দৃষ্টিশক্তিহীন পাপ্পুর জিপিএ-৫ প্রাপ্তি ও তার মায়ের গল্প

ছেলেকে পড়া মুখস্থ করাচ্ছেন মা ভারতী
ছেলেকে পড়া মুখস্থ করাচ্ছেন মা ভারতী   © সংগৃহীত

পাপ্পু কুমার পাল, নাটোরের সিংড়া উপজেলার বাসিন্দা। পাপ্পুর বাবা কলম গ্রামের স্বর্ণকার বিমল পাল। মা ভারতী রানী পাল গৃহিণী। এ নিয়েই তাদের ছোট সংসার।

মাত্র তিন বছর বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারায় পাপ্পু। পাপ্পুর দৃষ্টিশক্তি ফেরাতে দমে যাননি বাবা-মা। সবকিছু উজাড় করে দিয়েছেন। তবুও সে চেষ্টা সাফল্যের মুখ দেখেনি।

মা-বাবার মনে একটা সময় ছেলের ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে বিস্তর চিন্তা বাসা বাঁধে। এ সমাজে পাপ্পুর জন্য কি অপেক্ষা করছে! কিভাবে পাপ্পু চলাফেরা করবে, সে কি পড়াশোনা করতে পারবে? মায়ের মনে নানাবিধ প্রশ্ন। তবে সমাধান পেলেন তিনি। স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের পড়াশোনার জন্য ভর্তি করানো হলো তাকে। মায়ের মুখ পড়া শুনে মুখস্থ করে পরীক্ষা দিয়েছেন পাপ্পু, পেয়েছেন জিপিএ-৫।

আরও পড়ুন : রাবিতে মিডিয়ায় জেন্ডার উপস্থাপন বিষয়ক কর্মশালা

মা জানালেন ছেলের সাফল্যের গল্প। জন্মের পর থেকেই পাপ্পুর চোখ বেয়ে পানি পড়তো। স্বামী বিমল পালের সঙ্গে পরামর্শ করলেন। ছেলের উন্নত চিকিৎসার সিদ্ধান্ত হল। বিক্রি করলেন সাবর-স্থাবর সম্পত্তি। পাপ্পুকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও নেপালে উন্নত চিকিৎসায় নেওয়া হল।

চিকিৎসকরা জানালেন পাপ্পুর দৃষ্টিশক্তি ফিরবে। হৃদয়ে স্পন্দন পেলেন ভারতী রানী পাল। তবে এ স্পন্দন স্থায়ী হয়নি। চিকিৎসকদের বারবার দেওয়া আশ্বাসেও ছেলের দৃষ্টিশক্তি ফেরেনি।

papp
বাবা-মা ও পাপ্পু 

তবে মা কি দমকে যাবে? না, দমকে যাননি ভারতী। নিজেকে হাজারও বার ভেঙ্গে নতুন উদ্যমে গড়েছেন। দিয়েছেন নিঃসঙ্গ দৃষ্টিশক্তিহীন ছেলের সঙ্গ। ছেলের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে প্রতিবেশী ও নিকট স্বজনদের সঙ্গে লড়াই চলেছে প্রতিনিয়ত। মায়ের সার্বক্ষণিক সঙ্গের ফলস্বরূপ ছেলে পাপ্পু এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

বাবা বিমল কুমার পাল জানালেন নিজেদের নিঃসঙ্গতা ও অসহায়তার বাস্তবিকতা। তিনি জানান, পাপ্পুর যখন ৬ বছর, তখন তাকে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের ভর্তি করানো হয়। এক বছর পেরিয়ে যেতেই পড়েন নতুন জটিলতায়। পাপ্পুকে বিদ্যালয় ছাড়তে হয়। এরপর! এরপর পাপ্পু রাজশাহীর একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। শুরু করেন ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা। কিন্তু পারিপার্শ্বিক পরিবেশে পাপ্পুর সেখানে বেশি দিন পড়া হয়নি।

আরও পড়ুন: সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির ১০২তম জন্মবার্ষিকী আজ

পুনরায় গ্রামে ফিরে আসতে হয়। এরপর গ্রামের বিদ্যালয়ে পড়াশোনা। এ যেন নতুন যুদ্ধযাত্রা। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে পাপ্পু কলম উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। অংশ নেন এসএসসি পরীক্ষায়। প্রতিবেশীরা ভেবেছিল কোন রকমে পাশ কিংবা ফেল করবে পাপ্পু। তবে মায়ের আস্তার জায়গায় একবিন্দু আঁচড় পড়তে দেননি পাপ্পু। সবাইকে অবাক করে দিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন পাপ্পু। এরপর এইচএসসি পরীক্ষাতেও ধারাবাহিকতা বজায় রাখে সে।

বাবা বিমল পাল জানান তাদের অবস্থা খুবই নাজুক। পাপ্পুর লেখাপড়ার খরচ নিয়ে তিনি এখন দিশেহারা। পাপ্পুর লেখাপড়ায় দৃষ্টিহীনদের ব্যবহারে সহায়ক একটি কম্পিউটার প্রয়োজন। তবে কম্পিউটার কেনার সামর্থ্য তার এখন নেই।

আরও পড়ুন : পরীক্ষা দিতে পারবে ছাত্র লাঞ্ছনার অভিযোগে বহিষ্কৃত জাবির দুই ছাত্রী

কথা হয় উদ্যমী তরুণ পাপ্পুর সঙ্গে। তিনি তার স্বপ্নের কথা জানালেন। উচ্চশিক্ষার ধাপ শেষ করে নিজেকে শিক্ষক হিসেবে দেখতে চান পাপ্পু। এজন্য সিংড়ায় গোল-ই-আফরোজ সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকে ভর্তি হয়েছেন তিনি।

নিজের এমন সাফল্যের জন্য তিনি তার শিক্ষক আজাহার, বিমল চন্দ্র পাল ও সরবেশ আলীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন। এছাড়া পাপ্পুর হয়ে পরীক্ষায় লিখেছেন পূজা রানী। শ্রুতিলেখক পূজার প্রতিও পাপ্পু আন্তরিক কৃতজ্ঞ বলে জানান।

আরও পড়ুন : দর্শন বিভাগের আন্দোলনে ভোগান্তিতে সাত কলেজের পরীক্ষার্থীরা

চিকিৎসকরা আশ্বাস দিয়েছেন যেকোনো দিন পাপ্পুর দৃষ্টিশক্তি ফিরবে। পাপ্পুও অধীর আগ্রহে এই বসুন্ধরার মাটি-আকাশ দেখতে মুখিয়ে রয়েছেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence