চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

তথ্য গোপন করে হলেন শিক্ষক, অদৃশ্য কারণে পেলেন পদোন্নতিও

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

তথ্য গোপন করে শিক্ষক হওয়ার পর পদোন্নতি পেলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক সুলতানা সুকন্যা বাশার। ছাত্রজীবনের অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষায় নকলে ধরা পড়ায় খাতা বাতিল হয় এ শিক্ষকের। সম্প্রতি পদোন্নতি বোর্ডের অসন্তোষ থাকায় শর্তসাপেক্ষে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন তিনি। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলে চলছে তুমুল সমালোচনা।

জানা যায়, সুকন্যা বাশার ২০১৩ সালে চবির ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ পান তিনি। ঐ নিয়োগের আবেদন পত্রে কয়েকটি তথ্য জালিয়াতি করে হন প্রভাষক। তার অনার্স-মাস্টার্স দুটোর পাসের সন ২০০৮ সালে হলেও তিনি অনার্স ২০০৭ এবং মাস্টার্স ২০০৮ সাল উল্লেখ করেন আবেদনপত্রে। কিন্তু এরপর ২০১৬ সালে যখন সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির আবেদন করেন সেখানে অনার্স ও মাস্টার্স পাসের সন একই সাল অর্থাৎ ২০০৮ উল্লেখ করেন। অনার্স পরীক্ষার সনে উল্লেখ করেন ২০০৮ (মানোন্নয়ন)। 

প্রগতিশীল আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন হলুদ দলের মনোনয়ন পেয়ে একাধিকবার শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। অবশ্য সর্বশেষ শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে যুগ্ম সম্পাদক পদে ভরাডুবি হয় তার। সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, অনার্স চতুর্থ বর্ষের একটি কোর্সের পরীক্ষায় তিনি নকলসহ ধরা পড়েন। শ্রেণিকক্ষে দায়িত্বরত শিক্ষক ড. হাসিনা আখতার ও সাবিনা নার্গিস লিপি তাকে বহিষ্কার করতে চাইলেও তিনি ভবিষ্যতে এমন কাজ করবেন না বলে ক্ষমা চান। অনার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষা চিন্তা করে তৎকালীন পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তৌহিদ হোসেন চৌধুরী তাকে বহিষ্কার না করলেও ওই কোর্সের সব প্রশ্নের উত্তর কেটে দিয়ে খাতা বাতিল করেন। নকলের কারণে তাকে ওই পরীক্ষা পরের বছর আবার দিতে হয়। তাই তার অনার্স এবং মাস্টার্সের সার্টিফিকেট একই সেশনের।

আরও পড়ুন: ভেঙে যেতে পারে গুচ্ছ, ইঙ্গিত দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির

এছাড়াও তিনি অনার্সের পজিশন নিয়েও ভুল তথ্য দিয়েছেন শিক্ষক নিয়োগের আবেদনপত্রে। সেখানে তিনি অনার্সের পজিশন ৬ষ্ঠ স্থান উল্লেখ করেন। কিন্তু জানা যায়, তার পজিশন ছিল অনেক নিচে। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বি.এ (অনার্স) ২০০৭ সালের পরীক্ষায় ৩.৫২ সিজিপিএ পেয়ে ৬ষ্ঠ হয়েছিলেন লায়লা মুশতারী ও শাহীনা পারভীন নামের দুজন। ২০০৭ সালের পরীক্ষায় সুকন্যা বাশারের  সিজিপিএ ছিল ৩.৪৩। পরের বছর ২০০৮ সালে বাতিলকৃত কোর্সটি পুনরায় পরীক্ষা দিয়ে তার সিজিপিএ হয় ৩.৫১। আবেদনপত্রে এ দুটি তথ্য জালিয়াতি থাকলেও অজানা কারণে পার পেয়ে যান তিনি। বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটি এবং নিয়োগ বোর্ড কোথাও এই ভুলগুলো ধরেনি। 

সম্প্রতি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন সুকন্য বাশার। তবে তার পদোন্নতি নিয়েও চলছে সমালোচনা। বোর্ড সূত্রে জানা যায়, পদোন্নতি বোর্ডের ৮ জন সদস্যের বেশিরভাগই তার ভাইভাতে সন্তুষ্ট ছিলেন না, কারণ তিনি বেশিরভাগ প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারেননি। বোর্ডে তার পদোন্নতির জন্য ১ বছর সময় দিয়ে শর্তসাপেক্ষে সুপারিশ করা হয়। সেই শর্তের কপি এসেছে দ্যা ডেইলি ক্যম্পাসের কাছে। সেখানে বলা হয়, "তাকে প্রথম বাংলাদেশ সরকারের মুখপাত্র 'জয় বাংলা' পত্রিকার সম্পাদকীয় এর উপর এক বছরের মধ্যে ইতিহাস সংশ্লিষ্ট একটি গবেষণা প্রকাশ করতে হবে। প্রকাশ না করলে তাকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি কনফার্ম করা হবে না"। কিন্তু সেই শর্ত গ্রাহ্য না করেই গত ৩১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪৫ তম সিন্ডিকেট সভায় তাকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংরেজি শিক্ষা ব্যবসার জন্য নতুন শিক্ষাক্রম’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পদোন্নতি বোর্ডের সদস্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি তার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি তার পড়ালেখা আমাদের কাছে কোন গ্রহণযোগ্যই মনে হয়নি। এখন আমি এটাই বুঝতে পারছি না যে সে কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলো!। ভাইভা বোর্ডের আমরা কেউই তার পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট ছিলাম না এমনকি উপাচার্য ম্যামও না। তারপরও তিনি কীভাবে পদোন্নতি পেলেন এটাই প্রশ্ন। সিন্ডিকেট থেকে তিনি কীভাবে পার পেলেন? তবে আগামী ১ বছরের মধ্যে ইতিহাস সংশ্লিষ্ট একটি গবেষণা এশিয়াটিক সোসাইটির মতো জার্নালে প্রকাশ হতেই হবে। তা নাহলে তিনি ঐ পদের জন্য মনোনীত হবেন না। 

সুলতানা সুকন্যা বাশার

নকলের বিষয়ে সুকন্যা বাশারের একজন সহপাঠী বলেন, আমিও সেদিন ওই রুমে পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। লিপি ম্যাম সুকন্যার নকল ধরার পরে সে অনেক কান্না করেছিলো। আমরা ভেবেছিলাম তাকে বহিষ্কার করা হবে। কিন্তু ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা হওয়ায় তৌহিদ স্যার বহিষ্কার না করে ক্ষমা করে দেন। পরে ওই কোর্সের পরীক্ষা তাকে সাপ্লি হিসেবে রেখে দিতে হয়।

নকল এবং তথ্য জালিয়াতির অভিযোগ থাকলেও প্ল্যানিং কমিটি কেন বিষয়গুলো ধরেনি এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য প্রফেসর ড. গোলাম কিবরিয়া ভূঁইয়া  বলেন, এটা অনেক আগের বিষয়, তাই সম্পূর্ণ মনে নেই। তবে প্ল্যানিং কমিটিতে তথ্য ভুল দেওয়ার বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছিল। তখন কমিটির একজন সদস্য উনার পক্ষ নিয়ে বলেছিলেন প্রার্থী এগুলো সংশোধন করে দিবেন। এরপর সংশোধন করেছে কি-না তা বলতে পারবো না। 

পদোন্নতি বোর্ডে কোনো প্রশ্নের সঠিক উত্তর না দিতে পেরেও পদোন্নতি পাওয়া গেলে এ বোর্ডের ভূমিকা কী- এমন প্রশ্নের জবাবে বোর্ডের জ্যেষ্ঠ সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেকান্দর চৌধুরী বলেন, বোর্ড শুধু সুপারিশ করতে পারে। বাকিটা সিন্ডিকেটের ইচ্ছা। সিন্ডিকেট মনে করলে সিলেকশন কমিটির অনেক কিছু পরিবর্তন পরিমার্জন করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

শর্ত গ্রাহ্য না করেই কেন পদোন্নতি দেওয়া হলো এ প্রশ্নের জবাবে সিন্ডিকেট সদস্য ড. নঈম উদ্দিন হাছান আওরঙ্গজেব চৌধুরী বলেন, তাকে পদোন্নতি শর্ত সাপেক্ষে দেওয়া হয়েছে। তাকে যে শর্ত দেওয়া হয়েছে তা যদি ১ বছর পর পূরণ করতে না পারেন তাহলে পদোন্নতি নিশ্চিত হবে না। 

শিক্ষক নিয়োগের আবেদনপত্রে তথ্য জালিয়াতির ব্যাপারে জানতে চাইলে সুলতানা সুকন্যা বাশার বলেন, আবেদনপত্রে দেওয়া তথ্যে যদি কোনও ভুল থাকে তা প্রিন্টিং মিস্টেক বা আমারও ভুল হতে পারে। এটা তো অনেক আগের ব্যাপার। কপিগুলো দেখে বলতে হবে। আর তথ্যে যদি ভুল হয়ে থাকে প্ল্যানিং কমিটিতে ঠিক হয়ে আসার কথা। তখন প্ল্যানিং কমিটি থেকে কেউ কিছু জানায়নি।

পরীক্ষায় নকলের বিষয়ে তিনি বলেন, এমন মৌখিক অভিযোগ অনেকেই দিতে পারেন। আমার ওই পরীক্ষায় একটি প্রশ্নও কমন পড়ে নাই। তাই সাপ্লি রেখেছি। নকলের বিষয়টা সত্য নয়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence