সংঘর্ষ-মারামারিতে জড়িয়ে শাস্তির মুখে রাবি ছাত্রলীগের তিন নেতাকর্মী

শামসুল আরিফিন খান সানি, আজিজুল হক আকাশ ও  আতিকুর রহমান আতিক
শামসুল আরিফিন খান সানি, আজিজুল হক আকাশ ও আতিকুর রহমান আতিক  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, নিরাপত্তা প্রহরীকে মারধর এবং শিবির আখ্যা দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর ও হত্যার হুমকির ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। মঙ্গলবার (২৮ মে) রাতে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক অনুপম হীরা মন্ডল হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর এই প্রতিবেদন জমা দেন।

জানা গেছে, তদন্ত প্রতিবেদনে শাখা ছাত্রলীগের এক নেতাকে হল ত্যাগ ও দুই কর্মীর ছাত্রত্ব বাতিলসহ আটটি সুপারিশ করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির একটি সূত্র জানিয়েছে, অনুসন্ধান অনুযায়ী সংঘর্ষের পূর্বের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক (বহিষ্কৃত) নিয়াজ মোর্শেদ অতিথি কক্ষে আলোচনার এক পর্যায়ে বের হয়ে যান। তখন হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অতিকুর রহমান বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীদের ডেকে তিনিসহ শাখা ছাত্রলীগের কর্মী শামুসল আরেফিন খান সানি ও আজিজুল হক আকাশ বহিরাগত শিক্ষার্থীদের নিয়ে হলের ভেতরে মিছিল করে। মিছিলের এক পর্যায়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরবর্তীতে এটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়।

এদিন হলের ১৯৪ নম্বর কক্ষটি ভাঙচুর করা হলেও কারা এটি করেছে তদন্ত কমিটি তা উদঘাটন করতে পারেনি। তবে সংঘর্ষের পরদিন সকালে হলের নিরাপত্তা প্রহরী মনিরুলকে মারধরের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এছাড়া সবুজ বিশ্বাস সোহরাওয়ার্দী হলেরই শিক্ষার্থী নয়, সে হলে দলীয় পরিচয়ে অবস্থান করছিল বলে জানায় তদন্ত কমিটি।

 

এসব ঘটনায় অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ১৯৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান আতিকের আবাসিকতা বাতিল এবং হল ত্যাগের নির্দেশ, মাদার বখ্শ হল শাখা ছাত্রলীগ কর্মী শামসুল আরেফিন খান সানি এবং মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগ কর্মী আজিজুল হক আকাশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব বাতিল এবং আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। এছাড়া হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক (বহিষ্কৃত) এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদকে মৌখিকভাবে সতর্ক করারও সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গতকাল রাতে তদন্ত কমিটি আমাকে প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছে। এ বিষয়ে আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় আমাদের একটা মিটিং আছে। মিটিং শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য প্রতিবেদনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করব।

এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের অতিথি কক্ষে বসাকে কেন্দ্র করে গত ১১ মে রাবি শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষেও মধ্যে ককটেল বিস্ফোরণ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও দফায় দফায় রামদা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে জড়ানো ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ হলো বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান এবং শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (বহিষ্কৃত) ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ।

সংঘর্ষের ঘটনায় পরদিন ১২ মে সকালে তথ্য পাচারের অভিযোগ তুলে হলের নিরাপত্তা প্রহরী মুনিরুলকে বেধড়ক মারধর করেন হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান, শাখা ছাত্রলীগ কর্মী সানি এবং আকাশ। এর পরদিন ১৩ মে রাতে এক নেতাকে ‘হত্যার’ হুমকি দেওয়ার অভিযোগে নিয়াজ মোর্শেদের বিপরীত পক্ষের মধ্যে আবারও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

এ সব ঘটনায় ১৪ মে রাতে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহিনুল সরকার ডন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোর্শেদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু ও সাংগঠনিক সম্পাদক কাবিরুজ্জামান রুহুলকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। বহিষ্কৃতরা সবাই বর্তমান কমিটির বিপরীত পক্ষ হয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলেন।

এছাড়া ১৬ মে মধ্যরাতে হলের ছাদে নিয়ে সবুজ বিশ্বাস নামের সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর ও শিবির আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠে হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence