হাদীর কান্না দেখে কাঁদছে সবাই

বেসরকারি টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শরিফ ওসমান হাদী
বেসরকারি টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শরিফ ওসমান হাদী  © ভিডিও থেকে সংগৃহীত

জুলাই আন্দোলনের সামনের সারির সংগঠক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদী দুই চোখ হারানো এক জুলাই যোদ্ধা ও কোরআনের হাফেজের এক গল্প শুনিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তার কান্নাজড়িত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি দেখে অনেকেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছেন। সম্প্রতি এক বেসরকারি টেলিভিশনের এক পডকাস্ট অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি এ গল্প শোনান। এছাড়া, এ অনুষ্ঠানে জুলাই আন্দোলন, বর্তমান সময় ও ভবিষ্যতের বিভিন্ন পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্তব্য করেন হাদি।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, শরিফ ওসমান হাদী বলছেন, জুলাই আন্দোলনে শহীদ বেওয়ারিস কত লাশ আমরা শনাক্ত করতে পারিনি। আমি জানি, আমরা একসময় সঙ্গীহীন হয়ে যাব। সঙ্গে কেউ থাকবে না। কিন্তু এতগুলো মানুষের জীবন, চিরতরে অন্ধ, পঙ্গু…।

তিনি বলেন, আমি অনেকবার একটা গল্প বলেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হচ্ছি। টিআরটি ওয়ার্ল্ড আহত এক জুলাই যোদ্ধার ইন্টারভিউ নেবে। কোরআনের হাফেজ ছেলেটা। ২১ বা ২২ বছর বয়স হবে। দুই চোখ চিরতরে হারিয়েছে। আমাকে দেখে উনারা (টিআরটি ওয়ার্ল্ড) আমার সাথে কথা বলছেন। এমন সময়, ছেলেটা আমার কথা শুনে বুঝেছে যে, আমি এসেছি।

হাদী বলেন, ছেলেটা আমার কাধে হাত রেখে বলল, ‘হাদী ভাই, সপ্তাহ খানেকের জন্য আমার একটা চোখে একটু আলো ফিরিয়ে দেওয়া যায়?’

একথা বলেই হাদী কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমি ছেলেটাকে বললাম, ভাই এক সপ্তাহের জন্য কেন?’ তখন সে বলল, ‘ভাই, আমার মাকে অন্তত একবার দেখতে চাই। আন্দোলনে যেতে আমার মা অনেকবার নিষেধ করেছিল। ফিরে আসার সময় আমি মাকে দেখিনি। একটাবার মন চায়, আমার মাকে একটু দেখি।’

এরপর হাদী বলেন, অথচ হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে বিদেশ চলে গেছে। একথা বলেই বাধভাঙা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বেশকিছুক্ষণ কাঁদতেই থাকেন।

হাদির এসব মন্তব্য সংবলিত এক মিনিটের একটি ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করে ইসরাফিল ফারাজী নামে একজন লেখেন, বিশ্বাস করেন হাদীর এই কান্না, চোখের পানি শুধু নির্বাচনের জন্য না। এটা শুধু হাদীর কান্না নয়। প্রত্যেকটা বিপ্লবীদের কান্না এটা। সকাল হলেই যখন শহিদ পরিবারের মায়েদের, ভাইদের কাছে যাওয়া হয় তখন আমাদের অনূভুতিটা ঠিক এমনই। যখন গুলিবিদ্ধ কোনো ভাই সামনে এসে বলে- ভাই আমার শরীরের এখনও গুলি রয়েছে তখন আমাদের অনূভুতিটাও এমন। আমরা থামবো না....।

মাহমুদুল্লাহ হামিদ নামে একজন ফেসবুকে লেখেন, হাদীকে তো সবসময় রাগী স্বভাবের মনে হয়েছে। অথচ আজ সেই হাদী-ই আমাকে কাঁদিয়ে দিলো! বারবার শুনলাম, কিন্তু কান্না থামাতে পারলাম না। আহ, আমি তো প্রায় প্রতিদিন মাকে দেখে চোখ জুড়াই। কিন্তু ভাবলে শিউরে উঠি—ভয়াল জুলাই কতো আলেম হাফেজের চোখ কেড়ে নিয়েছে! যারা আজ তাদের প্রিয় মাকে একটিবার দেখার তৃষ্ণায় বুক ফাটিয়ে কাঁদছে…। আল্লাহ তাকে হেফাজতে রাখুন, সব অশুভ থেকে নিরাপদ রাখুন। আমীন।

নোমান হাবীব নামে একজন লেখেন, যেখানে চারদিক স্বার্থের প্রতিযোগিতায় ভরপুর, সেখানে হাদী ভাই থেকে গেছেন স্বার্থহীন এক নির্মল প্রদীপ। অন্যের দুঃখ-কষ্ট নিজের অশ্রু দিয়ে ভিজিয়ে নেওয়াই তার মহত্ত্ব—তিনি যেন মানবতার প্রকৃত ব্যাখ্যা নিজের অন্তরে ধারণ করে চলেছেন। যখন সবাই নিজ নিজ হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত, তখন তিনি নিঃস্বার্থ জুলাই আন্দোলনের উত্তরসূরি হয়ে সমাজকে আলোর পথে ডেকে চলছেন। এমন মানুষদের কারণেই মানবতা আজও বেঁচে আছে। আল্লাহ তাঁকে উত্তম বিনিময় দান করুন। আমিন।


সর্বশেষ সংবাদ