প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলনে সংহতি জানালেন হান্নান মাসউদ
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০১:১৪ PM , আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০১:১৪ PM
তিন দফা দাবিতে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হান্নান মাসউদ। শনিবার (৮ নভেম্বর) সকালে তিনি ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শিক্ষকদের চলমান কর্মসূচিতে যোগ দেন।
সংহতি জানিয়ে হান্নান মাসুদ বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি দেশের প্রতিটি মানুষের সংকটে পাশে থাকবে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেভাবে হাসিনা বিরোধী আন্দোলন শুরু করেছিল, আমরাও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছি। আগামী নির্বাচনে নাগরিক পার্টি এককভাবে অংশ নেবে এবং নতুন বাংলাদেশের ধারা উন্মোচিত করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা গ্রামের মাধ্যমিকে পড়েছেন তারা গ্রামের শিক্ষকদের কষ্ট বোঝেন। যারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছেন, তারা জানেন এই শিক্ষকদের জীবন কতটা সংগ্রামী। আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টি সেই মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করি।’
ইংলিশ মিডিয়াম বা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা ব্যক্তিরা প্রাথমিক শিক্ষকদের এই কষ্ট উপলব্ধি করতে পারেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন: তিন দাবিতে আজ থেকে লাগাতার অবস্থান প্রাথমিক শিক্ষকদের
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের ঘোষণার উদ্ধৃতি দিয়ে হান্নান মাসুদ বলেন, ‘নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দিয়েছেন—আগামী ১০ বছরের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি ক্ষমতায় গিয়ে দেশের সব সমস্যার সমাধান করবে। তরুণ নেতৃত্বকে মানতে না পারা কিছু ইস্টাবলিশমেন্ট আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। তারা নিজেরা মানুষের পাশে দাঁড়ায় না, কিন্তু আমরা দাঁড়ালে আমাদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এদেশের মানুষের জন্যই রাজনীতি করি। তাই প্রাথমিক শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি মেনে নিতে এবং দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করতে সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
শিক্ষকদের তিনটি মূল দাবি হলো—দশম গ্রেডে বেতন প্রদান, চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা। আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন), বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি) ও সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ। তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের তৃতীয় ধাপে নিয়োগ পাওয়া সহকারী শিক্ষকরা।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭টি এবং এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক সংখ্যা ৩ লাখ ৮৪ হাজার। গত ২৪ এপ্রিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে ১০তম গ্রেডে এবং ১৩তম গ্রেডে থাকা শিক্ষকদের বেতন ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়। তবে এই পদক্ষেপে সন্তুষ্ট নন সহকারী শিক্ষকরা।
আরও পড়ুন: বিকালে শাহবাগে শিক্ষকদের ‘কলম বিসর্জন কর্মসূচি
খায়রুন নাহার লিপি জানান, ‘বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, নার্স, কৃষি কর্মকর্তা, পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর ও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা স্নাতক বা সমমান ডিগ্রি নিয়েই দশম গ্রেড পাচ্ছেন। অথচ প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা স্নাতক ডিগ্রি ছাড়াও সিএনএড, বিপিএড বা বিটিপিটি কোর্স সম্পন্ন করেও ১৩তম গ্রেডে রয়েছেন। পিটিআইসংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দশম গ্রেডে বেতন পান। তাই আমরাও ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনে নেমেছি।’
এদিকে, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের আরেক অংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেডে জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতির দাবিতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময়সীমা দিয়েছে। তাদের তিন দাবি মানা না হলে ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
এছাড়া ১১ ডিসেম্বর থেকে দাবি বাস্তবায়নের দৃশ্যমান অগ্রগতি বা ঘোষণা না পেলে পরীক্ষা বর্জন ও আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।