গণরুম মুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ‘স্বর্গীয় পরিবেশ’

ঢাবির হলে  গণরুম
ঢাবির হলে গণরুম  © ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণরুম! এক সময় যেগুলো ছিল ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের টর্চার সেল। অনেকে এটাকে তুলনা করেছেন হিটলারের কনসান্ট্রেশন ক্যাম্পের সাথে। ১৮টি হলের ১২৮টি গণরুমে প্রতিবছর গড়ে আড়াই হাজার শিক্ষার্থী নিষ্পেষিত হতো। এদের অধিকাংশই ছিল প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। উচ্চশিক্ষা জীবনের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা যে বড় ধাক্কাটা পেত তার রেশ থেকে যেত বাঁকি জীবন জুড়েই। তবে অবশেষে সেই অন্ধকার গল্পের ইতি হতে যাচ্ছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে হাতেগোনা কয়েকটি পরিবর্তন এসেছে তারমধ্যে গণরুমের বিলুপ্তি একটি অনন্য সংযোজন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, গণরুম মুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে স্বর্গীয় পরিবেশ বিরাজ করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের ১৩টি হলে ৮৫টি গণরুমে ১ হাজার ৮০০-এর অধিক শিক্ষার্থী এবং মেয়েদের ৫টি হলে ৪৩টি গণরুমে প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থী অবস্থান করে। হলের গণরুমে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে থাকতে হতো, যা জেলখানার কারাবন্দিকেও হার মানাতো। কারাবন্দীদের অর্ধেক জায়গাও বরাদ্দ ছিল না তাদের ভাগ্য। জেলে যেমন স্বাধীনতা নেই, গণরুমও তেমন স্বাধীনতা ছিল না।

কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থী কর্তৃক হলগুলো থেকে ছাত্রলীগ বিতাড়িত করা ও আওয়ামী সরকারের পতনের পরবর্তী সময়ে পাল্টে যায় আগের দৃশ্যপট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক দিক দিয়ে আসে নানা পরিবর্তন। এর ফলস্বরূপ শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গ্রহণ করে বিভিন্ন উদ্যোগ।

এরই ধারাবাহিকতায়, আগামী ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার জন্য প্রত্যেক হল প্রাধ্যক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটি। কমিটির সভায় আবাসিক হলে নানা ধরনের নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরে গণরুম প্রথা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ডক্টর আব্দুল্লাহ আল মামুন।

ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোকে গণরুম ও গেস্টরুম মুক্তের ঘোষণা দিয়েছেন বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষরা। গত ৭ সেপ্টেম্বর সর্বপ্রথম হলকে গণরুম ও গেস্টরুম মুক্তের ঘোষণা করেন বিজয় একাত্তর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. স ম আলী রেজা। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, সূর্যসেন হল, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলসহ বিভিন্ন  হলগুলো থেকে গণরুম মুক্ত করা হয়।

এর ফলস্বরূপ সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন। এ বিষয়ে সূর্য সেন হলের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম মুন্সি ইফতি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গণরুম ব্যবস্থা বিলুপ্তি ঘোষণার মাধ্যমে গণরুমের কবর রচিত করেছে। একজন শিক্ষার্থী যখন সুন্দর পরিবেশে থাকতে পারবে, সে তার মেধার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারবে। বিশেষ করে শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে। 

সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থী রুবাইয়া জান্নাত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরে সব শিক্ষার্থীর একটা সপ্ন থাকে হলে একটু ভালো জায়গায় থাকবে, ভালো পরিবেশে পড়ালেখা করবে। কিন্তু গণরুম এবং রাজনীতির কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বলতে গেলে প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীর সে স্বপ্ন ভঙ্গ হতো। অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হয় গণরুমে থাকতে হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুম বিলুপ্তিকরণকে সাধুবাদ জানাই। আর কখনো গণরুম ফিরে না আসুক। প্রতিটা শিক্ষার্থী তার বৈধ সিটে থেকে সুষ্ঠু পরিবেশে লেখাপড়া করুক।

হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের শিক্ষার্থী রায়হান বলেন, গণরুমবিহীন হলে বর্তমানে এক স্বর্গীয় পরিবেশ বিরাজ করছে। বৈধরুমে নিজের ইচ্ছে মতো পড়াশোনা ও পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ, নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থী অবস্থান করায় কোনো ধরণের লাইন কিংবা ঝামেলা ছাড়াই ক্যান্টিনে খাবার, ওয়াশরুম, গেমসরুম, রিডিং রুম ও হল লাইব্রেরি ব্যবহার করা যাচ্ছে। এছাড়াও পূর্বে গণরুমগুলোতে গাদাগাদি করে থাকায় সবসময় অস্বস্তিকর ও নোংরা পরিবেশ বিরাজ করত। ফলে বিভিন্ন ধরণের রোগে প্রায়শই আক্রান্ত হতাম যা এখন অনেকাংশে কমে এসেছে।

মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস কে বলেন, আমরা ড্যাসবোর্ডে নোটিশ দিয়ে  হলকে গণরুম ও গেস্টরুম নামক অপসংস্কৃতি চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের বৈধ রুম দেওয়া হয়েছে। হলের গেস্টরুমে অভিভাবক বা গেস্ট আসবে, কিন্তু কোনো প্রকার রাজনৈতিক চর্চা এখন আর হবে না। তিনি বলেন, আমি যতদিন আছি, ততদিন জিয়া হলে কোনো প্রকার রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন হতে দিবো না। ছাত্রজীবনে হলে থাকা কালীন আমাকেও জোর করে প্রোগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, আমি এসব বুঝি। আমি চাই না আমার কোনো শিক্ষার্থী এমন পরিস্থিতির স্বীকার হোক। 

হাজী মোহাম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মো. নাজমুল আহসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে নির্দেশ এসেছে,  কোনো হলেই গনরুম গেস্টরুম থাকবে না। মুহসীন হলেও কোনো গেস্টরুম, গণরুম কালচার রাখা হবে না। আমরা এই ধারা থেকে বের হয়ে আসতে চাই।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence