ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
কর্তৃপক্ষ বলছে শিক্ষার্থীরা খেলে না, শিক্ষার্থীদের ভাষ্য ‘মাঠ নেই’
- জুবায়ের হোসাইন, ঢাবি
- প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:০৭ PM , আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:২৬ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হল পাড়া খ্যাত এলাকায় পাশাপাশি অবস্থিত পাঁচটি হল। এসব হলগুলোতে আনুমানিক প্রায় নয় হাজার শিক্ষার্থী থাকলেও খেলাধুলার জন্য মাঠ রয়েছে মাত্র একটি। শিক্ষার্থীরা বলছেন, নিজস্ব হলগুলোতে মাঠ সঙ্কটে তাদের খেলাধুলার জন্য অন্য হলে যেতে হচ্ছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, খেলার যে মাঠ রয়েছে, সেগুলো খালি পড়ে থাকে। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
জানা যায়, ২০১৪ সালে বিজয় একাত্তর হল প্রতিষ্ঠার আগে জিয়া হল এবং সূর্যসেন হলের মধ্যবর্তী জায়গায় ফাঁকা ছিল। কিন্তু তখনো সে জায়গায় কোনো মাঠ ছিল না। হল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, সেসময় সূর্যসেন হলের কর্মচারীরা ওই ফাঁকা স্থানে সবজি চাষাবাদ করতেন। পরবর্তীতে সেখানে বিজয় একাত্তর নামে আরেকটি নতুন হল প্রতিষ্ঠা করা হয়।
আমার মনে হয় শিক্ষার্থীরা নিজেরাই খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। আমরা প্রায় সময়ই দেখি অন্যান্য হলগুলোর মাঠও ফাঁকাই পড়ে থাকে। -অধ্যাপক বিল্লাল হোসেন, প্রাধ্যক্ষ, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল
বর্তমানে হল পাড়ায় মাস্টার দা সূর্যসেন হল, বিজয় একাত্তর হল, কবি জসীম উদ্দীন হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে নামে পাঁচটি হল অবস্থিত।
এসব হলগুলোর শিক্ষার্থীরা জানান, খেলার জন্য তারা অন্য হলগুলোর মাঠে যান। যেমন হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের নিজস্ব মাঠ, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের মাঠ অথবা জগন্নাথ হলের মাঠ কিংবা কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে যান। অন্যান্য হলগুলোর মাঠ সবসময় ফাঁকা থাকলেও খেলার সময় অর্থাৎ বিকেলের সময়টাতে ওই শিক্ষার্থীরাই মাঠে অবস্থান করেন। এতে করে অন্যান্য হলের শিক্ষার্থীরা সেখানেও খুব একটা সুযোগ পান না। আর কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে যেতে হলে রিকশায় ৪০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। এতে করে অনেক শিক্ষার্থী খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
আরও পড়ুন: বছরে ৬ মাসই পানির নিচে পবিপ্রবির কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ
কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, ঢাবি
জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থী হারুন ইসলাম বলেন, পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলা আবশ্যক। বিশ্ববিদ্যালয়ে আশার আগে আমি প্রতিদিন বিকেলে পাড়ার মাঠে খেলাধুলা করতাম। কিন্তু হলে উঠার পর আস্তে আস্তে খেলার প্রতি ভালো লাগাটা কমে গেছে। তার অন্যতম কারণ এই মাঠ সংকট।
তিনি বলেন, প্রথম-দ্বিতীয় বর্ষে আমরা জসীম উদদীন হলের মাঠ বা সেখানে জায়গা না পেলে মল চত্বরে খেলার অনেক জায়গা ছিল; সেখানে খেলতাম। কিন্তু এখন সেটাও নেই। এখন আমাদেরকে খেলার জন্য অন্যান্য হল বা জসীম উদ্দীন হলের এই ছোট্ট মাঠের উপর নির্ভর করতে হয়। এর ফলে ধীরে ধীরে খেলার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছি।
সূর্যসেন হল ক্যাফেটেরিয়ার সামনে যে জায়গাটি খালি পড়ে আছে সেটাকে সংস্কার করে একটি মাঠ বানানো যেতে পারে। হল প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা চাইলেই এটি করা যায়। -শাহজাহান আলী, পরিচালক, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র
সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী সোহান বলেন, হলে আমরা প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থী আছি। কিন্তু সেখানে আমাদের কোনো মাঠ নেই। মল চত্বর ছিল, এখন সেটাও নেই। আমরা যে আন্তঃহল কোনো খেলার আয়োজন করবো, সেজন্যও আমাদের অন্য হলের মাঠ টাকা দিয়ে ভাড়া নিতে হয়। হল পাড়ার পাঁচটি হলের জন্যও যদি একটি বড় মাঠ থাকতো, তাহলে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলার প্রতি আরও আগ্রহী হতো।
একাত্তর হলের শিক্ষার্থী আরিফ বলেন, আমাদের এত বড় একটি হল, অথচ হলের জন্য যেই সুযোগ-সুবিধাগুলো দরকার তার অনেক কিছুই আমরা পাচ্ছি না। প্রায় ২৫০০ শিক্ষার্থী আমরা এই হলে থাকি। অথচ কোনো মাঠ নেই। শিক্ষার্থীরা উপায় না পেয়ে সব কিছু মেনে নিয়েছে। জসীম উদ্দীন হলের মাঠেই সুযোগ পেলে খেলা হয়। তবে এ ধরনের সংকটের কারণেও খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ কমছে শিক্ষার্থীদের।
আরও পড়ুন: খেলাধুলার চেয়ে ধান চাষে বেশি উপযোগী ববির খেলার মাঠ
মুহসীন হলের মাঠ
আরেক শিক্ষার্থী মাহিন ইসলাম জানান, আমরা সবসময় খেলার সুযোগ পাই না। ক্লাস-টিউশনের কারণে সারাদিন আমরা খুব কমই অবসর সময় পাই। অল্প সময়ের জন্য রিফ্রেশমেন্টের জন্যেও হলেও খেলাধুলার ইচ্ছে হয়। কিন্তু হল পাড়ায় মাঠ সংকটে সেটার খুব একটা সুযোগ পাওয়া যায় না। সারাদিন বিভিন্ন হলের মাঠ খালি থাকলেও সেটা বিকেলে খালি পাওয়া যায় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের পরিচালক মো. শাহজাহান আলী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। কিন্তু হলগুলো দূরে হওয়ায় শিক্ষার্থীরা সব সময় এখানে আসতে চান না। তবে প্রশাসন চাইলে এবং শিক্ষার্থীরাও যদি চায়, তাহলে সূর্যসেন হল ক্যাফেটেরিয়ার সামনে যে জায়গাটি খালি পড়ে আছে সেটাকে সংস্কার করে একটি মাঠ বানানো যেতে পারে। হল প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা চাইলেই এটি করা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আশার আগে আমি প্রতিদিন বিকেলে পাড়ার মাঠে খেলাধুলা করতাম। কিন্তু হলে উঠার পর আস্তে আস্তে খেলার প্রতি ভালো লাগাটা কমে গেছে। তার অন্যতম কারণ এই মাঠ সংকট। -শিক্ষার্থী, জিয়াউর রহমান হল
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক বিল্লাল হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমার মনে হয় শিক্ষার্থীরা নিজেরাই খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। আমরা প্রায় সময়ই দেখি অন্যান্য হলগুলোর মাঠও ফাঁকাই পড়ে থাকে।
অধ্যাপক বিল্লাল হোসেন বলেন, আমরা যখন কোনো প্রতিযোগিতার জন্য টিম তৈরি করতে যাই, তখন আমি কোনো খেলোয়াড়ই পাই না। শিক্ষার্থীদের যদি আগ্রহ থাকতো, তারা যদি দাবি তুলতো, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটা ব্যবস্থা অবশ্যই করতো। তবে এ কথা স্বীকার করতে হবে যে, আমাদের শিক্ষার্থী সংখ্যা তুলনায় খেলাধুলার জায়গার সংকট রয়েছে।