ডিএনএ টেস্ট কীভাবে করা হয়?
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৫, ১০:১৭ PM , আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৪০ AM
বিমান দুর্ঘটনা বা ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরে শরীরের চিহ্ন যখন মুছে যেতে বসে, তখন শেষ ভরসা হয় ডিএনএ পরীক্ষা। কারণ প্রত্যেক মানুষের ডিএনএ-ই একেবারে আলাদা, ঠিক যেমন আলাদা তার আঙুলের ছাপ। চুল, ত্বক, লালা, রক্ত কিংবা দাঁতের গোড়া এমনকি পোশাক বা টুথব্রাশেও থেকে যেতে পারে ডিএনএ’র ছাপ। ফরেনসিক বিজ্ঞানের এই বিপ্লব ঘটেছিল মাত্র কয়েক দশক আগে, আর এখন তা অপরাধ তদন্ত, পিতৃত্ব নির্ধারণ কিংবা অজ্ঞাতনামা মরদেহ শনাক্তে নির্ভরযোগ্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই প্রযুক্তিই আজ ভরসা হয়ে উঠছে উত্তরার ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের শনাক্ত করার কাজে।
ডিএনএ কি?
ডিএনএ বা ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড হলো আমাদের বংশগতির মূল ভিত্তি। মানুষের শরীরের প্রতিটি কোষেই থাকে এই ডিএনএ। এটি এক ধরনের জৈবিক কোড, যা বলে দেয় আমরা কার সন্তান, আমাদের চোখের রং কেমন হবে, গায়ের গড়ন, এমনকি কিছুটা স্বভাবও। মানুষের শরীরে মোট ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম থাকে। প্রতিটি ক্রোমোজোমে থাকে হাজার হাজার জিন, প্রায় ২০,০০০টি। এই জিনের নির্দিষ্ট বিন্যাসই একজন মানুষকে অন্য সবার থেকে আলাদা করে তোলে। জিন গঠিত হয় ডিএনএ দিয়ে।
ডিএনএ পরীক্ষা কীভাবে হয়?
ডিএনএ পরীক্ষার জন্য প্রথমে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এটি হতে পারে- লালা, চুলের গোড়া, ত্বকের কোষ, রক্ত, ব্যবহার করা টুথব্রাশ বা পোশাক। এরপর পরীক্ষাগারে নমুনা থেকে ডিএনএ আলাদা করে সেটিকে বিশেষ পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত দুটি পদ্ধতি হলো: পিসিআর (Polymerase Chain Reaction) এবং ডিএনএ সিকোয়েন্সিং।
তবে অপরাধ তদন্তে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলো এসটিআর (Short Tandem Repeat) এনালাইসিস। এতে কিছু নির্দিষ্ট ‘ডিএনএ মার্কার’ পরীক্ষা করে শনাক্ত করা হয় ব্যক্তি বা আত্মীয়তা।
প্রথমে পরিবারের লোকজনের দেহ থেকে লালা, চুল, ত্বকের কোষ অথবা তাঁদের ব্যবহার করা চিরুনি, টুথব্রাশ, পোশাক থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এ বার সেই নমুনার সঙ্গে মৃত বা নিহত ব্যক্তির দেহাংশ থেকে নেওয়া নমুনা মিলিয়ে দেখা হয়। জিন বা ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) বংশগতির একক। শরীরের প্রতি কোষে এই ডিএনএ রয়েছে। প্রজননের সময়ে বাবা-মায়ের কাছ থেকে এই জিন ছেলেমেয়েদের মধ্যে চলে আসে। জিন থাকে ক্রোমোজোমে, একের পর এক সাজানো। মানুষের এক একটা ক্রোমোজ়োমে প্রায় ২০,০০০ জিন রয়েছে। এই জিনই নির্ধারণ করে কোনও প্রাণীকে কী রকম দেখতে হবে, তার স্বভাব কেমন হবে, কী ভাবে জীবনধারণ করবে ইত্যাদি। কাজেই জিনের গঠন ও বিন্যাস দেখেই সেই ব্যক্তির পরিচয় জানা সম্ভব।
ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োগ
ডিএনএ পরীক্ষা কেবল পিতৃত্ব নির্ধারণ বা পারিবারিক সম্পর্ক যাচাইয়ের জন্য নয়, এটি অপরাধ তদন্তেও অপরিহার্য। ধর্ষণ, খুন, বা গুম ডিএনএর ছায়া থাকে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার পেছনে। অনেক সময়ই অপরাধী এমনভাবে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় যে তার কোনো পরিচয়ই জানা যায় না। কিন্তু রক্ত, ঘাম, চুল বা ত্বকের মৃত কোষের সামান্য ছোঁয়াতেই ধরা পড়ে তার ডিএনএ, যা বিজ্ঞানীদের হাতে তুলে দেয় অপরাধের চাবিকাঠি।