সমন্বয়ক পরিচয় কখনো দেইনি, যদিও আন্দোলনের সবকিছু সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলাম

ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম
ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম  © সংগৃহীত ও সম্পাদিত

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম এবং আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের সমালোচনা করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আজ ফেসবুকে আজ পোস্ট করেছেন। যা নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় চলছে। নাহিদ তার ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, সাদিক কায়েম নিজেকে সমন্বয়ক দাবি করে থাকেন কিন্তু তিনি সমন্বয়ক নন। এছাড়া তার আরও কিছু বিষয়ের সমালোচনা করেন নাহিদ। সাদিক কায়েম নাহিদের এসব মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন।

সাদিক কায়েম বলেছেন, আমি যে ‘সমন্বয়ক’ তা কখনো দাবি করিনি, পরিচয় দেইনি এবং কোথাও লিখিওনি। সমন্বয়ক পদ নেওয়া বা এর নাম ভাঙ্গিয়ে কোথাও কিছু করা আমার এথিক্সে নেই, এ ব্যাপারে কেউ কোনো প্রমাণও দিতে পারবে না। কিন্তু খাতা-কলমে সমন্বয়ক না থাকলেও আমি আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছু সমন্বয় বা কো-অর্ডিনেশন ও পলিসি মেকিংয়ের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম, এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আজ বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সাদিক বলেন, যখন সমন্বয়কদের তালিকা তৈরি হয় এবং কারা এতে থাকবে সেটা প্রস্তুতের সাথেই আমি যুক্ত ছিলাম। বৃহৎ স্বার্থেই আমার নাম দেইনি এবং ৫ আগস্ট পরবর্তীতেও এটির ব্যবহার আমি করিনি, প্রয়োজনও মনে করিনি। তবে কোনো কোনো মিডিয়া হয়তো ‘সংগঠক’ ও ‘কো-অর্ডিনেটর’- এর মত কয়েকটি শব্দ ব্যবহার করেছে। আন্দোলন চালাতে ক্রুশিয়াল মুহূর্তে আমরা কিছু কাজ করতে পেরেছি, এটা আল্লাহর রহমত ছিল আমাদের জন্য, এটাই আমাদের বড় অর্জন। সমন্বয়ক বা অন্যকোনো পরিচয় আমার কাছে কিছুই না।

তিনি বলেন, আন্দোলনের ক্রেডিট শহীদদের এবং আমারদের গাজীদের, তারাই আমাদের রাস্তা দেখিয়েছেন। আন্দোলনে সকলের অংশগ্রহণ ও আন্তরিকতা ছিল। যার কারণেই আমরা সফলতার দেখা পেয়েছি। ৫ জুন থেকে আন্দোলনের শেষ পর্যন্ত আমরাসহ অনেক স্টেকহোল্ডার আন্দোলনে যুক্ত ছিল, এটা কো-অর্ডিনেশনের মাধ্যমে হয়েছে। যখন ইন্টারনেট ছিল না, ব্ল্যাক আউট ছিল, কারিফিউ জারি ছিল, সমন্বয়কদের অনেকেই যখন আত্মগোপনে ছিল, কাউকে কাউকে যখন গুম করা হয়েছিল, তখন নয় দফা প্রনয়ণ করা থেকে মাঠ পর্যায়ে আন্দোলন সমন্বয় করা, মিডিয়াতে মেসেজ পৌঁছে দেওয়া, সমন্বয়কদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা, নানা অংশীজনদের সঙ্গে আমরা যুক্ত ছিলাম। বিশেষ করে, ১৯ জুন থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত প্রথম সারির সমন্বয়কদের অনুপস্থিতিতে আন্দোলন চালিয়ে যেতে নীতি-নির্ধারনী পর্যায়ে কাজ করার সুযোগ হয়েছে।

তিনি কারো ম্যান নন দাবি করে বলেন, জুলকারনাইন সায়ের, পিনাকী ভট্টাচার্য, ইলিয়াস হোসাইন, শহিদুল আলমসহ অন্যান্য সাংবাদিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, বাম-ডান-মধ্যমপন্থি সকল দল-মতের অনেকের সাথে এবং অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই (প্রায় ৩০-৩৫ স্টেক) আমি যোগাযোগ রক্ষা করেছি। কিন্তু আমি তাদের কারো ম্যান নই। আমি আন্দোলনের স্বার্থেই তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি। আমাকে কারো ম্যান বা বেল্টের অন্তর্ভুক্ত করে দেওয়া একেবারেই অবান্তর, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রনোদিত।

আন্দোলনে নিজেদের কার্যক্রমের ব্যাপারে সাদিক বলেন, আমরা দেখেছি, ক্রুশিয়াল সময়ে যারা আন্দোলন লিড করেছেন, ৫ আগস্ট পরবর্তীতে তাদেরকে সাইড করে দেওয়া হয়েছে। ছাত্রশক্তির কোরাম তৈরি করে বৈষম্যবিরোধী প্লাটফর্মকে ভঙ্গুর করে দেওয়া হয়েছে। সমন্বয়ক নাম ভাঙ্গিয়ে তাদের অনেকে একটা সময় বিভিন্ন ফায়েদা লুটতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তখন আমরা শহীদ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। ডকুমেন্টেশনের কাজ করেছি।

সাদিক কায়েম সবশেষে বলেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির আন্দোলন সফল করার জন্য কতটুকু চেষ্টা করেছে তা অনেকেই জানে। যারা বিষদগার ছড়াচ্ছে তারা নিজেরাও জানে। জুলাইয়ের চেতনা ধারণ করে যেখানে আামাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা সেখানে এভাবে একে অপরের প্রতি বিষদগার ছড়ানোটা হতাশাজনক। বিশেষ করে, একটা দলের প্রধান হয়ে তার নিজের এরকম করা অপ্রত্যাশিত। এরকম রেষারেষির মাধ্যমে শহীদ ও আহতদের পরিবার ব্যথিত হচ্ছে।

এর আগে, বৃহস্পতিবার দুপুরে ফেসবুকে নাহিদ জুলাই আন্দোলনে ঢাবি শিবিরের সাদিক কায়েমের ভূমিকা ও সাম্প্রতিক সময়ে তার প্রচারণা নিয়ে মন্তব্য করে লেখেন, শিবির নেতা সাদিক কায়েম সম্প্রতি একটা টকশোতে বলেছেন ছাত্রশক্তির গঠনপ্রক্রিয়ায় শিবির যুক্ত ছিল, শিবিরের ইনস্ট্রাকশনে আমরা কাজ করতাম। এটা মিথ্যাচার। 'গুরুবার আড্ডা' পাঠচক্রের সাথে জড়িত একটা অংশ এবং ঢাবি ছাত্র অধিকার থেকে পদত্যাগ করা একটা অংশ মিলে ছাত্রশক্তি গঠিত হয়। সাথে জাবির একটা স্টাডি সার্কেলও যুক্ত হয়। একটা নতুন ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুবার আড্ডা পাঠচক্রে দীর্ঘসময় ধরে কাজ করা হয়েছে। আমরা ক্যাম্পাসে আট বছর রাজনীতি করছি। ফলে প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সব সংগঠন ও নেতৃত্বকে আমরা চিনতাম এবং সকল পক্ষের সাথেই আমাদের যোগাযোগ ও সম্পর্ক ছিল। সেই কারণে ঢাবি শিবিরের সাথেও যোগাযোগ ছিল। যোগাযোগ, সম্পর্ক বা কখনো সহোযোগিতা করা মানে এই না যে তারা আমাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল।

সাদিক সমন্বয়ক ছিলেন কিনা সে বিষয়ে নাহিদ বলেন, সাদিক কায়েম বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সমন্বয়ক ছিলনা। কিন্তু ৫ই অগাস্ট থেকে এই পরিচয় সে ব্যবহার করেছে। অভ্যুত্থানে শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে সাদিক কাইয়ুমকে প্রেস ব্রিফিং এ বসার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সাদিক কাইয়ুমরা অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ঢালাও প্রচারণা করেছে এই অভ্যুত্থান ঢাবি শিবিরই নেতৃত্ব দিসে, আমরা সামনে শুধু পোস্টার ছিলাম। অভ্যুত্থানে শিবিরের ভূমিকা কেউ অস্বীকার করে নাই। কিন্তু এই অভ্যুত্থান শিবিরের একক নয়, শিবিরের ইনস্ট্রাকশন বা ডিরেকশনও হয় নাই। আমরা সব পক্ষের সাথে যোগাযোগ করেই সিদ্ধান্ত নিতাম। আর কারা ক্ষমতার ভাগ বাঁটোয়ারা করতে চাইছে, গোষ্ঠী স্বার্থ রক্ষা করতে চাইছে সে বিষয়ে অন্যদিন বলবো।

 

 


সর্বশেষ সংবাদ