জাবি ছাত্রদলের কমিটিতে পদ পেলেন ছাত্রলীগকর্মী, মাদকসেবী, ছিনতাইকারী
- জাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১০:১৮ PM , আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২৫, ০২:২৭ PM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বর্ধিত আহ্বায়ক কমিটি, ১৭টি হল ও একটি অনুষদের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত কমিটিতে ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী, মাদকসেবী, ছিনতাইকারী ও ভ্রুণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত ও হত্যা মামলার আসামি ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করায় অভ্যন্তরীণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমালোচনার মুখে পড়েছে সংগঠনটি।
গতকাল শুক্রবার (৮ আগস্ট) দুটি পৃথক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির স্বাক্ষরিত এবং জাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দীন মোহাম্মদ বাবর ও সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিক কমিটির নাম ঘোষণা করেন।
জাবি ছাত্রদলের ১৭৭ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটিকে ৩৭০ সদস্যে বর্ধিত করা হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮তম ব্যাচ ( ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষ) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ ৫৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী পর্যন্ত কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে।
ঘোষিত দুই কমিটি পর্যালোচনা করে এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কমিটিতে পদ পেয়েছেন ২৩ জন সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী, চারজন মাদকসেবী, ভ্রুণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত একজন, ছিনতাইকারী একজন, র্যাগিংয়ে অভিযুক্ত ৩ জন শিক্ষার্থী এবং হত্যা মামলার আসামি ৩ জন বর্ধিত কমিটি এবং হল কমিটির পদধারীদের মধ্যে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন, যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে পদ পাওয়া ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাকুর বাপ্পী। সদস্য হিসেবে পদ পাওয়া ৪৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু বক্কর সিদ্দিক সোহাগ, ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আল আমিন, সাবরিনা সুলতানা সুরভী। ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফ বিন মাহবুব, কাজী মৌসুমি আফরোজ, শাহাদাত হোসেন আকুল, শাবাব সবুজ অর্নব, জাহিদ খান, ফিরোজ আহমেদ রিমন, সোহাগ আহমেদ, ইমন মোল্লা । ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাশেদ ইসলাম, শিপন হোসেন, সতীর্থ বিশ্বাস বাধন, ইমরান নাজিজ, মো. হাসান মাহমুদ, আব্দুল্লাহ আলিফ, খাইরুল ইসলাম নাহিদ, মো. রাকিব মাওলা, রাশেদ ইসলাম, মিজানুর রহমান ফায়েজ। ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থী নিয়ামুল মেরাজ মাহিন।
এদের মধ্যে যুগ্ম আহ্বায়ক শাকুর বাপ্পি বিশ্ববিদ্যালয়ের কামাল উদ্দিন হলের ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। সদস্য আবু বক্কর সিদ্দিক সোহাগের নামে চোরাই বাইক বিক্রি, নিরাপত্তা কর্মীকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে এবং তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ১০ নং হলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমন মোল্লা ছাত্রলীগ নেতা জোবায়েদ আশিকের অনুসারী ছিলেন। সদস্য আল আমিন ১০ নং নং হল ছাত্রলীগের সক্রিয় রাজনীতি করতেন এবং তিনি ছাত্রলীগ সেক্রেটারী হাবিবুর রহমানের অনুসারি ছিল। ফজিলাতুন্নেসা হলের সেক্রেটারি সাবরিনা সুলতানা সুরভী শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আখতারুজ্জমান সোহেলের অনুসারী ছিলেন। ১০ নং হলের সভাপতি সাইফ বিন মাহবুব ছাত্রলীগ নেতা লিটনের অনুসারী ছিল। রোকেয়া হলের সভাপতি কাজী মৌসুমি আফরোজ পাঁচ আগস্টের পূর্বে রোকেয়া হলের ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্ম ছিলেন। সদস্য শাহাদাত হোসেন আকুল বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। সদস্য সবুজ অর্ন্ব ২১ নং হলের ছাত্রলীগের সক্রিয় রাজনীতি করতেন এবং হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী ছিলেন। শহীদ রফিক- জব্বার হলের সভাপতি জাহিদ খান ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী শিপন হোসেন ও সতীর্থ বিশ্বাস বাধন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন এবং মাদক সেবনের সম্পৃক্ততা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন তাদের এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছিল। সদস্য ইমরান নাজিজ ২১ নং হল ছাত্রলীগের সক্রিয় কমীর্ ছিলেন এবং বহিরাগত চার স্কুলছাত্রকে ছিনতাইয়ের অভিযোগে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন তাকে ছয় মাসের জন্য বহিস্কার করেছিল। তাজউদ্দিন আহমেদ হলের সেক্রেটারী মো. হাসান মাহমুদ বিশ^বিদ্যালয়ের ১০ নং হলে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যু্ক্ত ছিলেন। তিনি সেক্রেটারি লিটনের অনুসারী নন। শহিদ সালাম বরকত হলের সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ আলিফ হলে ছাত্রলীগের ব্লকে থাকতেন। কামাল উদ্দিন হলের সিনিয়র সহ সভাপতি খাইরুল ইসলাম নাহিদ ২১ নং হল ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন এবং হল ছাত্রলীগের ব্লকে থাকতেন । কাজী নজরুল হলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রাকিব মাওলা আল বেরুনী হলে ছাত্রলীগ করতেন। সদস্য রাশেদ ইসলাম ভাসানী হলের ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। মিজানুর রহমান ফায়েজের নামে বিশ্ববিদ্যালয়েল শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় অভিযুক্তদের পুনর্বাসনের অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে কমিটিতে পদ পেয়েছেন ভ্রুণ হত্যার দায়ে অভিযুক্ত সৈয়দ শাহ শাফায়েত ঋদ্ধ। তিনি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন ও বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিন্যান্স বিভাগে প্রফেশনাল মাস্টার্সে অধ্যয়নরত আছেন। ঋদ্ধর বিরুদ্ধে এবছরের ৯ মে জাবির যৌন নিপীড়ন সেলে এক নারী শিক্ষার্থী বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জোরপূর্বক গর্ভপাত করানোর অভিযোগ করে। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়।
এছাড়াও কমিটিতে পদ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটের ৫২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শুভজিৎ বিশ্বাস, আব্দুস সায়েম, আশরাফুল ইসলাম শামিম। এদের মধ্যে শুভজিৎ বিশ্বাসকে শহীদ রফিক জব্বার হলে জুনিয়রকে র্যাগিংয়ের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন তাকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করে এবং কিছুদিন আগে ঢাকার একটি মন্দিরে নাশকতার অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ছাড়া পেয়ে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। এছাড়া আব্দুস সায়েম ও আশরাফুল ইসলাম শামিমকে র্যাগিংয়ের দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সতর্ক করে এবং অর্থদণ্ড দেয়।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিক ইয়াসির গত ৪ আগস্ট কাজী নজরুল ইসলাম হলে মাদক সেবনকালে আটক হয়। সদস্য ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো জেরিন বিশ্ববিদ্যালকে মাদকসেবনকালে আটক হন। এছাড়া শহিদ রফিক জব্বার হলের সিনিয়র সহ সভাপতি আবেশ আল মুবিন নাফির নামে মাদক গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ড্রপআউট শিক্ষার্থী ।
এছাড়াও কমিটিতে পদ পেয়েছেন ৩ জন শিক্ষার্থী যারা প্রত্যেকে হত্যা মামলার আসামি। তাঁরা হলেন হামিদুল্লাহ সালমান বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের নতুন ঘোষিত সভাপতি ও বর্ধিত কমিটির সদস্য, বর্ধিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রাজু আহমেদ এবং সদস্য মোহাম্মদ রাজন মিয়া। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম মোল্লা হত্যার মামলায় তাঁরা চার্জশিটভুক্ত আসামি।
ঘোষিত বর্ধিত কমিটি ও হল কমিটির অসঙ্গতির বিষয়ে জাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করার লক্ষ্যে শীঘ্রই তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।