ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে সাবেক সমন্বয়কের ওপর হামলার অভিযোগ
- ফেনী প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫, ০৮:২৮ AM , আপডেট: ২১ জুন ২০২৫, ০২:১১ PM
ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কসহ তিনজন ছাত্র প্রতিনিধির ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে জেলা ছাত্রদলের সহ-সম্পাদক ও ফেনী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের পদ স্থগিত হওয়া জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (৬ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে শহরের হাসপাতাল মোড় এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।
আহতরা হলেন—বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফেনীর সাবেক সমন্বয়ক আবদুল্লাহ আল মাহফুজ, সাবেক সহ-সমন্বয়ক সালমান হোসেন ও সংগঠনের প্রতিনিধি নাদিয়া আক্তার খুশি। তাঁরা বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন।
সাবেক সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, ‘আমরা তিনজন ফেনী সদর হাসপাতালে একজন অসুস্থ সহকর্মীকে দেখতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে বেরিয়ে হাসপাতাল মোড়ে দাঁড়িয়ে আলোচনা করছিলাম। হঠাৎ করে কলেজ ছাত্রদল নেতা জিল্লুর রহমান এসে নাদিয়াকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। কয়েক মাস আগে নাদিয়া ফেসবুকে কলেজ ছাত্রদলের কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে পোস্ট করেছিল। সেই ক্ষোভ থেকেই জিল্লুর এমন আচরণ করেন।’ মাহফুজ বলেন, ‘আমরা তাকে গালিগালাজ করতে নিষেধ করলে সে রেগে গিয়ে আমার ওপর চড়াও হয়। এরপর তার সঙ্গে থাকা কয়েকজনকে নিয়ে এসে আমাদের ওপর চাপাতি ও অন্যান্য ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।’
হামলার বিষয়ে অভিযুক্ত জিল্লুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানান জাতীয় নাগরিক পার্টির দপ্তর সম্পাদক সালেহ উদ্দিন সিফাত। তিনি লিখেছেন, ‘কয়েকদিন আগেই এক সাংবাদিককে হুমকি দিয়েছিল এই ছাত্রদল নেতা। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির খবর ছাপা হলে সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। এরপরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং তার পক্ষ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের কথা বলতে দেখা গেছে। তার এমন ‘দৈব’ ক্ষমতা কোথা থেকে আসে, তা আমরা জানতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফেনীর প্রশাসন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদল কী পদক্ষেপ নেয়, তা এখন দেখার বিষয়। পুরোনো সহিংসতার সংস্কৃতিকে আমরা আর ফিরতে দিতে চাই না। হামলাকারীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।’
ঘটনার পর রাতেই বিক্ষোভ মিছিল বের করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সালাউদ্দিন মামুন বলেন, ‘পূর্বে জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পাওয়ার পর তার পদ স্থগিত করা হয়েছিল। এবারও যদি প্রমাণিত হয় যে, সে এই হামলায় জড়িত, তাহলে দলীয়ভাবে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামসুজ্জামান বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, গত ৪ মে ফেনীর একটি স্থানীয় পত্রিকায় চাঁদাবাজির অভিযোগে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে, ছাত্রদল নেতা জিল্লুর রহমান প্রতিবেদনটি করা স্টাফ রিপোর্টারের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ তার পদ স্থগিত করেন।
ঘটনার পর ফেনীর রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং শিক্ষার্থী সমাজে উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের মতে, এটি ফেনীতে ছাত্র রাজনীতির সহিংস ও দায়মুক্ত সংস্কৃতির এক অস্বস্তিকর প্রতিচ্ছবি।