ঢাবিতে ক্রিকেট খেলা নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ১৮

হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান
হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তঃবিভাগ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনালকে কেন্দ্র করে মার্কেটিং ও সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই বিভাগের অন্তত ১৮ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। সোমবার (৯ জানুয়ারী) বেলা সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। 

জানা যায়, টুর্নামেন্টে প্রথমে ব্যাট করতে নামে সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট। সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৯ ওভার ৩ বলে ১০ উইকেট হারিয়ে ১৪৯ রান সংগ্রহ করে। অন্যদিকে মার্কেটিং বিভাগ ৯ ওভার ২ বলে ১ উইকেট হারিয়ে ৭২ সংগ্রহ করার পরপরই দুদলের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। ফলে খেলা স্থগিত রাখা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, প্রথমে মার্কেটিং বিভাগের একজন ওপেনার বোল্ড হলে তা মানতে চায়নি। তারপর এই ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে একদল আরেকদলকে স্লেজিং ও বডি শেমিং করে। পরে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে মার্কেটিং বিভাগের ৪ জন ও বাকি ১৬ জন সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী।

সমাজকল্যাণ বিভাগের আহত শিক্ষার্থীরা হলেন- স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব শান্ত, মামুন রেজা, জীম নাজমুল, মিনহাজুল ইসলাম ফাহিম; চতুর্থ বর্ষের নাঈম হাসান অয়ন, কৃপা দাস, ফারহান মুরসালিন অলিভ, জামিল হোসেন জীম; তৃতীয় বর্ষের মশিউর রহমান মুন্না, রিশাদ সরকার, এনামুল হক পলাশ, অয়ন সমাদ্দার, মাসফিউর রহমান; দ্বিতীয় বর্ষের তপন; প্রথম বর্ষের মেহেদী হাসান ও রেদোয়ান। এদের মধ্যে নাজমুস সাকিব শান্ত, জীম নাজমুল, মশিউর রহমান মুন্না ও মেহেদী হাসান গুরুতর আহত হয়েছেন।

অন্যদিকে মার্কেটিং বিভাগের ৪ জন হলেন- ব্যাচ ২৭-এর মো. দেলোয়ার হোসেন, জুলফিকার মাহমুদ মুন্না, ইমতিয়াজ হোসেন ও ব্যাচ ২৬-এর আরাফ মাহমুদ।

সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের আহত শিক্ষার্থী অয়ন সমাদ্দার জানান, জীম নাজমুল ভাইকে যখন মারধর করছিল। তখন তাকে রক্ষা করতে গিয়ে হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হই। আমাদের আহত খেলোয়াড়রা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। তবে শান্ত ভাই এখনও ঢাবি মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি আছে।

সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের আহত আরেক শিক্ষার্থী মিনহাজুল ইসলাম ফাহিম বলেন, মাঠের বাইরে মারামারি লাগলে আমি মীমাংসা করতে যাই। তখন মার্কেটিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী আমার হাতে চেয়ার দিয়ে আঘাত করে। এছাড়াও আমাদের বিভাগের শান্ত নামের একজনকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে। তাৎক্ষণিক তার মাথা ফেটে রক্ত ঝরে।

মার্কেটিং বিভাগের আহত শিক্ষার্থী আরাফ জানান, দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি স্লেজিং হওয়ার পর আমরা চাচ্ছিলাম খেলাটা চলুক। কিন্তু ওরা খেলাটা কনটিনিউ না করার জন্য ঝামেলা করে। ওরা একপর্যায়ে ৪/৫ মিলে কয়েকজনকে মারছে। তখন আমাদের দেলোয়ার নামে একজনকে ১০/২০ জন ঘেরাও করে মারছে। তখন দেলোয়ারকে সেইভ দিতে গিয়ে আমি মারধরের শিকার হই। তারপর আমাদের দুজনকে ছেড়ে মুন্না নামের একজনকে মারছে।

মার্কেটিং বিভাগের আহত আরেক শিক্ষার্থী জুলফিকার মাহমুদ মাহমুদ জানান, আমি আমার বন্ধুকে সেইভ করতে গিয়ে মারধরের শিকার হই। সমাজকল্যাণের ৪/৫ মিলে আমার উপর হামলা করে। নাকে-মুখে কিল-ঘুষি দেয়। তখন আমার ঠোঁট ফেটে যায়।

এবিষয়ে মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. এ. বি. এম. শহীদুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন কেটে দেন। 

এ ব্যাপারে সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. গোলাম আজম বলেন, আমি খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখানে প্রায় ০৫ ঘন্টা ছিলাম। আহতদের মধ্যে কারো কপাল ফাটছে, কারো হাত ফাটছে, কারো বা নাক ফাটছে এবং নানান সমস্যা হয়েছে। যাদের অবস্থা গুরুতর তাদেরকে ঢাবি মেডিকেল সেন্টারে রেখে এসেছি। আর বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে। 

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, খেলার মাঠ হলো সম্প্রীতির, বন্ধুত্বের  আমুদের ও আনন্দের। এরকম নৃশংস আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এব্যাপারে নিঃসন্দেহে ব্যবস্থা গৃহীত হবে।


সর্বশেষ সংবাদ