের দাড়ি ধরে টান দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। একই সাথে পিছন থেকে গলা জাপটে ধরে ফেলে দেন শিক্ষার্থীরা।
কিছুক্ষণ পর অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন সিঁড়ি বেয়ে জুবেরী ভবনে উঠতে গেলে একজন শিক্ষার্থী পিছন থেকে ধাক্কা দেয় ও হাত টেনে ধরে সিঁড়িতে ফেলে দেয়। তিনি উঠে আবার উপরে যেতে উদ্যত হলে সামনে থাকা আরেক শিক্ষার্থী আবার জাপটে ধরে। দুজন শিক্ষকের সহায়তায় ছাড়া পেয়ে প্রো-ভিসি জুবেরী ভবনের দ্বিতীয় তলায় উঠে পড়েন। ওই সময় আবারও উপ-রেজিস্ট্রারের দাড়ি ধরে টান দেন এক শিক্ষার্থী। তার পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। সালাহউদ্দিন আম্মারকেও দেওয়ালের সাথে চেপে ধরেন কয়েকজন কর্মকর্তা। এতে কয়েক ঘণ্টা জুবেরী ভবনের দ্বিতীয় তলায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন উপ-উপাচার্য, প্রক্টর, রেজিস্ট্রারসহ অনেকে। অবশেষে রাত সোয়া ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা জুবেরী ভবনের সামনে থেকে তাদের অবস্থান তুলে নেন। এতে শিক্ষকরা প্রায় সাত ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর মুক্তি পান।
এদিকে শিক্ষকের গায়ে হাত তোলায় কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এক প্রতিবাদলিপিতে তারা বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, আমরা নিজেরাও পোষ্য কোটার বিরোধী। কিন্তু কোনো যুক্তি, মতভেদ বা আন্দোলনের নামে শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি আমাদের শিক্ষাঙ্গনের সামগ্রিক মর্যাদা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের জন্য কলঙ্কজনক। আমরা এই ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, যেন অবিলম্বে দোষীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। আমাদের দাবিগুলো হলো- ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।
এই আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন সাবেক সমন্বয়ক ও রাকসু নির্বাচনে ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার। তাকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি কেটে দেন। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ব্যক্তিগত একাউন্টে দেওয়া পোস্টে বলেন, স্যাররা আমাদের পিতৃতুল্য। স্যারদের সাথে আমাদের ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। তাই কাউকে ব্যক্তিগতভাবে অ্যাটাক বা অশালীন ভাষা ব্যবহার করিনি আমরা। আমাদের ভাইদের অনশনের ২৪ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হলেও নোটিশ প্রত্যাহারে প্রশাসনের কোনো ইচ্ছা না দেখে আমাদের এ জায়গায় আসতে হয়েছে।
তিনি আরও লিখেছেন, স্যাররা ডিসিশন ছাড়া যেন না যায় তার জন্য প্রশাসন ভবন, বাসভবনের গেট, জুবেরী ভবনের সামনে আমরা হিউম্যান চেন করে দাঁড়িয়ে যাই। ওনারা জোরপূর্বক আমাদের হাত সরিয়ে ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তারপর ছত্রভঙ্গ হয়ে সবাই স্যারদের আটকাতে চেষ্টা করেন; কারো গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করিনি। এক সময় স্যার, কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে দুয়েকজন অনেক মারমুখী আচরণ করে আমাদের হিউম্যান চেন থেকে স্যারকে ছিনিয়ে নিতে চান। তখন আবারও স্টাফরা আমাকে গলাচিপে ধরে। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে কনুই এবং হাত দিয়ে আঘাত করে। তারপর উনারা ২ তলায় উঠে যান।
এ বিষয়ে জানতে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। উপ-রেজিস্ট্রার রবিউল ইসলামকে কল করলে তার বড় মেয়ে রিসিভ করেন। তিনি বলেন, গতকাল রাতে আব্বুকে ইসলামিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। বুকে ও পায়েসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত লেগেছে। আব্বুর পুরো শরীর ব্যথা। তাকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন ঘুমাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, আব্বুকে কয়েকবার দাঁড়ি ধরে টান দেওয়া হয় ও গলা জাপটে ধরে ফেলে দেওয়া হয়। এতে আব্বু প্রচন্ড আঘাতপ্রাপ্ত হোন।