রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

তিনজনের দ্বন্দ্বে দুই শতাধিক হাসপাতালে, তিন মামলায় আসামি এগারোশো

  © সংগৃহীত

সিটে বসা নিয়ে বগুড়া থেকে রাজশাহীগামী বাসের চালক ও হেলপারের সঙ্গে প্রথমে দ্বন্দ্ব শুরু হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আল-আমীন আকাশ নামের এক শিক্ষার্থীর। তিন জনের এই দ্বন্দ্বকে ঘিরে শুরু হয় হাতাহাতি, ঢিলাঢিলি, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, অগ্নি সংযোগ ও সর্বশেষ পৌঁছেছে গোলাগুলির পর্যায়ে। এঘটনায় এগারোশো জনের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি অজ্ঞাতনামা মামলা করা হয়েছে। 

একপর্যায়ে গত শনিবার (১১ মার্চ) রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকা। প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষে উভয়পক্ষের দুই শতাধিকেরও বেশি আহত হন। যাদের প্রায় সবাই শিক্ষার্থী। ছোট্ট এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ বিশাল সংঘর্ষ যাদের মাধ্যমে শুরু হয়েছে মিলছে না তাদের কোনো হদিস। 

সংঘর্ষ শুরুর সত্য ঘটনা জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী আল-আমীন আকাশের মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল দিয়েও যোগাযোগ করা যায়নি তার সাথে। প্রতিবারই তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তার বন্ধুদের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি প্রতিবেদকের। 

এ বিষয়ে আকাশের বন্ধু আব্দুল মতিন বলেন,  ঘটনার পরে সে নিজেও অপরাধ বোধ করছে। সে জন্য হয়তো আত্মগোপনে আছে। আমরাও তার সাথে কোনোভাবে যোগাযোগ করতে পারছি না।

আরও পড়ুন: রাবির সংঘর্ষের পেছনে যুক্তদের খুঁজে বের করার দাবি শিক্ষকদের

অপরদিকে মূল ঘটনা জানতে বাস চালক ও মালিক শেরেকুলের বাড়িতে গেলে তাদেরকেও পাওয়া যায়নি। তাদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম বা মোবাইল নাম্বার চাইলে দিতে অস্বীকৃতি জানায় তার পরিবার। তবে কিছুক্ষণ পরে বাড়ি থেকে একজন বেরিয়ে এসে ঘটনার বর্ণনা করে বলেন, ওইদিন বাসে ক্যাম্পাস শিক্ষার্থী ও অন্য এক মহিলা পাশাপাশি বসেছিল। পথি মধ্যে আরেকটা মহিলা যাত্রী উঠলে দুইজন মহিলাকে একসাথে বসতে দিয়ে শিক্ষার্থীকে সামনের সিটে বসার জন্য অনুরোধ করা হয়। এটা নিয়ে হেলপারের সাথে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। পরে বিনোদপুর থেকে ওই শিক্ষার্থী তার সহপাঠীদের জড়ো করে ড্রাইভারকে মারধর করে। তবে তার সাথে সাক্ষাৎ শেষে আসার সময় এলাকাবাসী জানান উনি নিজেই বাস মালিক শেরেকুল।

তবে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের নেপথ্যে কারা রয়েছে? কারা এই বৃহত্তর আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে? কারাই বা নেতৃত্ব দিয়ে রেল লাইনের উপর চারুকলার ডামি পুড়িয়ে রেলের স্লিপার উঠিয়েছে তা অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ঘটনার শুরুতে আল-আমীন আকাশ ও তার বন্ধুসহ ১০-১৫ জন শিক্ষার্থীদের সাথে বাস চালক ও স্থানীয়দের সাথে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তারপর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়াসহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে যায়। 

পরে সেখানে গোলাম কিবরিয়ার নেতৃত্বে কয়েকজন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধে। এক পর্যায়ে স্থানীয়দের ধাওয়া খেয়ে সরে আসতে বাধ্য হয় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ কর্মীদের এই সংঘর্ষ সাধারণ ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ’ হিসেবে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এর পরপরই শুরু হয় শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ।

ঘটনার সূত্রপাত তিনজন দিয়ে হলেও সংঘর্ষের ফলে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর শরীর ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায় শটগানের পিলেটের আঘাতে। এদের মধ্যে তিন জন শিক্ষার্থীর এক চোখের দৃষ্টি আজীবনের জন্য নিভে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসক। গুলির পিলেটের আঘাতে তাদের মধ্যে কারো চোখের কর্নিয়া নষ্ট হয়ে গেছে, কারো পাচকতন্ত্র ছিদ্র হয়ে গেছে। 

সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৫০০, মতিহার থানা পুলিশ ৩০০ ও রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ ৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা করেছে। এ ঘটনায় মোট এক হাজার একশো জনের বিরুদ্ধে অজ্ঞাতনামা মামলা হয়েছে।

যাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তার আত্মগোপনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম. তারেক নূর বলেন, তার আত্মগোপনের বিষয়টি আমাদের কাছে সন্দেহজনক। ছোট্ট ঘটনার সাথে তার সহপাঠীদের সম্পৃক্ত করে কেন এত বড় সংঘর্ষে রূপ দিয়েছে তা ক্ষতিয়ে দেখা দরকার। 

আহত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে ৩ জন শিক্ষার্থী রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার মধ্যে ২ জনকে আজকে ছুটি দেওয়া হবে। আর যে ৪ জন ছাত্রকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তাদের জন্য ৩ সদস্যবিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড বসানো হয়েছিল। তারা ৩টি টেস্ট দিয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।


সর্বশেষ সংবাদ