সায়েন্সল্যাব অবরোধ আন্দোলনকারীদের, নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৪, ১১:৩৩ AM , আপডেট: ০৪ আগস্ট ২০২৪, ১১:৩৩ AM
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচির সমর্থনে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তবে পুরো এলাকার কোথাও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখা যায়নি। রবিবার (৪ আগস্ট) সকাল ১০টার পর অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী সড়কে অবস্থান নেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মিরপুর সড়কে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। এসময় শিক্ষার্থীদের ‘এক, দুই, তিন, চার-খুনি হাসিনা গদি ছাড়’, ‘এই বাংলায় হবে না, বৈষম্যের ঠিকানা’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘এসো ভাই এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন’, ‘চলছেই চলবে, আমাদের আন্দোলন’-সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে শোনা গেছে। অবরোধের ফলে এই সড়কে সবধরনের যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
একদফা দাবিতে রোববার সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে ফেসবুকে এক পোস্টে এ তথ্য জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। তিনি জানান, এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বিক্ষোভ ও গণসমাবেশ পালিত হবে।
আরও পড়ুন: আনুষ্ঠানিকভাবে এক দফা দাবি ঘোষণা
এদিকে, অবরোধ কর্মসূচির প্রভাব পড়েছে রাজধানীর সড়কে, চলছে শুধু রিকশা-সিএনজি। সড়কে মাঝে মাঝে বাসের দেখা মিললে তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখা গেছে যাত্রীদের। গণপরিবহন সংকটে ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী যাত্রী, জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষ, হাসপাতালগামী রোগী ও স্বজনরা।
এর আগে, শনিবার সন্ধ্যা থেকে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের বাসাবাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাসায়, সাতটার দিকে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসায় হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর দুই নম্বর গেট থেকে বহদ্দারহাট মোড় পর্যন্ত গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
রাত ৮টা থেকে শুরু হয় বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ডা. শাহাদাৎ হোসেন, মীর নাছির উদ্দিন চৌধুরী ও এরশাদ উল্লাহার বাসায় ভাঙচুর, গুলি ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা।
আরও পড়ুন: গণজোয়ারে উত্তাল শহীদ মিনার, তিল ধারণের ঠাঁই নেই
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, সন্ধ্যা থেকে আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা হয়েছে। ঘটনাস্থলে প্রশাসন কাজ করছে।
এর আগে শনিবার বিকেলে জাতীয় শহীদ মিনার থেকে ছাত্র-জনতার গণমিছিল থেকে এক দফা ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবি—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগ।
এরপর এক দফা নিয়ে একটি ভিডিও বার্তা প্রদান করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার যে গণ বিস্ফোরণে মানুষ এক দফার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: সেনাবাহিনী জনগণের পাশে আছে ও থাকবে: সেনাপ্রধান
যতদিন পর্যন্ত আমাদের এই এক দফা বাস্তবায়ন না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত আপনারা যেসব জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো পালন করবেন। বিজয় নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে—যুক্ত করেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশে এখন পর্যন্ত ২১৬ জনেরও বেশি আন্দোলনকারী এবং শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের দাবি—এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনকারী ও সাধারণ মানুষ আহত হয়েছে।
পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্য ও সরকার সমর্থক ছাত্রলীগ এবং তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের হামলায় এসব আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলেও দাবি আন্দোলনকারীদের।
আরও পড়ুন: রাতভর গুজবে সয়লাব ফেসবুক
এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথার বাতিল চেয়ে আন্দোলনে নামে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর আন্দোলন তীব্র হতে থাকলে মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকার সমর্থকরা। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে মামলা হয়। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে।