ঢাবি ছাত্রলীগ

কেন্দ্রের অনিচ্ছায় আটকে আছে হল সম্মেলন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও  ছাত্রলীগের লোগো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগের লোগো  © সংগৃহীত

দীর্ঘ ৫ বছরেও হল কমিটি গঠন করতে পারেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। কয়েক দফা সম্মেলনের তারিখ ঘোষণাও করেও পেছাতে হয়েছে। শাখা ছাত্রলীগ বলছে, কেন্দ্রের অনিচ্ছার কারণেই হল সম্মেলন হচ্ছে না।

এদিকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদ এক বছর। সেই হিসেবে দুই বছর আগেই বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। ২০১৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর সর্বশেষ হল কমিটি গঠন করে ছাত্রলীগ। দীর্ঘসময় পরও কমিটি ঘোষণা না করায় অসন্তোষ আর হতাশা সৃষ্টি হয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। ইতোমধ্যে অনেকেই রাজনীতি-বিমুখ হয়ে পড়েছে। দ্রুত হল কমিটি দেওয়া হবে বলে বিভিন্ন সময় প্রতিশ্রুতি দিলেও ঢাবি ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এখন পর্যন্ত তা করতে পারেননি। এর আগে বিভিন্ন সময় সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্রলীগের হল কমিটি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ঢাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা।

কয়েক দফায় উদ্যোগ নিয়েও হল সম্মেলন করতে পারেননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। এজন্য তারা কেন্দ্রীয় কমিটিকে দুষছেন। কমিটি না হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে পদ-প্রত্যাশীরা দেখছেন ভাগের মিল না হওয়াকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতাও ‘ভাগ’ পান। অর্থাৎ তাদের কিছু অনুসারী বিভিন্ন হলের শীর্ষ নেতৃত্বে আছেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় দুই শীর্ষ নেতার অনুমোদন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটি ঘোষণার অলিখিত রীতি রয়েছে।

আরও পড়ুন- বাছাই করা মেধাবীদের মাস্টার্সে ভর্তির প্রস্তাব ইউজিসির

গত বছরের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে বিদেশে যান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। সেই সফরের আগে ২৮ নভেম্বর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হল সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন সনজিত-সাদ্দাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই সম্মেলন হয়নি।

সর্বশেষ ২৮ নভেম্বর থেকে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলে হল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে একধরনের চাঞ্চল্য তৈরি হয়। কিন্তু এর মাত্র কয়েক দিন আগে সনজিত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে পিত্তথলির অস্ত্রোপচার করান। এর ফলে ২৮ নভেম্বর সম্মেলন করার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
এমন পরিস্থিতিতে নেতা-কর্মীদের মন রক্ষায় ২৭ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে হল পর্যায়ে শীর্ষ পদ-প্রত্যাশী ব্যক্তিদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়। ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য তিন শতাধিক শিক্ষার্থী জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন। ৩ ও ৪ ডিসেম্বর জীবনবৃত্তান্তগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়।

এসব প্রক্রিয়া শেষে ৮ ডিসেম্বর রাতে ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের চার জ্যেষ্ঠ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও বি এম মোজাম্মেল হকের সঙ্গে ছাত্রলীগের তিন শীর্ষ নেতার (আল নাহিয়ান খান, সনজিত ও সাদ্দাম) বৈঠক হয়। সেখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকে ২৩ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়।

আরও পড়ুন- ঢাকায় সাঁতার শেখার সেরা স্থান

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে সেই সভায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য অংশ নেননি। সভাটি শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে হল সম্মেলন-বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়। বলা হয়, হল সম্মেলনের বিষয়টি নিয়ে তারা (আল নাহিয়ান ও লেখক) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলবেন।

নাম না প্রকাশ করা শর্তে এক পদ-প্রত্যাশী বলেন, দীর্ঘদিন থেকে হল রাজনীতি করে আসছি। কিন্তু এখনো আমাদের নামের আগে কোনো পদ জোটেনি। এটা আমাদের জন্য খুবই হতাশাজনক। সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবেও আমরা সংকটে আছি। এরকম চলতে থাকলে নতুনরা রাজনীতিতে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতিতে একটা দীর্ঘমেয়াদী শূন্যতা তৈরি হবে। পরবর্তীতে যেটা কাটিয়ে উঠা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

অপর এক পদ-প্রত্যাশী বলেন, আমরা এখন এমন এক পর্যায়ে আছি যে চাইলেও পড়াশোনায় ফিরে যেতে পারি না। আবার রাজনীতিতেও আমাদের নিজস্ব কোনো পরিচয় নেই। ফলে আমরা এক ধরণের অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে আছি। আমাদের পরিবারও তো আমাদেরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে। এখন মনে হয় পরিবারের সেই স্বপ্নকে আমরা নিজ হাতে হত্যা করেছি।

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, আমরা কমিটি দেয়ার জন্য এখনই প্রস্তুত। আমাদের দিক থেকে কোনো বাধা নাই। কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক যখন চাইবেন তখনই সম্মেলন হবে।

এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে বারবার কল করা হলেও রিসিভ করেন নি তারা।


সর্বশেষ সংবাদ