শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তনসহ বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারে ঢাবি শিক্ষকের ৫ প্রস্তাব

ঢাবির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন
ঢাবির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন  © সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। এখন রাষ্ট্র সংস্কারের আগে বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার সবার আগে জরুরি বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন। এ জন্য পাঁচটি সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছেন। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) তিনি ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে এ প্রস্তাব দেন তিনি।

অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন লিখেছেন, রাষ্ট্র সংস্কারের আগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার সবার আগে সবচেয়ে জরুরি। তার সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে-

১. ১০০ বছরের বেশি পুরোনো শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালা পরিবর্তন জরুরি। উপাচার্য/উপ-উপাচার্যের নিতৃত্বের একটি নিয়োগ বোর্ডের ২০-২৫ মিনিটের একটি ইন্টারভিউ এর মাধ্যমে পৃথিবীর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ দেয় শুনি? আমাদের উচিত ছিল সময়ের সঙ্গে নিয়োগ নীতিমালা আধুনিকীকরণ করা। আমরা পরিবর্তন করেছি, কিন্তু সেটা নিয়োগের শর্তাবলী শিথিল করে টপকানোর বার নামিয়ে দিয়েছি। শিক্ষক নিয়োগে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখানে ভুল মানে ন্যূনতম ৩৫ বছর ধরে এই ভুল টানা এবং একইসাথে এ ভুলের ডিম্ পেড়ে পেড়ে ক্যাসকেডিং ইফেক্টের মাধ্যমে সহস্র ভুলের জন্ম দিতে সাহায্য করা। 

পৃথিবীর সর্বত্র উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ন্যূনতম তিন থেকে চারটি স্তর থাকে। আমাদেরও একাধিক স্তর ছিল। সত্যেন বোসের অধ্যাপক পদে নিয়োগের সময় সে সময়ের দরখাস্তগুলো বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী সামারফিল্ড (যার ৯ জন ছাত্র নোবেলজয়ী) এর কাছে পাঠানো হয়েছিল মতামতের জন্য। কয়েকদিন আগে আমাদের বাংলাদেশি এক স্কলার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাকাল্টি হিসাবে নিয়োগ পেয়েছে। তার নিয়োগ প্রক্রিয়া ছয় মাস ধরে চলেছিল। আর আমরা ২০-২৫ মিনিটের ইন্টারভিউ নিয়েই নিয়োগ দিয়ে ফেলি। কি দুঃখজনক। আবার সেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে ক্ষমতাধরদের একজন। মূলত এর মাধ্যমে সরকার ওই ক্ষমতাধরকে নিয়ন্ত্রণ করেই দলীয়করণ করে।

তাই আমার প্রস্তাব প্রতিটি বিভাগের সিঅ্যান্ডডি ইন্টারভিউ ও ছাত্রছাত্রীদের সামনে প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে একটি শর্টলিস্ট করবে। তারপর ডিনের নেতৃত্বে বিভাগ ও এক্সটার্নাল সদস্যদের নিয়ে গঠিত নিয়োগ বোর্ডের আরেকটি ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে শর্টলিস্ট করা হবে। তারপর সেই শর্টলিস্ট করা প্রার্থীদের দরখাস্ত বিদেশী এক্সপার্টদের কাছে পাঠিয়ে তাদের মতামত নেওয়া হোক। তার ভিত্তিতে সবার শেষে বর্তমান নিয়মানুসারে একটা ছোট লিস্টের প্রার্থীদের উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি বোর্ডে ইন্টারভিউ হোক। এতগুলো স্তর পার হয়ে আসলে ভুল হওয়ার সম্ভবনা অনেক কমে যাবে।

২. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের এন্ট্রি লেভেল হওয়া উচিত সহকারী অধ্যাপক, যার ন্যূনতম যোগ্যতা পিএইচডি। প্রভাষক পদটি অস্থায়ী করে এটিকে টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট’র সমমানের করা হোক। যাদের ‘ক’ বছরের পোস্ট ডক অভিজ্ঞতা থাকবে তার ‘ক’ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ধরে শিক্ষক নিয়োগ হোক। শিক্ষক নিয়োগে গবেষণাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হোক। এন্ট্রি লেভেলে নিয়োগের পর অন্তত ২ বছরের প্রবেশনারি পিরিয়ড ধরা হোক। প্রত্যেক শিক্ষক নিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে তাকে গবেষণার জন্য একটা সীড মানি বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা হোক। 

২ বছরের প্রবেশনারি পিরিয়ডে ন্যূনতম দুটি গবেষণা আর্টিকেল প্রকাশ করলে চাকরি পার্মানেন্ট করা যেতে পারে। এর মাঝে অতিরিক্ত গবেষণাপত্র থাকলে প্রতি তিনটির জন্য এক বছরের প্রবেশনারি পিরিয়ড কমানো যেতে পারে। শিক্ষকদের প্রতিটি আর্টিকেল প্রকাশনার জন্য আর্থিক প্রণোদনার মাধ্যমে গবেষণাকে উৎসাহিত করা যেতে পারে। 

৩. উপাচার্যের একক ক্ষমতা অবশ্যই কমানো উচিত। এত ক্ষমতা একজনের হাতে থাকলে যেকেউ স্বৈরাচারী হওয়ার সম্ভবনা থাকে। ছুটির মতো কিছু কিছু রুটিন কাজের জন্য উপাচার্যের কাছে যেতে হবে কেন? একজন শিক্ষক অনলাইনে দরখাস্ত করবে। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দেবে এবং রুটিন কাজের মত এনওসি স্বল্প সময়ের মধ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আরো অনেক কাজ আছে যেমন প্রতিদিনের সব অনুষ্ঠানে উদ্বোধন কেন করতে যেতে হবে? কেন ২০টি হলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে উপাচার্যকে যেতে হবে? এরকম অনেক কাজ আছে, যা বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের অনেক সময় একা বসে থেকে চিন্তার জাবর কাটাও বিশাল কাজ।

আরো পড়ুন: আসাদুজ্জামান নূরকে গ্রেফতার কি জরুরি ছিল, প্রশ্ন ঢাবি অধ্যাপকের

৪. বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৬টি গবেষণা সেন্টার কেন থাকতে হবে? এতগুলো সেন্টারে একটু একটু করে বরাদ্দ দিলে কোন সেন্টারই কোন গবেষণা করতে পারে না এবং পারবে না। এগুলোর অনেক বাদ দিয়ে ১০ এর নিচে নামিয়ে এনে ইনহাউস পিএইচডি ও পোস্ট-ডক নিয়োগ দিয়ে গবেষণায় মনোযোগ দেওয়া উচিত। 

৫. বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে নিজস্ব জার্নাল প্রকাশ এখনই বন্ধ করতে হবে। এতে বিশাল টাকা সাশ্রয় হবে। নিজের দ্বারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে জার্নাল প্রকাশ করে নিজেদের প্রয়োজনীয় আর্টিকেল প্রকাশ করে দ্রুত প্রমোশন লাভ পৃথিবীর কোথায় হয়। এ কর্ম জোট শিগগিরই বন্ধ করা যায়, ততই আমাদের মঙ্গল। 

এ পদক্ষেপগুলো নিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক উপকার হবে বলে বিশ্বাস করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence