ঢাবি ভর্তি পরীক্ষার ভুয়া প্রশ্ন বিক্রি করে ১০ লাখ টাকা আয় কলেজছাত্র নাফিউলের

  © সংগৃহীত

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্ডারগ্রাজুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় ‘টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন পাওয়া যাবে’ তথ্য ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।  বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এমন তথ্যকে গুজব আখ্যায়িত করে ঢাবি কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সতর্ক করে। এরপর শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের করা সেই মামলায় তদন্ত করতে গিয়ে আন নাফিউল ওরফে নাফিজ ইকবাল নামে প্রতারক চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

নাফিজ ইকবালের লেনদেনের তথ্য থেকে প্রশ্নপত্র বিক্রি করে প্রতারণামূলকভাবে প্রায় ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার তথ্য পায় ডিবি পুলিশ।

ঢাকা জয়পুরহাট ও বগুড়া জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের এডিসি আশরাফউল্লাহ’র নেতৃত্বে একটি দল চক্রের এ সদস্যকে গ্রেফতার করে। এসময় তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় প্রতারণায় ব্যবহৃত আলামত।

আরও পড়ুন: ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের গুজব, সতর্ক করল প্রশাসন

একই সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাইবার সিকিউরিটি ইনচার্জ পরিচয় দিয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ ও সাইবার সাইবার টিনস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মো. সাদাত রহমানের (২১) নামে ফেক আইডি ব্যবহার করে প্রতারণা প্রশ্নপত্র বিক্রির অভিযোগে মো. আসিফ তালুকদার নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ।

রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) নিজ কার্যালয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব তথ্য জানান।

ডিবিপ্রধান বলেন, মামলার প্রেক্ষিতে বিষয়টি দ্রুত বিবেচনায় নিয়ে জড়িত প্রতারককে আইনের আওতায় আনতে অভিযান পরিচালনা করে বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানাধীন দবিলা সংসারদিঘী গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি রাথাবাড়ীর সবুজ আহমেদের ছেলে গ্রেফতার আন নাফিউল নাফিজ ইকবাল (২৩)।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সরবরাহের কথা বলে বিভিন্ন গ্রুপে প্রচার এবং বিভিন্ন গ্রুপের পোস্টে কমেন্ট করে ভর্তিচ্ছু সাধারণ পরীক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে। পরীক্ষার্থীরা সহজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পাওয়ার আশায় অপরাধীদের দেওয়া টেলিগ্রাম নম্বরে এবং ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ করেন। তাদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে আগে ২০ হাজার টাকা পাঠানোর পর প্রশ্ন প্রদান করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও টাকা নেওয়ার পর তারা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে প্রতারণা করে।

আরও পড়ুন: অপহরণের পর তিনদিন আটকে নির্যাতন, ঢাবির হল থেকে উদ্ধার দুই ব্যক্তি

গ্রেফতারকৃত নাফিজ সম্পর্কে তিনি বলেন, নাফিউল নাফিজ মহিপুর হাজী মহসিন কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। প্রশ্নপত্র বিক্রির নামে প্রতারণামূলকভাবে তিনি প্রায় ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে শিশু বিশেষজ্ঞ ও সাইবার সাইবার টিনস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মো. সাদাত রহমানের নাম ব্যবহার করে প্রতারণা সম্পর্কে হারুন অর রশীদ বলেন, সাদাত রহমান নামে তরুণ শিশু সাইবার অপরাধ নিয়ে কাজ করেন। তিনি আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও কাজ করেন। আন্তর্জাতিকভাবে তিনি বিভিন্ন পুরস্কারও পেয়েছেন। তার ফেসবুক আইডির ন্যায় ফেক আইডি খুলে প্রশ্নপত্র ফাঁস থেকে শুরু করে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড চলছিল।

ওই ফেক আইডির ব্যবহারকারী অপরাধী নিজেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাইবার সিকিউরিটি ইনচার্জ হিসেবেও পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে করা অভিযোগ ও ভুক্তভোগী সাদাত রহমানের মামলার প্রেক্ষিতে প্রতারণায় জড়িত আসিফ তালুকদারকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃত আসিফ তালুকদার সম্পর্কে ডিবি প্রধান বলেন, আসিফ তালুকদার পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার সুযোগ পেলেও প্রতারণায় পিছিয়ে নেই। ফেক ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে প্রতারণা ও প্রশ্ন বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তিনি ছদ্মবেশ ধারণ করে অন্যের ছবি ও পরিচয় ব্যবহার করে ফেক ফেসবুক আইডি তৈরি করেন। ফেক ফেসবুক আইডিতে সাইবার টিনস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতার পরিচয় ব্যবহার করে নিয়মিত ছবি পোস্ট করতেন এবং ভুক্তভোগীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ছবি পোস্ট করে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেন। তিনি নিজেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাইবার সিকিউরিটি ইনচার্জ পরিচয় দিতেন। ফেসবুক আইডিতে এসএসসি পরীক্ষার (গত সালের) প্রশ্ন পোস্ট করেন এবং ফেক ফেসবুক আইডিতে দ্রুত যোগাযোগ করতে বলেন। এরপর তার পোস্ট দেখে যারা যোগাযোগ করতেন তারাই প্রতারিত হতেন।

প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়ে হারুন-অর-রশীদ বলেন, যেকোনো পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করা খুবই দুঃসাধ্য একটি ব্যাপার। সুতরাং ফাঁসকৃত প্রশ্ন ক্রয়-বিক্রয় থেকে বিরত থাকুন এবং এ সংক্রান্ত আর্থিক লেনদেন থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকুন। অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে যেকোনো পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মনোভাব থেকে সবাইকে বের হয়ে আসতে হবে। অভিভাবকদের এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে। এই ধরনের অবৈধ চক্রের সন্ধান পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে অবগত করা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ সহজ হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence