টিএসসিতে শিক্ষার্থী-বহিরাগতদের ভীড়ে দেখা মেলে না শিক্ষকদের

টিএসসি
টিএসসি   © ফাইল ফটাে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র নামে পরিচিত ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মেলবন্ধনের একটি মাধ্যম হিসেবে এটি ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন আলোচনা এবং পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়ন ও বোঝাপড়া তৈরিই মূলত এই কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য।

তবে যে ছাত্র-শিক্ষক্ষের মেলবন্ধেনের উদ্দেশ্যে এর প্রতিষ্ঠা, বর্তমানে তা একবারেই অগ্রাহ্য হয় এখানে।  শিক্ষার্থী এমনকি বহিরাগতদের পদাচরণা থাকলেও টিএসসিতে আর যেতে চান না শিক্ষকেরা। তারা আর এখানে আসতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না বলেই জানা গেছে। ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র নাম হলেও এখানে শিক্ষকরা বিশেষ কোনো উপলক্ষ ছাড়া যান না।

এক সময় ছাত্র ও শিক্ষকদের নিত্যদিনকার মিলনমেলা ছিল এই টিএসসি। ক্লাসের ফাঁকে আড্ডা কিংবা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মুক্ত মতামত চর্চার আসর জমে উঠত এখানে। দেশের যেকোনো সঙ্কটপূর্ণ মুহূর্তে ছাত্র-শিক্ষক মিলে আলোচনার মাধ্যমে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হতো এখান থেকেই। কিন্তু দিনে দিনে সেই ঐতিহ্য ভুলতে বসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাণকেন্দ্রটি। গত এক দশকে এখানে শিক্ষকরা আসা প্রায় বন্ধই করে দিয়েছেন।  সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ছাত্র-শিক্ষক মিলে করার কথা থাকলেও তাতে শুধু শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিই দেখা যায়।

এর কারণ হিসেবে অনেকে মনে করেন, ধূমপানমুক্ত এলাকা লেখা থাকলেও সেখানে ধূমপানের ঘটনা ঘটে প্রকাশ্যে অহরহ। অনিয়ন্ত্রিতভাবে বহিরাগতরা প্রবেশ করে। মারামারি, ধূমপান এমনকি মাদকসেবনের অভিযোগও রয়েছে টিএসসি এলাকায়। 

গত ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর একটি কর্মসূচিতে অংশ নিতে টিএসসি যান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া। তিনি উপস্থিত থাকাবস্থাতেই তুচ্ছ বিষয় নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন কয়েকজন শিক্ষার্থী। এতে দ্ইুজন আহত হন। পরে তার হস্তক্ষেপে বিষয়টির সমাধান করা হয়। এ ছাড়াও গত ১২ অক্টোবর টিএসসির ছাদ থেকে প্রক্টরিয়াল টিমের সহায়তায় আপত্তিকর অবস্থায় আটক করা হয় জগন্নাথ হল ও রোকেয়া হলের দু’জন শিক্ষার্থীকে। পরের দিন তারা প্রক্টর অফিসে গিয়ে বিষয়টিকে সমাধান করেন।

দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, কয়েকটি গ্রুপ নিয়মিত টিএসসিতে এসব কর্মকাণ্ড করেন। এসব ছাড়াও অনাকাক্সিক্ষত রাজনৈতিক জটলাসহ আরো কয়েকটি কারণে শিক্ষকরা টিএসসি বিমুখ হয়েছেন বলে মনে করেন অনেকে।

টিএসসিতে না যাওয়ার কারণ নিয়ে কয়েকজন শিক্ষক জানায়, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের অব্যবস্থাপনার কারণে সেখানে সুষ্ঠু পরিবেশ থাকে না। তাই অনেকে যান না।

পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, টিএসসিতে অনেক সময় দেখা যায় অনেকে আপত্তিকর অবস্থায় বসে থাকে। যেটা আসলে আমাদের শিক্ষকদের জন্য একটু বিব্রতকর। আমরা যে সেখানে যাবো তার উপযুক্ত পরিবেশ সেখানে থাকে না। সবসময়ের জন্য বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের রাজনৈতিক জটলা লেগেই থাকে। আমরা যে সেখানে ঘুরতে যাবো সেই পরিবেশটাও থাকে না।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ টি এম শামসুজ্জোহা বলেন, টিএসসির পরিবেশটা অতটা পজিটিভ নয়। শিক্ষকদের বসার জন্য যে শিক্ষক লাউঞ্জ আছে, অনেক সময় দেখা যায় তাতে বহিরাগতরা বসে। তারা কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় এখানে আসে। সেখানকার যারা কর্মচারী থাকে তারা এলে তখন অসহায় হয়ে পড়ে। দুঃখের সাথে বলতে হয়, অনেক সময় সাংবাদিকদেরও সেখানে বসে থাকতে দেখা যায়। ফলে শিক্ষকরা তো সেখানে কমফোর্ট ফিল করবে না। 


সর্বশেষ সংবাদ