ফুড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়েও সফল ওয়েব ডিজাইনার সাব্বির

সাব্বির
সাব্বির  © সংগৃহীত

সাব্বির আহমেদ। একজন প্রতিষ্ঠিত ওয়েব ডিজাইনার। দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট ফাইবার ডটকমে। জন্ম ও বেড়ে উঠা নরসিংদীর ঘোড়াশালে। মো. বোরহান উদ্দিন এর বড় ছেলে সাব্বির, মধ্যেবিত্ত ঘরের সন্তান হয়েও কিশোর বয়সেই ইচ্ছে ছিল কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখার। আর্থিক টানাপোড়েনে কম্পিউটার কেনার সামর্থ্য হয়নি। দীর্ঘদিন টিউশনের টাকা জমিয়ে এবং বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে এসএসসি পরীক্ষার পর কম্পিউটার কেনেন সাব্বির। এরপর গুগল ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ওয়েব ডিজাইনের কাজ শেখা শুরু করেন। শখের বশে ডিজাইনিং শিখলেও বছরখানেক পর হঠাৎ তার মনে হয়, যতটুকু শিখেছেন তা কাজে লাগিয়ে ইনকাম করা যায়। এই ভাবনা থেকেই ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখে ফাইবারে অ্যাকাউন্ট খুলে কাজ শুরু করেন। অভিজ্ঞতা না থাকায় একমাস চেষ্টার পর মাত্র দু'টি কাজ পান তিনি। তবে অনবরত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ায় ধীরে ধীরে কাজের পরিমাণ বাড়তে থাকে তার।

তিনি কাজ করছেন ফ্রন্ট অ্যান্ড ডেভেলপার হিসেবে। বিভিন্ন ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ডিজাইনের কাজ করেন। পাশাপাশি ওয়েবসাইটের বিভিন্ন বাগ তথা ত্রুটির সমাধান করেন তিনি। সিকিউরিটি সমাধান /ডাটাবেইজ রিলেটেড সমস্যা সমাধান, সিএসএস রিলেটেড সমস্যা সমাধানে রয়েছে তার দক্ষতা।

তার ফ্রিল্যান্সিংয়ের শুরুরটা কীভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফাইবারে কাজ শুরু করার পর কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিলাম। কাজ বুঝে নেওয়ার সময় ক্লায়েন্টের সঙ্গে কথোপকথন চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছিলো। ধীরে ধীরে ইংরেজি বোঝা ও বলায় স্কিল ডেভেলপমেন্ট করে সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠি। এরপর অনেক কাজ পাই। দীর্ঘদিন কোনো সমস্যা ছাড়াই কয়েকশ কাজ সম্পন্ন করি। এভাবে ভালোই চলছিলো। হঠাৎ ছোট একটা ভুলের জন্য প্রায় দেড়শত ক্লায়েন্ট রিভিউসহ আমার অ্যাকাউন্টটি ডিজেবল হয়ে যায়। যা ছিল আমার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের অন্যতম হোঁচট খাওয়া। এরপর লিকংডইন, ফ্রিলান্সার ডটকম, ফাইবস্কুইডসহ বিভিন্ন মাকেটপ্লেসে টুকটাক কাজ করেছি। কিন্তু আশানুরূপ কাজ না পেয়ে কিছুটা হতাশ হই। ফ্রিল্যান্সিংয়ে ব্রেক দিয়ে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করি। ভর্তি হই নরসিংদী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে, ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে।

কম্পিউটার রেখে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং কেন? 

আমার ইচ্ছে ছিল কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার কিন্তু আপনি ত জানেন ডিপ্লোমাতে ভর্তি হওয়ার সময় সাবজেক্ট চয়েজ করতে হয় এবং এসএসসি রেজাল্ট অনুযায়ী সাবজেক্ট পাওয়া যায়, আমার বেলাতেও তাই হয়েছে, কম্পিউটার না পেয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং  সাবজেক্ট পেলাম। তাছাড়া আমার বাবা জব করেন একটি বড় ফুড কোম্পানি তে তাই উনিও চাইল যেন এটা নিয়েই পড়ি তাই পড়া এই বিষয়ে। 

আপনার কাজের পেছনে অনুপ্রেরণা কার জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুরুতে নিজেই নিজের মেন্টর হয়ে কাজ করেছি। কিছু দিন পর পরিচয় হয় আশরাফুল হক ভাই এর সাথে। তিনিই আমাকে ওয়েবসাইট ডিজাইন এর বেসিক শিখিয়েছেন। কাজ সেখার ৬ মাস এর মধ্যে ফাইবারে কাজ পাই । কিন্তু ফাইবার অ্যাকাউন্ট নষ্ট হওয়ার পর দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম। এমন দুঃসময়ে ফেসবুকে পরিচয় হয় মোফাজ্জল ইসলাম নামে এক ভাইয়ের সঙ্গে। তার সহায়তা ও দিকনির্দেশনায় ২০২০ সালে আবার নতুন করে ফাইবারে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে কাজ খোঁজা শুরু করি। সাধারণত নতুন অ্যাকাউন্টে রিভিউ না থাকায় কাজ পাওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার। মজার ব্যাপার হলো, অ্যাকাউন্ট খোলার ৭ দিনের মধ্যে কাজ পেয়ে যাই। এরপর নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করি। একবছরে লেভেল ২ সেলার হয়ে যাই ফাইবারে। পাশাপাশি কিছু দেশীয় ক্লায়েন্টের কাজ করি এবং মাসিক চুক্তিভিত্তিক কিছু ক্লায়েন্ট পেয়ে যাই আমেরিকা এবং কানাডার তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার খালিদ ফারহান ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করে নিত্যনতুন কাজ শিখছি। তার সমর্থন আমাকে অনুপ্রেরণা জোগায়।

ফাইবারে বিদেশি কাজের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জনপ্রিয় কিছু ওয়েবসাইট ডিজাইনার হিসেবে প্রশংসা কুড়িয়েছেন সাব্বির। জনপ্রিয় গণমাধ্যম ফেস দ্য পিপলের ওয়েবসাইট (ফেস দ্য পিপল ডট নেট) তার দক্ষতায় নির্মিত। এছাড়া নরসিংদীর আঞ্চলিক নিউজ পোর্টাল ‘নরসিংদীর কন্ঠস্বর’ সাইটটিও তিনি ডিজাইন করেছেন। আরও কাজ করেছেন দেশের শিল্পবিকাশের অন্যতম সহযোগী ‘টোটাল বিজনেস গ্রুপ’-এর সাতটি ওয়েবসাইট নিয়ে।

ক্লায়েন্টকে খুশি রাখতে কী কী করেন জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ক্লায়েন্টের কাজ ডেডলাইনের আগে কমপ্লিট করে ডেলিভারি দেওয়ার চেষ্টা করি। অর্থাৎ কাজ শেষ করার জন্য যতদিন সময় নিই তার ২/১ দিন আগেই কাজটা শেষ করে দেই। এতে ক্লায়েন্টের মনে পজেটিভ থিঙ্কিং হয়, পাশাপাশি নেক্সট প্রজেক্টে আমার কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এছাড়া প্রজেক্ট শেষ হওয়ার পরেও ক্লায়েন্টের সঙ্গে যথাসম্ভব যোগাযোগ রাখি। ফলে কখনোই আমার কাজ ছাড়া বেকার বসে থাকতে হয় না।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের তুমুল ব্যস্ততার মাঝেও একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করছেন সাব্বির। পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন পড়াশোনাও। ফুড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উপর বিএসসি করছেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশে। সাহসী এবং উদ্যমী তরুণদের নিয়ে কাজ কাজ করতে চান সাব্বির।

সাব্বির চান, তরুণদের বেকারত্বের অবসান হোক। তরুণরা তাদের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে বেকারত্ব দূর করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করুক। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রবল আত্মবিশ্বাস আর ধৈর্য থাকলে ফ্রিল্যান্সিংয়ে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। তবে কখনো কয়েক মাসের ফ্রিল্যান্সিং কোর্স করে অনেক বড় ফ্রিল্যান্সার হয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখবেন না। অক্লান্ত চেষ্টা চালিয়ে গেলে একসময় নিজের যোগ্যতাই আপনার অবস্থান নির্ধারণ করবে। দ্বিতীয়ত, ফ্রিলান্সিং করে অল্পদিনেই টাকার জন্য মরিয়া হয়ে যাওয়া নিতান্তই বোকামি। অন্তত দেড়-দুই বছর নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাওয়া উচিত। পাশাপাশি সুযোগ থাকলে নিজের কাজ সংক্রান্ত নিত্যনতুন কোর্স করা। এতে সঠিক গাইডলাইন পাওয়া যায়। পাশাপাশি একজন ভালো ফ্রিল্যান্সার হতে হলে অবশ্যই কমিউনিকেশন স্কিল ভালো থাকা জরুরি। সেক্ষেত্রে ইংরেজি শেখার বিকল্প নেই।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence