ঢাবির ২৩ শহীদ শিক্ষার্থীর তথ্য পুড়িয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনী
- তাওসিফুল ইসলাম
- প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:১৭ PM , আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৪:০৫ PM
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত হয়েছিল বর্বর হত্যাযজ্ঞের এক নিষ্ঠুর মঞ্চে। পাকিস্তানি বাহিনী পরিকল্পিতভাবে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের ওপর হামলা চালায়, এতে প্রাণ হারান ১৯৪ জন। তাদের মধ্যে ছিলেন ১৮ জন শিক্ষক, ৩৩ জন কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এ অধ্যায় শুধু রক্তাক্ত নয়, বরং জ্ঞান, মুক্তচিন্তা ও মননশীলতার ওপর চালানো এক ভয়াবহ আঘাতের সাক্ষ্য বহন করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদদের মধ্যে ৮৫ জন ছিলেন আবাসিক শিক্ষার্থী। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী তাদের তথ্য-প্রমাণ ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন হলের নথিপত্র পুড়িয়ে দেয়। এর ফলে ২৩ জন শহীদ শিক্ষার্থীর অনুষদ, বিভাগ বা ইনস্টিটিউটের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বিবরণীতে তাদের নাম সংরক্ষিত রয়েছে।
শহীদদের মধ্যে জগন্নাথ হলের অজিত রায় চৌধুরী, আনন্দকুমার দত্ত, দীনেশচন্দ্র শিকদার, নিরঞ্জন চন্দ, নির্মল কুমার রায়, পল্টন দাস, প্রদীপ নারায়ণ রায় চৌধুরী, প্রবীর পাল, ভবতোষ ভৌমিক, রবীন রায়, সত্যরঞ্জন নাগ, সুব্রত সাহা ও সুভাষচন্দ্র ভট্টাচার্য ছিলেন।
সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ১২ শহীদের মধ্যে ছয়জনের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। তারা হলেন ওয়াহিদুর রহমান, নজরুল ইসলাম, নিজামুদ্দিন আজাদ (বীর উত্তম), মিয়া শাহজাহান কবির, মো. সলিমুল্লাহ ও সিকান্দার হায়াত খান। একইভাবে হাজী মুহম্মদ মুহসিন হলের খোন্দকার আবু তাহের, জাহাঙ্গীর হায়দার খান ও মনজুর চৌধুরীর তথ্য-প্রমাণও নষ্ট করা হয়েছিল।
শুধু শিক্ষার্থী নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য সদস্যরাও পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতার শিকার হন। মধুর ক্যান্টিনের ব্যবস্থাপক মধুসূদন দে (মধু’দা) ও তার পরিবারও রেহাই পাননি। পাকসেনারা তাকেসহ তার স্ত্রী যোগমায়া দে, পুত্র রণজিৎ কুমার দে এবং পুত্রবধূ রিনা রাণী দে-কে হত্যা করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে শহীদ হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে জগন্নাথ হলের ৪২ জন, ফজলুল হক মুসলিম হল, সূর্যসেন হল এবং শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ৭ জন করে, শহীদুল্লাহ হলের ১ জন, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ১২ জন এবং মুহসিন হলের ৯ জন ছিলেন।
যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের প্রমাণ লোপাটের জন্য শহীদদের নাম-পরিচয় সংবলিত নথি ধ্বংসের চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু ইতিহাস মুছে ফেলা যায়নি। তাদের আত্মত্যাগ আজও বাংলাদেশ স্মরণ করে, সংরক্ষিত আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বিবরণীতে।