ঢাবিতে ঈদের ছুটি শুরু: স্বপ্ন যাবে বাড়ি...

ছুটিতে বাড়ি ফেরা নিয়ে ব্যস্ততা শিক্ষার্থীদের
ছুটিতে বাড়ি ফেরা নিয়ে ব্যস্ততা শিক্ষার্থীদের  © ফাইল ফটাে

“স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার
পথ দেবো পাড়ি তোমার 
কাছে যাবো ফিরে বারে বার।”

গানের লাইনটি আমাদের সবার কাছেই অনেক পরিচিত। অন্তত যারা প্রিয় গ্রাম, প্রিয় ঘর, বাবা মা কিংবা পরিবার ছেড়ে কর্মক্ষেত্রে অথবা পড়াশোনার জন্য দূরে অবস্থান করে তাদেরকে এই লাইনটি যেন গৃহকাতর করে দেয়। আর এই গান বাজিয়েই ঈদের ছুটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হল ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা। 

আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে আজ শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) থেকে আগামী ৩০ এপ্রিলপর্যন্ত টানা ১৫ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে অনেক অনুষদ বা বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা শেষ হয়েছে বেশ আগেই। ফলে শিক্ষার্থীরা পরিবারের সবার সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঈদ যাত্রাও শুরু করেছেন এখনই। 

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের হল ছেড়ে প্রিয় পরিবারের কাছে ফেরার বেশ তোড়জোড় দেখা গিয়েছে। সেহরি খেয়েই বেড়িয়ে গেছেন অনেকেই। দিনের বেলা রাস্তায় যানজট সৃষ্টির আশঙ্কা থেকেই এত ভোরে তাদের ঈদ যাত্রা শিক্ষার্থীদের; এ নিয়ে যেন তাদের ব্যস্ততার কোনো কমতি নেই। তিন চার দিন আগে থেকেই তারা নিউমার্কেট কিংবা অন্যান্য শপিংমল থেকে বাবা-মা, ভাই-বোন কিংবা তাদের পছন্দের মানুষদের জন্য ব্যাগভর্তি জামাকাপড় কিনে নিচ্ছেন। কেউ বা নিজের ব্যাগটাও গোছানো শুরু করেছেন এক দুইদিন আগে থেকেই।

বিভিন্ন হল ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের ছুটি উপলক্ষে আবাসিক হলগুলো খালি হচ্ছে। সবাই বাড়ির পথে পা বাড়িয়েছে। এক রুমে আগে ১০ জন থাকলে এখন ৫-৬ জন হয়ে গেছে। বাড়ির প্রতি শিক্ষার্থীদের এই যে টান সেটা খুব ভালোভাবেই পরিলক্ষিত হয়েছে। তবে আগামীকাল শনিবার (১৫ এপ্রিল) নাগাদ হলগুলো অনেকটাই খালি হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবুও সামনে বিসিএস পরীক্ষা বা বিভিন্ন কারণে কেউ কেউ বাড়ি যাবেন ঈদের ১/২ দিন আগে। আবার হলেই থেকে যাবেন কিছু শিক্ষার্থী। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত অধিকাংশ শিক্ষার্থীই দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের। সুন্দর একটি ভবিষ্যত গড়ার উদ্দেশ্যে পরিবার ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন শিক্ষার্থীরা। ক্লাস-পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন এসব নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয় তাদের। হৃদয়ে লালন করা হাজারো স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতেই তাদের এই বিরামহীন ছুটে চলা। আবার করোনার দুই বছরের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিশ্ববিদ্যালয় ৬ মাসের সেমিস্টারকে ৪ মাসে করায় সেই ব্যস্ততা যেন বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। সে ব্যস্ততা কাটিয়ে উঠতে পরিবারের সাথে ছুটি কাটানোর সেই সুযোগটা করে দিয়েছে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। আর এই সুযোগটি লুফে নিতেও কার্পণ্য নেই শিক্ষার্থীদের।

বাড়ি ফেরার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে দর্শন বিভাগে অধ্যয়নরত জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী তৌফিক তন্ময় বলেন, দীর্ঘ ৪ মাস পর বাড়ি যাচ্ছি; ব্যস্ততা ঠেলে শান্ত-নিবিড় সেই গ্রামীণ নীড়ে ফিরে যাওয়ার অনুভূতি যেন কখনো পুরনো হয় না। প্রতিবার ফিরে যাওয়ার সময় নতুন নতুন উত্তেজনা কাজ করে। মগজ ভর্তি পরিচিত মানুষদের জন্য নানান পরিকল্পনা আর বুক ভর্তি প্রশান্তি নিয়ে যন্ত্রের এই শহর ছেড়ে পালাতে কে না চায়! ব্যস্ত শহর আর এই ব্যস্ত ক্যাম্পাসের ক্লাস-এক্সাম শেষ করে বাড়ি যাওয়ার এই আনন্দ যেন ছোটবেলার ঈদ আনন্দের মতো এখনো রঙিন।

“আবার অন্যদিকে কেউ দীর্ঘক্ষণ হলে অবস্থান করার ফলে বাড়ির প্রতি যেমন একটা টান অনুভব করছেন ঠিক তেমনই ‘সেকেন্ড হোম’ খ্যাত হল ছেড়ে যাওয়ায় গভীর ব্যাথাও অনুভব করছেন অনেকেই। বাসায় যাবার জন্য হল গেট অতিক্রম করতেই মনের অজান্তেই পেছনে আরেকটিবার তাকিয়ে দেখে নিচ্ছেন শত সুখ-দুঃখের স্মৃতিবিজরিত প্রিয় হলকে। হলের প্রতি আবেগ প্রকাশ করতে গিয়ে আপ্লুত হচ্ছেন অনেকেই।”

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নূর ই এহসান (ঊর্ধ্ব) বলেন, আমরা দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছি। এখানে বিভিন্ন ধরণের বিভিন্ন মানসিকতার শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। যারই ফলশ্রুতিতে প্রথম বর্ষের গণরুম থেকেই আমাদের একসাথে পথচলা। তাছাড়া হলের সিনিয়র বা জুনিয়র সবার সাথে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক তৈরী হয়েছে যা অনেকটা আত্মার বাঁধনের মতোই। 

“আমি যখন বাসায় যাই আমি পিছনে ফিরে তাকাই, মনে মনে বলি, বাড়িতে যাচ্ছি আরেকটা বাড়ি (হল) ছেড়ে এবং দ্রুতই ফিরে আসবো বাড়িতেই (হলে)। দীর্ঘদিন হলে থাকায় আমি বাড়ির চেয়েও হলের প্রতি টানটা বেশি অনুভব করি। তাছাড়া পড়াশোনা, টিউশনি বা বিভিন্ন ব্যাস্ততার জন্য দুই ঈদ ছাড়া আমার বাড়ি যাওয়াই হয় না। ফলে বাড়ি যাওয়ার জন্য যেই আকুলতা সৃষ্টি হয় তেমনই এতদিন একসাথে থাকা হলের সময়টাকেও মনে পড়ে অনেক।” 

দীর্ঘদিন পরে বাড়িতে যাওয়ার তর সইছে না অধিকাংশ শিক্ষার্থীর। তাই বিভিন্ন সময় ২-৩ দিনের ছুটি পেলেও অনেকেই বাড়ির পথে পা বাড়ায়। নাড়ির টানে প্রাণের কাছে ফিরতে কার না ভালো লাগে। তাই তো কোন এক অখ্যাত কবি বলেছেন, শত ব্যাস্ততা শেষে বাড়ি ফিরতে পারার মত সুখ বোধহয় পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই।


সর্বশেষ সংবাদ