জুনে হচ্ছে না ঢাবির সিনেট অধিবেশন, নেপথ্যে যা জানা যাচ্ছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো ও কার্জন হল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো ও কার্জন হল   © টিডিসি সম্পাদিত

প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিনেটের বার্ষিক অধিবেশন জুন মাসে অনুষ্ঠিত হলেও এবার নানা জটিলতার কারণে যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। তবে অধিবেশন কবে অনুষ্ঠিত হবে তা এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নির্বাচিত সিনেট সদস্যদের মেয়াদ চলতি মাসে শেষ হয়ে গেছে। এছাড়া, অধিবেশনে সরকারের বিভিন্ন প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট যারা ছিলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে তাদের অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে। ফ্যাসিবাদের দোসর হওয়ার কারণে তাদের কারো কারো বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। অর্থাৎ সিনেট অধিবেশন যাদের অংশগ্রহণে হওয়ার কথা, তাদের শূণ্যতার কারণে এবারের অধিবেশনে বিলম্ব হচ্ছে।

আজ মঙ্গলবার (১৭ জুন) বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সিনেটের নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধিদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। রেজিষ্টার্ড গ্র্যাজুয়েট নিয়েও একটু সমস্যা আছে। সিনেটে সরকারের যেসব প্রতিনিধি ছিলেন তারাও বর্তমানে তাদের স্থানে নেই। এক্ষেত্রে রিপ্লেসমেন্ট প্রয়োজন। আমরা মন্ত্রনালয়ে ফাইল পাঠিয়েছি। অফিসিয়ালি ওই রিপ্লেসমেন্টগুলো হলে আমরা সিনেট অধিবেশন রাখবো। তিনি আরও বলেন, মূলত জুন মাসে সিনেট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সম্ভবত আমরা এবার যথা সময়ে করতে পারছি না।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সিনেট অধিবেশন অবশ্যই হবে, তবে একটু বিলম্ব হবে। সিনেটের ৩৫ জন নির্বাচিত প্রতিনিধির মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। রেজিস্টার গ্র্যাজুয়েট যারা আছেন তাদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলা-মোকাদ্দমা আছে এবং রাজনৈতিকভাবে তারা ফ্যাসিস্টের দোসর হিসেবে চিহ্নিত। তাদের অনেকেই পলাতক রয়েছে। তাছাড়া, তাদের উপস্থিতিতে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে একটু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। সব গোছানোর পর একটু উপযুক্ত সময় হলে সিনেট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।

আরও পড়ুন:  আগামী বছর ১ হাজার ৩৫ কোটি টাকা খরচ করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এর আগে, ২০২২ সালের ২৪ মে দীর্ঘ ৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হয় ঢাবি সিনেটের শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন। এতে নীলদল থেকে নির্বাচিত হন- পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভৃইয়া, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইসতিয়াক মঈন সৈয়দ,  টেলিভিশন, ফিল্ম এন্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক, ড. আবু জাফর মো. শফিউল আলম ভুইয়া, রোবটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক লাফিফা জামাল, অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জিয়াউর রহমান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল বাছির, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম মাহবুব হাসান, ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি অ্যান্ড ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক এস এম আবদুর রহমান, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক কে এম সাইফুল ইসলাম খান, গণিত বিভাগের অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা, আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তৌহিদা রশিদ, অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের অধ্যাপক নিসার হোসেন, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফিরোজা ইয়াসমীন, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিহির লাল সাহা, ইসলাম শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুর রশীদ, অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল মঈন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ফিরোজ জামান, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুর রহিম, ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক আবদুস ছামাদ, ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমান, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মো. মাসুদুর রহমান, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সিকদার মনোয়ার মুর্শেদ ওরফে সৌরভ সিকদার, আইন বিভাগের অধ্যাপক সীমা জামান, কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম এবং ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম।

এছাড়া, সাদা দল থেকে মোট তিনজন শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। তারা হলেন- পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক লুৎফর রহমান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম এবং প্রাণরসায়ন ও অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ।

অন্যদিকে, ২০২৩ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত ২৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থক প্যানেল ‘গণতান্ত্রিক ঐক্য পরিষেদ’র প্রার্থীরা পূর্ণ প্যানেলে জয়ী হন। তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আশফাক হোসেন, তৎকালীন প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী, নুজহাত চৌধুরী, অধ্যাপক অসীম কুমার সরকার, এম আর এম মনজুরুল আহসান বুলবুল, এ এইচ এম এনামুল হক চৌধুরী, এইচ এম বদিউজ্জামান, এস এম বাহলুল মজনুন, অধ্যাপক জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ, নিজাম চোধুরী, মীর্জা মো. আব্দুল বাছেত, মুহাম্মদ শফিক উল্যা, অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল বারী, ইকবাল মাহমুদ বাবলু, ডা. মোহাম্মদ হোসেন, অধ্যাপক এম অহিদুজ্জামান, মো. আতাউর রহমান প্রধান, অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন, ডা. মো. কামরুল হাসান মিলন, অধ্যাপক মো. নাসিরুদ্দীন মুন্সী, মো. মুরশেদুল কবীর, রঞ্জিত কুমার সাহা, অধ্যাপক শারমিন মূসা, অধ্যাপক সাবিতা রিজওয়ানা রহমান, অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৬ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সিনেটের বার্ষিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন এবং তার অভিভাষণ প্রদান করেন। এছাড়া, অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের বাজেট উপস্থাপন করেন। এরপর উপাচার্যের অভিভাষণ এবং কোষাধ্যক্ষের উপস্থাপিত বাজেটের উপর সিনেট সদস্যবৃন্দ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

 


সর্বশেষ সংবাদ