আকস্মিক চলে গেলেন ঢাবি ছাত্র ত্বহা, বিভাগের পড়াশোনার চাপকে দায়ী সহপাঠীদের

ত্বহার মৃত্যু নিয়ে সহপাঠীর স্টেটাস
ত্বহার মৃত্যু নিয়ে সহপাঠীর স্টেটাস  © সংগৃহীত

সম্প্রতি ঘুমের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ত্বহা হোসাইনের আকস্মিক মৃত্যু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ২৮ ব্যাচের এই শিক্ষার্থী স্ট্রোকজনিত কারণে মারা গেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে বিভাগের অতিরিক্ত পড়াশোনার চাপ না নিতে পেরেও স্ট্রোক করে মারা যেতে পারেন বলে অভিযোগ করছেন সহপাঠীরা।

গত রবিবার (৫ জানুয়ারি) রাতে মারা যান ত্বহা। তার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলায় বলে জানিয়েছে সহপাঠীরা।

বিভাগের পড়াশোনার চাপেই ত্বহা মারা গেছেন, এমন অভিযোগের জবাবে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল রাজ্জাক বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। আজ মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অনেকজন অনেক কিছুই বলতে পারেন। তবে আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আমাদের বিভাগে মাত্রাতিরিক্ত কোনো প্রেশার নেই। বরং ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে শিক্ষকদের সৌহার্দপূর্ণ মেলবন্ধন বজায় রয়েছে, ভালো মতো পড়াশোনা করছে তারা। 

ত্বহার সহপাঠীর সেই স্ট্যাটাসটি

‘কত ঘণ্টা ক্লাসে থাকলে অতিরিক্ত প্রেশার হয়ে যায়, কতটুকু থাকলে হালকা মনে হয় সেটা তো একেকজনের একেকরকম। তবে তার কোনা সহপাঠীও এ ধরনের কোনো কিছু আমাকে এসে বলেনি। আমরা শিক্ষকরাও মনে করি না যে, এটার কোনো যৌক্তিকতা আছে। যারা এসব করে তারা বিভাগের ভালো চায় না এবং আমাদের ভালো চায় না।’

তার আকস্মিক মৃত্যুকে দুঃখপ্রকাশ করে তিনি বলেন, সংবাদটি পাওয়া সঙ্গে সঙ্গে বিভাগ থেকে গাড়ি ভাড়া করে ওই ছাত্রের বাড়ি গিয়ে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করেছি। এ ঘটনায় গতকাল বিভাগের জরুরি সভা করে শোক প্রস্তাব করা হয়েছে এবং আজকে দুপুরে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। আমরা যেকোনো প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের পাশে আছি।

ত্বহার মৃত্যুর পারদিন গতকাল সোমবার (৬ জানুয়ারি) কাব্য মিথুন সাহা নামে তার বিভাগের সহপাঠী তাকে নিয়ে ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ২৮ ব্যাচের আমাদের সহপাঠী ত্বহা গত রাতে ঘুমের মধ্যে স্ট্রোক করে পরলোকগমন করেছে। ত্বহার আত্মার শান্তি কামনা করছি। ব্লাডপ্রেশার রিলেটেড কিছু সমস্যা ছিল শুনলাম। তাও এর কিছু দায় আমি দিবো আমার ডিপার্টমেন্টকে। এই সেমিস্টারে সপ্তাহের একাধিক দিন আমাদের ক্লাস-ল্যাব চলে টানা সকালে সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। মাঝে ১টা থেকে শুধু এক ঘণ্টার লাঞ্চ ব্রেক। ক্লাসগুলোর মাঝেও কোনো ব্রেক নেই।

তিনি লেখেন, ত্বহা প্রতিদিন আসত মুন্সিগঞ্জ থেকে। এরকম আরও অনেকেই অনেক দূরদূরান্ত থেকে আসে। অনেক ভোরবেলা রওনা দিয়ে রাতে বাড়ি ফেরার অনুভূতিটা কেমন তা আর আলাদা করে বলার প্রয়োজনবোধ করছি না। 

‘তার উপর আবার ডিপার্টমেন্টের একটা চমৎকার কালচার আছে। এরা সেমিস্টারের শুরুতে কিছুই করবে না, শেষ মুহূর্তে গিয়ে প্রোজেক্ট-অ্যাসাইনমেন্ট সব একসাথে দিয়ে দিবে। কালও এক শিক্ষকের কাছে প্রোজেক্টের কিছু অংশ একটু ফ্লেক্সিবল করার অনুরোধ করলে তিনি আমাদের সাথে তা নিয়ে ইয়ার্কি করেন। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে ফেলে দেন আমাদের কথা। সবচেয়ে কম ক্রেডিটের কোর্সে খাটান সবচেয়ে বেশি, গ্রেডও দেন অনেক কম। কিছু জিজ্ঞাসা করে শিখতে চাইলেও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন। তার আচার আচরণে মনে হয় যেন আমরা গিনিপিগ, সব নতুন নতুন জিনিস আমাদের উপর টেস্ট করেন।’

তিনি আরও লিখেন, ক্লাস-অ্যাটেন্ডেন্স-প্রোজেক্ট সব সামলাইতে গিয়ে ঘুম হয় না রেগুলার। অনেককেই সাথে প্যারাসিটামল নিয়ে ঘুরতে দেখেছি, আমি নিজেও ঘুরি। যে গেছে তাকে তো আর আনা যাবে না, তবে বলবো সব ডিপার্টমেন্টেরই এসব অস্বাস্থকর কালচার বন্ধ করা উচিত। এরকমের অমানবিক-অস্বাস্থকর রুটিন মেইনটেইন করতে করতে আজকে ত্বহা গেলো, কালকে হয়ত আমি/আপনিও চলে যেতে পারি! 

তার স্ট্যাটাসটি শেয়ার করে ঢাবি ছাত্রী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা লেখেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিস্টেমেটিক টর্চার থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরি। শিক্ষকদের চিন্তা থাকে যেহেতু তারা এভাবে সিস্টেমেটিকালি সাফার করেছে তাই আমাদেরকেও করতে হবে। আমরা যে দিন শেষে মানুষ সেটা বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকদের কাছে কোনো বিষয় না। আল্লাহ ত্বহাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence