শালবন অনাথালয়ে বেড়ে উঠছে দুর্গম অঞ্চলের বৌদ্ধ শিশুরা

শালবন অনাথালয়ে বেড়ে উঠছে দুর্গম অঞ্চলের বৌদ্ধ শিশুরা
শালবন অনাথালয়ে বেড়ে উঠছে দুর্গম অঞ্চলের বৌদ্ধ শিশুরা  © টিডিসি ফটো

কুমিল্লা জেলার কোটবাড়ির অন্তর্গত শালবন বিহার বহন করছে ৭ম শতাব্দীর ঐতিহ্য। একসময় এই জনপদ জুড়ে ছিল বৌদ্ধ ভিক্ষু ও সন্ন্যাসীদের আনাগোনা। ধারণা করা হয়, সেসময় এই জনপদ ছিলো এ অঞ্চলের প্রধান শিক্ষানগরী। সময়ের পরিক্রমায় নিঃশেষ হয়ে যাওয়া এই প্রাচীন নগরীতের আবারো বৌদ্ধদের সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনছে শালবনের কোলঘেঁষে তৈরি হয়েছে নব শালবন।

এখানে রয়েছে—বৌদ্ধদের প্যাগোডা। বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী অনাথ ও দুস্থ শিশুদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে ‘শালবন বিহার অনাথালয়।’

সদা হাস্যোজ্জ্বল এখানকার বৌদ্ধ শিশুদের কারো নেই মা, কারো নেই বাবা। আবার কারো কারো বাবা-মা থাকলেও পরিবারের ভরণপোষণের অক্ষমতায় এখানে ছুটে এসেছেন। বান্দরবন, রাঙামাটি কিংবা খাগড়াছড়ির মতো দুর্গম অঞ্চলে জন্ম নেওয়া এসব শিশুরা বছরের পর বছর পার করছেন পিতামাতা আদর-স্নেহ ছাড়া। ধর্মীয় দীক্ষা ও শিক্ষার আলোয় নিজেকে আলোকিত করে তুলতেই এখানে যেন তাদের এই নিরন্তর প্রচেষ্টা।

১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই অনাথালয়টি। সরকার নিবন্ধিত এই প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ১০০ জনের মতো বৌদ্ধ শিশু প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণ করে আসছে। যা বাংলাদেশ টেলিভিশনের ত্রিপিটক পাঠক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী শীলভদ্র মহাথেরো হাতে গড়া একটি প্রতিষ্ঠান।

ধারণা করা হয়, পুরাতন শালবন বিহারে একসময় বৌদ্ধ ভিক্ষুরা থাকতেন এবং সেখানেই তারা ধর্মচর্চা করতেন। পুরাতন শালবন বিহারের যে ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ছিল তা যেন বৌদ্ধদের লোক সমাগমের মাধ্যমে আবার ফিরে আসে, সেই প্রচেষ্টা থেকেই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক লে. কর্নেল আকবর সার্বিক সহায়তা করে আসছেন।

অনাথলয়টির প্রতিষ্ঠাতা শীলভদ্র মহাথেরো জানান, ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে কর্নেল আকবরের কাছে দুই বিঘা জমি আবেদন করেন তিনি। আবেদনের প্রেক্ষিতে জমি দান করেন তিনি। পরে ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। সেই বছরই প্রথম কঠিন চিবরদান শুরু হয় এখানে। পরে ১৯৯৮ সালে সরকার কর্তৃক নিবন্ধন লাভ করে প্রতিষ্ঠানটি। শুরুতে প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেন তিনি।

প্রতি শুক্রবার এখানে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের। বাকি দিনগুলোতে এখানে শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের পড়াশোনা করে থাকেন। তাদের অধিকাংশের বাড়ি পার্বত্য চট্টগ্রাম হওয়ায় নতুন করে বাংলা ভাষা শেখাতে হয় তাদের। পড়াশোনা করতে পারে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। পরবর্তীতে আরও পড়াশোনা করতে চাইলে উচ্চশিক্ষার জন্য সহযোগিতাও করে থাকেন তারা।

মোট ১০০ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫২ জনের জন্য অর্থ সাহায্য দিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকার। বাকি বৌদ্ধ শিশুদের ব্যয়ভার নির্বাহের জন্য প্যাগোডার দর্শনার্থীদের কাছ থেকে টিকেটের মাধ্যমে অর্থ আদায় করেন তারা। সপ্তাহব্যাপী তাদের জন্য ডাল-সবজির ব্যবস্থা থাকলেও প্রতি শুক্রবার মাছ-ডিম দিয়ে থাকেন তারা।

এদিকে, বৌদ্ধ শিশুদের ধর্মীয় কাজ সম্পাদনের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে থাইল্যান্ডের বিভিন্ন সন্ন্যাসী ও দাতাদের সহযোগিতায় প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্যাগোডা নির্মাণ করা হয়। পুরাতন শালবনের ঐতিহ্য রক্ষার্থেই এমন আয়োজন বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

পরে ২০১৯ সালে এটির উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী পরিকল্পনা আ হ ম মোস্তফা কামাল। এতে দেশে-বিদেশের অসংখ্য বৌদ্ধ ভিক্ষু ও বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা ভিড় জমান। বাংলাদেশের মধ্যে এমন প্যাগোডা খুবই কম রয়েছে বলে জানিয়েছেন শীলভদ্র। সম্পূর্ণ পিতলের তৈরি এই প্যাগোডা উচ্চতা সব মিলিয়ে প্রায় ৭০ ফুট।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence