শীতেও অতিথি পাখি শূন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

পুকুর ভরাট করে ফেলায় পরিযায়ী পাখির আনাগোনা খুব একটা চোখে পড়ে না
পুকুর ভরাট করে ফেলায় পরিযায়ী পাখির আনাগোনা খুব একটা চোখে পড়ে না  © টিডিসি ফটো

পাখিদের অঘোষিত অভয়ারণ্য খ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাস। বছর জুড়ে নানা ধরনের নানা রঙের পাখির কুজনে মুখরিত থাকে ক্যাম্পাস। বিশেষ করে শীত আসলে পরিযায়ী পাখির আগমন ক্যাম্পাসে যোগ করে নতুনমাত্রা। প্রতিবছর নভেম্বরের শুরুতেই শীত আসতে না আসতে ক্যাম্পাসে ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে শুরু করে পরিযায়ী পাখি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বছর নভেম্বর শেষ হয়ে ডিসেম্বর গড়ালেও ক্যাম্পাসে পরিযায়ী পাখির আনাগোনা একেবারেই শূন্যের কোটায়। কারণ হিসেবে তারা অপরিকল্পিত উন্নয়নকেই দুষছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া, তাপসী রাবেয়া, রহমতুন্নেছা হলের পেছনের চামপঁচা পুকুর ভরাট করে শেখ হাসিনা হল নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিবছর পরিযায়ী পাখি এই পুকুরেই জলকেলি আর খুনসুটিতে মেতে উঠতো। কিন্তু পুকুরটি ভরাট করায় পরিযায়ী পাখির আনাগোনা খুব একটা চোখে পড়ে না। ক্যাম্পাস থেকে পাখির সংখ্যাও দিন দিন কমে যাচ্ছে।

এছাড়া শহীদ শামসুজ্জোহা হলের পাশের পুকুরগুলোতেও পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। কিন্তু প্রতিবছর এসব পুকুরগুলোতে সুদূর সাইবেরিয়া বা হিমালয়ের উত্তরাঞ্চল থেকে ঝাঁকবেঁধে উড়ে আসত পরিযায়ী পাখি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব পরিযায়ী পাখি আসতো তাদের মধ্য অধিকাংশ পাখিই হাঁস জাতীয়। ছোট সরালিই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক আসত। বাকিদের মধ্যে থাকত বড় সরালি, ল্যাঞ্জা হাঁস, খুন্তে হাঁস, ভূতি হাঁস ও ঝুঁটি হাঁস ইত্যাদি। এছাড়া আছে মানিক জোড়, ধলা মানিক জোড়। এ বছর পরিযায়ী পাখি কম আসায় দুঃখ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন: 'পাখির স্বর্গে' কেন কমে যাচ্ছে অতিথি পাখি?

তাপসী রাবেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী পপি রাজবংশী শ্রাবন্তী বলেন, আগের বছরগুলোতে যে পরিমাণে অতিথি পাখি ক্যাম্পাসে এসেছিল, সেই হিসেবে এবছরে তা খুবই কম। প্রতিটি শীতের সকালে পরিযায়ী পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত থাকতো পুকুরগুলো।

শ্রাবন্তী বলেন, পুকুরে দেখতাম শত শত পরিযায়ী পাখি। তাদের স্বচ্ছ পানিতে ডানা ঝাপটানি, পালকের ভেতরে মুখ গুঁজে মিষ্টি রোদ পোহানো আমাকে মুগ্ধ করত। কিন্তু নতুন করে হল নির্মাণ করতে পুকুর ভরাট করায় পরিযায়ী পাখিদের ভীষণ মিস করছি।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ডিপ ইকোলজি এন্ড স্নেক রেসকিউ ফাউন্ডেশন নামের সংগঠনের রাবি ক্যাম্পাস এম্বাসাডর মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নাজমুল হোসেন বলেন, এবছর অতিথি পাখিদের আনাগোনা খুবই কম। এই পাখিগুলো না আসার কারণ হলো এদেরকে বিরক্ত করতো কিছু বহিরাগত। প্রতিনিয়ত পুকুরের ঝোপের আশেপাশে বহিরাগতরা বসে বসে মাছ ধরে। পাখিদের এতো কাছে মানুষের উপস্থিতি থাকলে ভয়ে চলে যায়। এদের যথাযথ নিরাপদ বাসস্থান দেওয়া আমাদেরই দায়িত্ব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, নিরাপদ আশ্রয় ও পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার পাওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিযায়ী পাখিরা আসত। কিন্তু এবার একটু ভিন্ন চিত্র লক্ষ্য করছি। ভবন নির্মাণের জন্য প্রতি মুহূর্তে এখানে শব্দ তৈরি হচ্ছে। লোকজনের অবাধ যাতায়াত চলছে। এমন ভীতিকর পরিস্থিতিতে তারা এখানে না এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস খ্যাত নারিকেলবাড়িয়ায় আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে বহু অতিথি পাখি এসেছে। 

পুকুর ভরাটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য আমরা নতুন দুইটি হল ও একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণ করছি। পুকুর ভরাট করা ছাড়া তো আমাদের কোনো উপায় নাই। অবকাঠামো উন্নয়ন আর পরিবেশের উন্নয়ন দু’টি বিপরীতমূখী। ফলে পুকুরটি ভরাট করতে হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence