জাবির দুই ছাত্র নেতাকে বহিষ্কারে ১১১ নাগরিকের উদ্বেগ

বহিষ্কার দুই ছাত্রনেতা
বহিষ্কার দুই ছাত্রনেতা  © ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ১১১ জন নাগরিক। শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একতরফাভাবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায় এবং ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারের আদেশ দিয়েছে।

এতে বলা হয়, একইসঙ্গে রাষ্ট্রীয় আইনে এই দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই দুই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আমরা মনে করি, এদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা চাতুর্যপূর্ণ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আর নাসরীন, নাট্যকার মাসুম রেজাসহ দেশের বিশিষ্ট ১১১ নাগরিক বলেছেন, ‘যে প্রক্রিয়ায় দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তা নিয়মের স্পষ্ট ব্যত্যয়। অমর্ত্য রায় এবং ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলিকে কোনো প্রকার কারণ দর্শানোর নোটিশ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও ডিসিপ্লিনারি সভা আয়োজন ব্যতিরেকে বহিষ্ককারের ঘটনা চূড়ান্ত অগণতান্ত্রিক; যা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে বিরল ও ন্যাক্কারজনক।’

সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীর প্রতি সহিংস আচরণের এক বর্বরতম ঘটনা জানা গেছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এর প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের বাইরে অবস্থান নিয়েছেন; পাশাপাশি দোষীদের বিচার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতি ও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য দায়ী করেছেন। আমরা আশঙ্কা করছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরাগভাজন হওয়ায় এই দুই শিক্ষার্থীকে নিজেদের প্রতিষ্ঠানেই বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে।’

এই দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কথা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের বাইরের দেয়ালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়ালচিত্র মুছে তার উপর আন্দোলনরত একটি ছাত্র সংগঠনের ধর্ষণবিরোধী দেয়ালচিত্র অঙ্কন করার অভিযোগ আনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের যে স্থানে ওই দেয়ালচিত্রটি ছিল, দেখা যাবে ২০১৯ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আন্দোলনের সময় ঠিক সেই স্থানে একটি ক্যারিকেচার এঁকেছিলেন সেই সময়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

সেই ক্যারিকেচারটি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই সময়ের বাস্তবতায় নানাভাবে প্রাসঙ্গিক ছিল না, বরং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রাজনীতির রূপায়নও ছিল। তবে সেই ক্যারিকেচারটির উপর হঠাৎ করেই বঙ্গবন্ধুর ছবিসম্বলিত দেয়ালচিত্রটি আঁকা হয়েছিল, যার ফলে আগের ক্যারিকেচারটিকে লোকচক্ষুর আড়ালে নেওয়ার কোনও উদ্দেশ্য ছিল কিনা, সেই প্রশ্নও সামনে আসতে পারে।

আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর ছবি মুছে ব্যঙ্গচিত্র, ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতা বহিষ্কার

বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ছাত্র রাজনীতির একটা সাধারণ সংস্কৃতি হলো, একই দেয়াল ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন সংগঠন তাদের আন্দোলন ও সাংগঠনিক প্রচারের কাজে ব্যবহার করে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের শুরু থেকেই এটা ঘটে আসছে।

কিছুদিন ধরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্নমতের প্রকাশ হিসেবে দেয়াল লিখন ও দেয়ালচিত্রগুলো কণ্ঠরোধ করার জন্য এহেন বিরোধী লিখন বা চিত্রের উপর বঙ্গবন্ধু বা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সম্পর্কিত দেয়ালচিত্র এঁকে দেওয়া বা কিছু লিখে দেওয়া বেশ সাধারণ একটি প্রবণতা হিসেবে সামনে এসেছে। কারণ বঙ্গবন্ধুর দেয়ালচিত্র মুছে তার উপর অন্য যে কোনও চিত্রাঙ্কন বা দেয়াল লিখনকে খুব সহজেই জাতির পিতার অবমাননার দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া যায়।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে এই ধরনের চতুর কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে বলে মনে করেন ১১১ নাগরিক। তারা বলেন, ‘এটা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখেছি- এইভাবে একতরফা, বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে জবাবদিহি না থাকা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছে না। এতে করে স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে এ দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলে দেশের শিক্ষাঙ্গণে গণতান্ত্রিক চর্চা গভীর সংকটে নিপতিত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

অবিলম্বে অমর্ত্য রায় ও ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলির বহিষ্কারাদেশ বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। একই সঙ্গে তারা কোনও দীর্ঘসূত্রিতা ছাড়া অভিযুক্ত ধর্ষকদের বিচারের আওতায় আনা এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে ধর্ষক ও নিপীড়ক মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, ‘আশা করি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ