ঢাবি ক্যাম্পাসে ‘উদ্বাস্তু’ আতঙ্ক

ঢাবি
ঢাবি   © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে (ঢাবি) ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ বলা হলেও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় যেন তার অতীতের সমস্ত জৌলুস হারাতে বসেছে। একদিকে যেমন র‍্যাংকিংয়ে অবনতি অন্যদিকে ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ ক্রমশই বিঘ্নিত হচ্ছে। বিকেল হলেই বসে যেন এখানে মেলা বসে। ক্যাম্পাসে যেখানে সেখানে অবৈধ ভাসমান দোকান। রাত হলেই ভাসমান, নেশাগ্রস্ত আর উদ্বাস্তুদের শরণার্থী শিবিরে পরিণত হয় ক্যাম্পাস এলাকা। 

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, হাকিম চত্বর, লাইব্রেরির সামনে, রোকেয়া হলের গেটের সামনে প্রতিদিনই বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ দোকান বসে। এসব দোকানে চা-সিগারেট, কলা–বিস্কুট, চটপটি, ফুচকা, ভেলপুরি, সিঙাড়া, পেঁয়াজু, শরবত, চপ, মোমোসহ নানা ধরনের মুখরোচক খাবার বিক্রি হয়। এসব দোকানকে কেন্দ্র করে হাজারো মানুষের ভিড় জমে। বহিরাগতদের ভিড় লেগেই থাকে এই দোকানগুলোতে। 

সন্ধ্যা হলেই ক্যাম্পাস যেন উদ্বাস্তু, নেশাখোরদের আবাসস্থলে পরিণত হয়। টিএসসি, শহীদমিনার, কার্জন, বাংলা একাডেমি এলাকা, ফুলার রোড, কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি, সমাজ বিজ্ঞান চত্বর, আইএমএল’র সম্মুখের যাত্রী ছাউনি, রোকেয়া হলের পাশের ফুটপাতসহ ক্যাম্পাসের যেকোনো ফুটপাতেই ভাসমান নেশাগ্রস্তদের অবাধ বিচরণ দেখা যায়। অনেকে তাদের পরিবার নিয়ে সংসার পেতে বসেছে ক্যাম্পাস এলাকায়। তাদের যত্রতত্র মল-মুত্র ত্যাগ করে ক্যাম্পাসের পরিবেশ অস্বস্তিকর করে তুলেছে। এদের দ্বারা বিভিন্ন সময় নারী শিক্ষার্থীরা হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আনিকা আফরিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, টিউশন থেকে আসতে রাত হয়ে যায়। শাহবাগ থেকে হলে আসতে এখন রীতিমত ভয়ই লাগে। শাহবাগ থেকে রাজু ভাস্কর্য পর্যন্ত এলাকাটি পুরাই অন্ধকার থাকে। যেকোনো সময়ই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যেতে পারে। নেশাগ্রস্থদের এইসব জায়গায় নেশা করে পড়ে থাকতে দেখি। আমরা নারী শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।

চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রেজাউল ইসলাম বলেন, এইসব উদ্বাস্তুদের ক্যাম্পাসে সব জায়গায় তাদের দেখা যাচ্ছে। ক্যাম্পাসে চলাচল অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। ফুটপাত ব্যবহার করা যায় না। এ দিকে নজর দেওয়া উচিত। 

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘মুক্ত ক্যাম্পাস হওয়ায় এইসব ভাসমান মানুষ বিভিন্ন জায়গা থেকে চলে আসছে। এদের বলা হলেও এরা শুনে না। আমাদের প্রক্টরিয়াল টিম এদের সরিয়ে দিচ্ছে। কখনও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় তাদের হাতে কয়েকজনকে হস্তান্তর করা হচ্ছে। যাদের চিকিৎসার দরকার তাদের মেডিকেলে পাঠানো হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অত্যধিক লোকজনের কারণে এরা খাবার দাবার কিছু পায়। তাই এই ভাসমান মানুষগুলো ক্যাম্পাসে আসছে। সকলের বুঝা উচিত এটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, কোন পার্ক না।’ 

এই সমস্যার সমাধান করার জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।

সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘উদ্বাস্তুদের বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে অবগত করেছি। এটি মন্ত্রণালয় ও সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব। এইসব মানুষদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সম্প্রতি মন্ত্রী, মেয়র এবং পুলিশকে চিঠি লিখেছি।’


সর্বশেষ সংবাদ