বন্ধ রয়েছে ঢাবির ৩৬ ট্রাস্ট ফান্ডের কার্যক্রম, বৃত্তি পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য পরিচালিত ট্রাস্টগুলোর মধ্যে ৩৬ ট্রাস্টের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তহবিল স্বল্পতা, ট্রাস্ট ফান্ডের নীতিমালার জটিলতা, প্রশাসনিক লোকবলের অভাব, ট্রাস্টিদের অবহেলাসহ প্রভৃতি কারণে এগুলো স্থগিত রয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে মোট ৩৯০টি ট্রাস্ট ফান্ড কার্যক্রম চালু রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০টি ট্রাস্ট ফান্ড প্রতিষ্ঠা হয়। বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট, অনুষদ এবং হলের এক হাজারের মতো শিক্ষার্থী এগুলোর অধীনে বৃত্তি পান। কিন্তু এসব ট্রাস্ট বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আর্থিকভাবে সাহায্য পাচ্ছেন না।

১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত পোপ মেমোরিয়াল গোল্ড মেডেল ট্রাস্ট গঠন করা হয়। ১৯২৭ সালে নীলকান্ত সরকার গোল্ড মেডেল ও ফত এই ট্রাস্ট্রগুলোতে ২ থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত ফান্ড রয়েছে। তবে বন্ধ রয়েছে এসব ফান্ডের কার্যক্রম।

অগ্রণী ব্যাংক বক্তৃতামালা ফান্ডে ৮ লাখ টাকা থাকলেও বৃত্তি তাহবিল স্থগিত রয়েছে। এছাড়া আশালতা সেন স্মারক স্বর্ণপদক, কে কে দত্ত স্মারক আইন বক্তৃতা, ফুলার মেমোরিয়াল ফান্ড, সমাজবিজ্ঞান বিভাগে সুলতানা আহমেদ কামাল ট্রাস্ট ফান্ড, ফার্মেসি ও বোটানি বিভাগে হামদর্দ শহীদ হাকিম মোহাম্মদ সাঈদ স্মারক বৃত্তি তহবিল, দর্শন বিভাগে দাতা শফিক রেহমানের সাইদুর রহমান ফাউন্ডেশন, ক্রীড়ায় মৌলভী আবদুল মতিন স্মারক স্বর্ণপদক তহবিল ও লে. কর্নেল (অব.) মতিউর রহমান স্মারক বৃত্তি তহবিলের ফান্ডগুলোতে দেড় থেকে তিন লাখ টাকা রয়েছে। তবে এসব ফান্ডের কার্যক্রম স্থগিত আছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য ১৯৯২ সালে চালু হয় ট্রাই সিটিস বাংলাদেশ ট্রাস্ট ফান্ড বৃত্তির কার্যক্রম। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে আবদুর রব চৌধুরী চেয়ার ফর ম্যাথমেটিক্যাল ফিজিক্স ট্রাস্টের ফান্ডে বর্তমানে ১০ লাখ টাকা থাকলেও বন্ধ রয়েছে কার্যক্রম। এই ট্রাস্টের অধীন চেয়ার অধ্যাপকের জন্য প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা নির্ধারিত।

এই ট্রাস্ট ফান্ডগুলো দীর্ঘদিন ধরেই তাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। এর কারণ হলো তারা নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়কে ফান্ড প্রদান করছে না। আমরা চেষ্টা করছি তারা যেনো আবার তাদের ফান্ড চালু রেখে বৃত্তি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখেন। -উপাচার্য

স্বর্ণপদক, সর্বোচ্চ সিজিপিএ, স্মারক বক্তৃতা এবং অসচ্ছলতার কারণে বৃত্তি প্রদান করে থাকে এ ট্রাস্টগুলো। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বেশ কিছু ট্রাস্ট গঠন করা হলেও বর্তমানে প্রায় ৩৬ ট্রাস্টের ফান্ড কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

এদিকে, বেশ কিছু ট্রাস্ট ফান্ডে প্রায় ৫০ হাজার টাকা থাকলেও বন্ধ রয়েছে তাদের কার্যক্রম। এগুলো হলো– পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে সৈয়দা আখতারুন্নেসা বেগম বৃত্তি তহবিল, নাসিরুদ্দীন ফাউন্ডেশন, ফিয়াস ফাউন্ডেশন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগে খন্দকার এ কে একরাম আলী মেমোরিয়াল বৃত্তি তহবিল, পালি ও বুড্ডিস্ট বিভাগে অধ্যক্ষ পি আর বড়ুয়া বৃত্তি তহবিল ও আবদুল হাকিম-আসাদুন্নেছা ফাউন্ডেশন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে বেগম তাহমিনা আলাউদ্দিন বৃত্তি তহবিল, আলহাজ এ জেড এম রেজাই করিম ফাউন্ডেশন, চীনের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নামে চৌএনলাই স্মারক বৃত্তি, আবদুর রব চৌধুরী স্মারক বৃত্তি, হাফিজউদ্দিন ফাউন্ডেশন, সাহেবজাদা সৈয়দ আবু নাসের আলাউদ্দিন বৃত্তি, হালিমা রউফ বৃত্তি, রশিদুল হাসান স্মারক বৃত্তি ট্রাস্ট্র।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-সুইডেন ট্রাস্ট ফান্ড বৃত্তি, আবেদন করবেন যেভাবে

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তা মো. আজাদ হোসেন হাজারী (শিক্ষা-৪) বলেন, মূলত ট্রাস্ট ফান্ডগুলো বন্ধ হওয়ার কারণ হলো ফান্ডে সর্বনিম্ন ৫০ হাজারের কম টাকা থাকা। যদিও এটি লিখিত নিয়ম না। তবুও অলিখিত হিসেবেই এটি দীর্ঘদিন চলে আসছে। আবার অনেক ফান্ডে প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখের অধিক টাকা থাকার পরও সেগুলো বন্ধ রয়েছে। তার কারণ হলো- সেগুলো গোল্ড মেডেল ট্রাস্ট ফান্ড। সেখানে ১০ লাখ টাকা থাকলেও কমই মনে করা হয়। এমন মোট ৩৬টি ফান্ড বন্ধ রয়েছে।

ঢাবিতে নতুন ট্রাস্ট ফান্ড, ১০ লাখের চেক হস্তান্তর

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-হিল বাংলাদেশ শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্ট ফান্ড’ নামের নতুন একটি ফান্ড গঠন করা হয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এ ফান্ড গঠন করা হয়।

সেগুলো চালুর ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সবাইকেই একটি গণ চিঠি পাঠিয়েছি; যেনো তারা ফান্ডে টাকা হস্তান্তর করেন। খুব অল্প কয়েকটি ট্রাস্ট তাদের ফান্ডে টাকা পাঠালেও বাকিরা কোন জবাব দেয়নি। এমনও হয়েছে আমি ফোন দিলে তারা খারাপ ব্যবহার করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও ট্রাস্ট ফান্ডের আহ্বায়ক অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন জানান, ট্রাস্ট ফান্ডগুলো আমরা চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা ইতিমধ্যে তাদের চিঠি পাঠিয়েছি। অল্প কয়েকটি ট্রাস্ট সেটার সদুত্তর দিয়েছে, বাকিরা চুপ থেকেছে। আমরা চেষ্টা করছি, যেনো এগুলোর সাথে অন্যগুলোর সমন্বয় করে এগুলোও চালু করা যায় কীভাবে। এটি করতে পারলে আমাদের ট্রাস্ট ফান্ডের পরিমান বাড়বে এবং শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হবে।

স্বর্ণপদক, সর্বোচ্চ সিজিপিএ, স্মারক বক্তৃতা এবং অসচ্ছলতার কারণে বৃত্তি প্রদান করে থাকে এ ট্রাস্টগুলো। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বেশ কিছু ট্রাস্ট গঠন করা হলেও বর্তমানে প্রায় ৩৬ ট্রাস্টের ফান্ড কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এই ট্রাস্ট ফান্ডগুলো দীর্ঘদিন ধরেই তাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। এর কারণ হলো তারা নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়কে ফান্ড প্রদান করছে না। অনেক সময় দেখা যায়, যারা আগে ফান্ড প্রদান করতো; তারা এখন আর নেই। ফলে নতুন যারা দায়িত্বে এসেছে তারা এ ব্যাপারে যথেষ্ট উদাসীন এবং দিতে অনিচ্ছুকও। আমরা চেষ্টা করছি তারা যেনো আবার তাদের ফান্ড চালু রেখে বৃত্তি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখেন।


সর্বশেষ সংবাদ