একটানা কত সময় হেডফোন ব্যবহারে ক্ষতি নেই, ভলিউম কত থাকা উচিত? 

হেডফোনে নারী
হেডফোনে নারী  © সংগৃহীত

হেডফোন, ইয়ারফোন বা এয়ারপডস আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। গান শোনা, ভিডিও দেখা, অনলাইন ক্লাস কিংবা অফিসের মিটিং সবকিছুতেই হেডফোনের ব্যবহার বেড়েছে বহুগুণ। তবে দীর্ঘসময় বা অসচেতনভাবে হেডফোন ব্যবহার কানে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যে মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। চলুন জেনে নিই হেডফোন ব্যবহারে যেসব সচেতনতা অবলম্বন করবেন:

হেডফোন একটানা কত সময়, ভলিউম কত?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেকে হেডফোনে উচ্চ শব্দে গান শুনে থাকেন। কিন্তু এতে কানের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। ৬০-৬০ নিয়ম মানা জরুরি। অর্থাৎ সর্বোচ্চ শব্দমাত্রার ৬০ শতাংশের বেশি ভলিউম না রাখা উচিত। একটানা সর্বোচ্চ ৬০ মিনিটের বেশি ব্যবহার না করা উচিত। টানা কয়েক ঘণ্টা হেডফোন ব্যবহার কানের ভেতরে চাপ সৃষ্টি করে। ফলে শ্রবণশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নাক-কান-গলা ও হেড-নেক সার্জারি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এ এফ মহিউদ্দিন খানের মতে, একটানা দীর্ঘ সময় হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহার করলে একসময় কানে অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে থাকে। কান চুলকায়, কান ভারী বোধ হয়। দীর্ঘদিন এভাবে চললে ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি কমে আসতে পারে। 

উচ্চ মাত্রায় অল্প সময় শুনলেও ঘটতে পারে এই বিপদ। তবে ঠিক কত দিন বা কত সময় ধরে এসব অনুষঙ্গ ব্যবহার করলে এমন ক্ষতির শিকার হবেন আপনি, তার কিন্তু কোনো সোজাসাপটা জবাব নেই। কারণ, সবার কানের পর্দা এক রকম পুরু না। কারও বেশ পুরু, কারও আবার বেশ পাতলা।

তার মতে, হেডফোন বা ইয়ারফোন নিরাপদভাবে ব্যবহার করা যায় কেবল নির্দিষ্ট মাত্রার শব্দ শোনার জন্য। সেটা মাঝেমধ্যে। অর্থাৎ, কেবল প্রয়োজনের সময়। জরুরি না হলে এগুলো ব্যবহার না করাই ভালো। আর যখনই এসব অনুষঙ্গ ব্যবহার করা হোক না কেন, শব্দের মাত্রা রাখতে হবে হালকা। সারা দিন এক-দুই ঘণ্টার বেশি সময় হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহার না করাই ভালো। তা ছাড়া প্রতি আধা ঘণ্টা পর মিনিট দশেকের বিরতি দেওয়াও ভালো অভ্যাস। 

পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
হেডফোন নিয়মিত পরিষ্কার না করলে কানে জীবাণু প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তাই সময়মতো পরিষ্কার করা জরুরি।

শেয়ার না করা 
অনেকেই বন্ধু বা সহকর্মীর সঙ্গে হেডফোন শেয়ার করেন, যা জীবাণু ছড়ানোর অন্যতম কারণ। তাই হেডফোন ব্যক্তিগত ব্যবহারের জিনিস হিসেবেই রাখা উচিত। বন্ধুদের সাথে এটি শেয়ার না করার চেষ্টা করবেন।

সঠিক ধরন বেছে নেওয়া
বাজারে অনেক ধরনের হেডফোন রয়েছে। সঠিকটি ব্যবহার না করলে কানে ব্যাথা হওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষতি হতে পারে। কানে ঢোকানো ইয়ারফোনের পরিবর্তে ওভার-ইয়ার বা অন-ইয়ার হেডফোন তুলনামূলক নিরাপদ।

শব্দদূষণ এড়াতে সচেতনতা
গণপরিবহন বা জনসমাগমস্থলে হেডফোন ব্যবহার করার সময় ভলিউম বাড়ানো অনেকেই অভ্যাসে পরিণত করেন। এটি কানের জন্য ক্ষতিকর এবং চারপাশের শব্দ শুনতে না পাওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকিও তৈরি হয়।

কানের ইনফেকশন
ইন-ইয়ার হেডফোন বেশি ব্যবহার করলে কানে ঘাম জমে ফাঙ্গাল বা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হতে পারে।

মাথাব্যথা ও মনোযোগের ঘাটতি
ওভার-দ্য-হেড হেডফোন ভারী হলে অনেকক্ষণ ব্যবহারে মাথা ও ঘাড়ে চাপ সৃষ্টি করে। এছাড়া সবসময় হেডফোন কানে রাখলে বাইরের পরিবেশের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, অতিরিক্ত ভলিউমে হেডফোন ব্যবহার করলে হঠাৎ করেই শ্রবণশক্তি হারানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাই এটি ব্যবহারে সচেতন না হলে মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।


সর্বশেষ সংবাদ