মাত্র ১৪ বছরে ইলন মাস্কের কোম্পানিতে চাকরি বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত কাইরানের

বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত কিশোর কাইরান কাজি
বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত কিশোর কাইরান কাজি  © ফাইল ছবি

কুইজে আসতেই পারে, বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্সে সবচেয়ে সর্বকনিষ্ঠ প্রযুক্তিবিদ কে? উত্তর হবে কাইরান কাজি। তার এই কোম্পানিতে মজার কিন্তু অত্যন্ত জটিল ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া তিনি পার করেছে সহজেই। খুব দ্রুত কোম্পানিটির হয়ে কাজ শুরু করবে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত এই কিশোর।

কাইরানের বয়স মাত্র ১৪ বছর। তিনি আন্ডার গ্র্যাজুয়েশন পর্যায়ে পড়ালেখা করছিলেন সান্তা ক্লারা ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। ইলন মাস্ক প্রতিষ্ঠিত মহাকাশ গবেষণা আর অভিযানকেন্দ্রিক কোম্পানি স্পেসএক্সে কাজ করবেন কাইরান। তার নিয়োগ হয়েছে এর ইন্টারনেট সংযোগ কোম্পানি স্টারলিংকে।

জানা যায়, ১১ বছর বয়সে আমেরিকার সান্টা ক্লারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শুরু করেছিল তিনি। এ বছর গ্র্যাজুয়েট হয়ে একেবারে চাকরিতে ঢুকবে কাইরান। বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রবল উচ্ছ্বসিত। তার আশা, মানুষের মঙ্গল অভিযানে নিজের বিদ্যা-বুদ্ধি খাটিয়ে বিশেষ ছাপ রাখতে পারবে তিনি। সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছে, বিশ্বের এক দারুণ সংস্থায় সফটওয়্যার ই়ঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দিতে চলেছি আমি। যে সংস্থা আমার বয়সকে একেবারেই প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখেনি।

১১ বছর বয়সে আমেরিকার সান্টা ক্লারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শুরু করেছিল কাইরান কাজি। ২০২৩ সালে গ্র্যাজুয়েট হয়ে একেবারে ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্সে সবচেয়ে সর্বকনিষ্ঠ প্রযুক্তিবিদ হিসেবে চাকরিতে ঢুকবে তিনি।

কাজির বাবা-মা জানান, ছোট থেকেই বিশ্বের নানা বিষয়ে কৌতূহল কাজির। দু’বছর বয়সের মধ্যেই পুরো বাক্যে কথা বলতে পারত তিনি। কাজি যখন থার্ড গ্রেডে পড়ে তখন সে বাড়িতে জানায় যে স্কুলের পাঠ্যক্রম তার খুব সহজ লাগছে। তার পরেই তাকে কমিউনিটি কলেজে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নেন তার বাবা-মা। অবসর সময়ে ঐতিহাসিক ঘটনার ছায়ায় তৈরি কম্পিউটার গেম খেলতে ভালবাসে তিনি। বই পড়ার ক্ষেত্রে কল্পবিজ্ঞানের পোকা। তার প্রিয় লেখক ফিলিপ কে ডিক। সাংবাদিকদের মধ্যে তার প্রিয় অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ মাইকেল লুইস।

আমেরিকার পশ্চিম উপকূলের প্রভাবশালী দৈনিক লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস মজা করেই লিখেছে, অফিসে আনা-নেওয়া করতে কাইরান কাজির সম্ভবত একজন চালকের সাহায্য লাগবে। কারণ তার বয়স মাত্র ১৪ বছর।

ক্যালিফোর্নিয়ার প্লিজেন্টনে নিজের শেবার ঘর থেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কাইরান বলেন, কলেজের দিনগুলোই মনে হচ্ছে আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের ছিল। নিজের যাত্রা শেয়ার করার বেলায় আমার অনেক স্বাধীনতা ছিল।

নম্রভাষী এই কিশোর বলেন, স্পেসএক্সের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট টিম স্টারলিংকের সঙ্গে কাজ করার বিষয়টি তার জন্য “নিজের চেয়েও বড় কিছুর অংশ” হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। এই বয়সে এত কিছু অর্জন করা কিশোরের জন্য এটি আদৌ কোনো ছোট কৃতিত্ব নয়।

শিশুবেলা
মাত্র দুই বছর বয়সেই কাইরান পূর্ণ বাক্য বলতে পারতেন। আর কিন্ডারগার্টেনে পড়ার সময় ক্লাসের শিক্ষক আর বন্ধুদের কাছে বর্ণনা করতেন ন্যাশনাল পাবলিক রেডিওতে শোনা খবর। বয়স নয় বছর হতে না হতেই তিনি টের পর, সিলেবাসের পড়া তার জন্য কোনো ব্যপারই না। মা-বাবা, শিক্ষক এবং বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকও একমত হন, আরও বড় ক্লাসে পড়ার জন্য প্রস্তুত কাইরান। 

সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজে পাওয়া। শেষ পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়ার লিভারমোরের লাস পজিটাস কলেজে ভর্তি হন তিনি। ক্লাস থ্রি থেকে এক ধাক্কায় কমিউনিটি কলেজে ভর্তি হয়ে তার মনে হল, এইবার সিলেবাস যেন খানিকটা উপযুক্ত লাগছে।

ব্রেইনগেইন ম্যাগাজিনের সঙ্গে আলাপে কাইরানের পরিবার জানিয়েছে, তার বয়স যখন ৯, তখনই আইকিউ পরীক্ষায় দেখা গেল, তার বুদ্ধিমত্তা ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষের ওপরে। কাইরান কি প্রতিভাবান? বাবা-মা’র প্রশ্নের জবাবে তার উত্তর, প্রতিভা মানে হচ্ছে কাজ করা। এমন সব বড় কাজ যেগুলো মানুষের জীবন বদলে দেয়।

মার সঙ্গে কাইরা কাজি

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন
ট্রান্সফার হয়ে সান্তা ক্লারা ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর কাইরান টের পেলেন, তিনি যে ক্যারিয়ারের পথ অনুসরণ করার স্বাধীনতা পেয়েছেন, সেটি তাকে ওইসব বড় সমস্যা সমাধানের পথ দেখাচ্ছে। “হ্যাঁ, যে লেভেলের পড়ালেখা চেয়েছিলাম, সেটা এবার পাওয়া গেল।”

অবসর সময় তার কেটেছে কল্পকাহিনিনির্ভর গেইম “অ্যাসাসিনস ক্রিড” খেলে, ফিলিপ কে ডিকের সাই-ফাই ছোট গল্প আর সাংবাদিক মাইকেল লুইসের বই পড়ে যিনি যিনি ২০০৮ সালের অর্থনীতির ধস নিয়ে লিখেছেন।

নিজের গল্প বলতে ভালবাসেন কাইরান, যে গল্প তার বয়সী অন্য সবার চেয়ে আলাদা। তার গল্পের সবচেয়ে পরিচিত পটভূমি হল, কীভাবে একজন পদধারী ব্যক্তিকে বোঝানো সম্ভব যে, তার বুদ্ধিমত্তা আর পরিপক্কতা আসলে নির্ভর করার মতো।

“এই গল্পগুলো আমার বলতে ভাল লাগে, কারণ, যারা প্রভাবশালী বা বড় পদে আছেন তাদের বয়স নিয়ে পক্ষপাত আর ভুল ধারণা ভেঙে দেওয়া দরকার। হয়ত আমার গল্প এইরকম আরও অনেকের পথ খুলে দেবে।” অনেক ‘না’র ভিড়ে কেবল একটি ‘হ্যাঁ’

সান্তা ক্লারা ইউনিভার্সিটির ক্লাস কাইরান কাজি

কলেজে পড়ার সময়ই কাইরান আর তার মা এমন সব সম্ভাব্য কাজের জায়গার তালিকা তৈরি করে ফেলেন যেখানে ইন্টার্নশিপের জন্য আবেদন করা যায়। তবে, সেই তালিকা থেকে সাড়া দিচ্ছিল না কেউ।

এরইমধ্যে ইনটেলের ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেমস রিসার্চ ল্যাবের পরিচালক লামা নাচম্যান সে সময়ের ১০ বছর বয়সী কাইরানের সাঙ্গে একটি মিটিং করেন। তার ধারণা ছিল, সংক্ষিপ্ত আলাপ শেষে এই বাচ্চাটিকে বলে দেবেন, “কয়েক বছর পর আবার চেষ্টা কোরো।” আর সেইসঙ্গে কিছু টিপস যাতে এই সদ্য প্রাইমারি পেরোনো বয়সের ছেলেটির ভবিষ্যতে কাজে লাগে।

ঘটনা হল ভিন্ন। তিনি তাকে কাজের সুযোগ না দিয়ে পারেননি। “সিলিকন ভ্যালির সবচেয়ে প্রভাবশালী কোম্পানিগুলো থেকে এত 'না'র সমুদ্রে, এক বিভাগপ্রধান হ্যাঁ বলছেন ... একটি দরজা খুলল…।” কাইরান তার লিংকডইন পেজে লিখেছেন, “ওই একটা হ্যাঁই সবকিছু বদলে দিয়েছে”।

অতঃপর স্টারলিংক
কিছুদিন আগেই ইনস্টাগ্রামে কাইরান ঘোষণা দিলেন প্রস্তুতির-চাকরির ইন্টারভিউ। সামনে টেবিলে ল্যাপটপ, পরনে শার্ট-টাই, তার ওপর সোয়েটার-পুরো পেশাদার চেহারা।

কয়েক সপ্তাহ পর আবার ইনস্টাগ্রামে পোস্ট। এবার স্পেসএক্স থেকে পাওয়া ‘অফার লেটারে’র স্ক্রিনশট পোস্ট করলেন তিনি। মা-ছেলে এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওয়াশিংটনের রেডমন্ডে যাওয়ার। সেখানেই তার অফিস।

অফিসে প্রথম দিনে কী পরবেন জানতে চাইলে কাইরান উত্তরে রসিকতা করে বললেন, ভাবছি স্পেসএক্সের টিশার্ট পরব, বেশ জীবন্ত বিজ্ঞাপন হবে কিন্তু। খানিকক্ষণ বাদেই শিশুসুলভ কৌতুক বাদ দিয়ে, বেশ ভারিক্কি চালে বললেন, আমি সম্ভবত জিন্স আর টি-শার্ট পরব যাতে ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে ওরা আমাকে গোনায় ধরে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence