‘ঘ’ ইউনিটে ১ম, ‘খ’-তে ৩৫তম হয়েও পাননি আইন বিভাগ—১ যুগ পর আরেফিন সিদ্দিককে দায় ঢাবি ছাত্রের

ঢাবি শিক্ষার্থী আবদুল আলীম
ঢাবি শিক্ষার্থী আবদুল আলীম  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ‘ঘ’ ইউনিটে প্রথম হয়েছিলেন আবদুল আলীম। আর ‘খ’ ইউনিটে ৩৫তম হয়েছিলেন তিনি। ভর্তি পরীক্ষায় বাংলায় ২৭ এবং ইংরেজিতে ২২ এর বেশি নম্বর পেলেও পছন্দের আইন বিষয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি তাঁকে। মাদ্রাসার ছাত্র হওয়ায় তাকে এ সুযোগ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। এজন্য তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও বিভাগটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে দায়ী করেছেন আবদুল আলীম।

ভর্তির প্রায় এক যুগ পর ‘আমার চোখে আরেফিন সিদ্দিকী ও আইন বিভাগের চেয়ারম্যান রহমত’ শিরোনামে ফেসবুকে একটি দীর্ষ পোস্টে নিজেকে বৈষম্যের স্বীকার একজন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী বলে উল্লেখ করেছেন আবদুল আলীম। তিনি লিখেছেন, ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় আমি বাংলায় ২৭.৫০ (মোট নম্বর ৩০) এবং ইংরেজিতে ২২.৫০ (মোট নম্বর ৩০) পেয়েও আইন বিভাগে ভর্তি হতে পারিনি। শুধু ওই বছরেই মাদ্রাসা ছাত্রদের জন্য আইন বিভাগে ভর্তি নিষিদ্ধ করা হয়। 

কত রাত জেগে আইন বিভাগে পড়ার স্বপ্ন দেখতাম, আহা সেই স্বপ্ন। আওয়ামী সরকারের দালালরা (তৎকালীন উপাচার্য ও আইন বিভাগের চেয়ারম্যান) শেষ করে দিয়েছে, সেই শোক আর কোনোদিন কাটিয়ে উঠতে পারিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি ঠিকই, কিন্তু কোনোদিনের জন্য লোক প্রশাসনের একটা বইয়ের মলাট উল্টানো হয়নি। সিজিপিএ নিয়ে ভাবনা তো কোনোদিন মনেও আসেনি, শুধু ভাবতাম যে দেশে আমার অর্জনের কোনো মূল্যায়ন নেই সেখানে পড়াশুনা অর্থহীন। 

হঠাৎ একদিন পড়াশুনা করব ভেবে স্যার এ এফ রহমান হলে যাই রাজনৈতিকভাবে (ছাত্রলীগের গ্রুপ)। হলে উঠি কিন্তু সেদিন সন্ধ্যায় আমার কয়েকজন বন্ধু এসে আমাকে হল থেকে চলে যেতে বলে। কারণ আমি শিবিরের ফোকাস-এ কোচিং করেছি এবং তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। আমার আর বুঝতে বাকী রইল না যে, শিবির সন্দেহে হয়তো আজকে রাতেই গেস্টরুমে মারধরের স্বীকার হতে হবে।  

যা কিছু নিয়ে নিচতলার সেই গণরুমে গিয়েছিলাম সে সব ফেলে রেখেই দ্রুত বের হয়ে যাই। বের হয়ে মা কে ফোন করে বলি, ‘আম্মু এখানকার থাকার পরিবেশ ভালো না, তাই থাকব না। আর নীরবে চোখ মুচে চলে যাই হলে থাকা আর হলো না।

আরো পড়ুন: ১৯ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শেষ আজ

এ গল্প তার একার নয়, সেই শিক্ষাবর্ষের অনেক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর জীবনের গল্প উল্লেখ করে আবদুল আলীম লিখেছেন, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের আগেও মাদ্রাসা ছাত্ররা ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে বৈষম্যের স্বীকার ছিল। অর্থনীতি, সাংবাদিকতাসহ অনেকগুলো বিষয় মাদ্রাসা ছাত্ররা ভর্তি হতে পারত না। আইনি প্রক্রিয়া খুব একটা জানা নেই, তখন আমার। তবে জানতাম এর আগেও এইটা নিয়ে রিট করা হয়েছে। তখন একদিন ক্লাস শেষে আমার ব্যাচের এক শিক্ষার্থী আমাকে এসে বলে, তুমি চাইলে সাবজেক্ট এর জন্য রিট করতে পারো। 

আমি খুব আগ্রহের সাথে বলেছিলাম, কীভাবে করব? সে আমাকে একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় যে, উনি হেল্প করবেন। অনেকদিন পর আমি বুঝতে পারলাম উক্ত ব্যক্তি ঢাবি শিবির নেতা। আমাকে দিয়ে রিট আবেদন দায়ের করে মাদ্রাসা ছাত্রদের এই অধিকার আদায়ের জন্য শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াই চালিয়ে গেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাবি শাখা।

২০১২-১৩ সেশন পরবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া মাদ্রাসা ছাত্রদের ন্যায্য এই অধিকার আদায়ের আন্দোলনে একক আইনি লড়াই চালিয়ে হাজারো মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে অবদান রাখায় চিরকৃতজ্ঞ তাদের প্রতি আমি। আমি পড়তে পারিনি। কিন্তু কুষ্টিয়ার খোকসার সেই সাহসী বিচারক (নাম মনে নেই) এর রায়ের ফলে পরের শিক্ষাবর্ষ থেকে অনেক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী তাদের ন্যায্য অধিকার পেয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ