রাবির আন্তঃবিভাগ প্রতিযোগিতায় বারবার কেন উত্তেজনা-সংঘর্ষ?

সংঘর্ষ
সংঘর্ষ  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) প্রতিযোগিতামূলক খেলাগুলোতে মারামারি যেন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তঃবিভাগীয় বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এসব সংঘর্ষে অনেকক্ষেত্রে শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনাও ঘটেছে।

সর্বশেষ গতকাল (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় আন্তঃবিভাগ বাস্কেটবল প্রতিযোগিতা ২০২৩-এর ফাইনালে উপাচার্যের সামনেই তুমুল সংঘর্ষে লিপ্ত হয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা। দুপক্ষের চেয়ার ছুড়াছুঁড়িতে পন্ড হয়ে যায় ফাইনাল ম্যাচটি। জানা গেছে, এই ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেয়েছেন টুর্নামেন্টের আয়োজন কমিটি।

উপাচার্যের সামনে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের পর ক্যাম্পাসে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবেই দেখছেন। তারা মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কাছে সামান্য একটি খেলাকে ঘিরে এমন উত্তেজনা-সংঘর্ষ এবং চেয়ার ছুড়াছুঁড়ি কোনোভাবেই কাম্য নয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আশিক মাহমুদ লিখেন, শিক্ষার্থীদের সহিষ্ণুতা এবং সহমর্মিতা কমে গেছে অনেক। মেডিটেশন শেখানো দরকার এদের। আমরাও খেলা দেখতাম, স্লেজিং করতাম, চিল্লা-চিল্লি করে পাগল হয়ে যেতাম। কিন্তু খেলা শেষে একসাথে চায়ের আড্ডায়ও বসতাম প্রতিপক্ষের সাথে। শুধুই মাতামাতি হতো, হাতাহাতি হয়নি কখনও।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হওয়া কয়েকটি টুর্নামেন্টে শিক্ষার্থীরা কখনো কখনো নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে, খেলার ফলাফল প্রত্যাশিত না হওয়ায় মারধরের শিকার হয়েছেন আম্পায়ার; কখনো আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক এসব মারামারি ঠেকাতে এসে হয়েছেন লাঞ্ছিত।

গত বছরের ২২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ কামাল স্টেডিয়ামে আয়োজিত আন্তঃবিভাগ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচে আম্পায়ারকে পেটানোর অভিযোগ উঠে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান এবং গণিত বিভাগের মধ্যে চলমান এই ফাইনাল ম্যাচে আম্পায়ার খুরশিদ আলমের দেওয়া এক সিদ্ধান্তকে ঘিরে ঘটনার সূত্রপাত। গণিত বিভাগের শিক্ষার্থীরা ম্যাচ চলাকালীনই আম্পায়ারের সাথে কথা-কাটাকাটিতে লিপ্ত হন। পরে ম্যাচ শেষে, এই আম্পায়ারের উপর চড়াও হন গণিত বিভাগের ১০ থেকে ১২ জন শিক্ষার্থী। এক পর্যায়ে তাকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।

আরও পড়ুন: মাদকাসক্ত শিক্ষার্থী ভর্তিতে সতর্ক শাবিপ্রবি প্রশাসন

এর আগে গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর আন্তঃবিভাগ ফুটবল প্রতিযোগিতায় ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স বিভাগ বনাম ইনস্টিটিউট অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ)-এর মধ্যকার একটি ম্যাচে রেফারির সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তীতে সংঘর্ষের রূপ নেয়। এসময়, ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সের অধ্যাপক ডা. মোইজুর রহমান সমাধানের জন্য এগিয়ে গেলে আইবিএ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু সিনহা সৌমিক তার কলার ধরে টানাহেঁচড়া করে এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীদের  মারধর করে বলে অভিযোগ করেন রাবি ভেটেরিনারি সায়েন্সের শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, কোনো একটি টুর্নামেন্ট হলে, নিজেদের খেলোয়াড়দের সাপোর্ট দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় এবং তাদের সাপোর্টারদের অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, স্লেজিংসহ নানাভাবে আক্রমণ করার চেষ্টা করে। আম্পায়ার কিংবা রেফারির সিদ্ধান্ত নিজেদের বিরুদ্ধে গেলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়—যা সংঘর্ষে রূপ নেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মাহবুবা কানিজ কেয়া বলেন, শিক্ষার্থীরা হার মেনে নিতে পারছেনা; মানে হারাটাও যে খেলার একটা অংশ সেটা শিক্ষার্থীরা বুঝতে চেষ্টা করে না। তাদের এমন একটি চিন্তাভাবনা হয়েছে, যে আমাদের জিততেই হবে; আর এই রকম চিন্তাভাবনাই বিশৃঙ্খলার মূল কারণ।

মনোবিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপক আরও বলেন, খেলায় অংশগ্রহণকারী সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকদেরও উচিত বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া। যারা এরকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং শিক্ষার্থীদেরকে আরও সতর্ক হওয়া উচিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, গতকাল যে ঘটনাটি ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সামনে যেভাবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে চেয়ার ছুড়াছুঁড়ি হয়েছে, এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলেই আইন অনুযায়ী জড়িতদেরকে বহিষ্কার করতে পারেন। কিন্তু, আমরা এগুলো চাই না। শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্পোর্টস স্পিরিট জাগ্রত হবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।

প্রক্টর আরও বলেন, বাস্কেটবল ফাইনালে অংশগ্রহণকারী দুই বিভাগের চেয়ারম্যানকে ইতোমধ্যেই জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের সাথে আলোচনা করবে। প্রাথমিকভাবে যারা জড়িত, তাদের আমরা চিহ্নিত করেছি। তাদেরকেও, ডাকা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence