দু’গ্রুপের সংঘর্ষের পর যবিপ্রবি ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:৫২ PM , আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:২৮ PM
আজ শনিবার (১৪ অক্টেবার) যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) শাখা ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো: আল মামুন সিমনসহ আরও ৪ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। পরে রাতে এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
আহত শিক্ষার্থীরা হলেন-নৃপেন্দ্র নাথ রয়, আশরাফুল আলম, আশরাফুল ইসলাম ও জামিল খান। এ ঘটনায় আহতরা বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জানা যায়, আজ দুপুর ১টায় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আল মামুন সিমন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান শিহাব ও এস.এম ইকরামুল কবির দ্বীপের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে মৌলবাদ বিরোধী একটি মিছিল শুরু হয়। এতে অংশ নেন শাখা ছাত্রলীগের শহীদ মসিয়ূর রহমান হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বিপ্লব দে শান্ত, শেখ হাসিনা ছাত্রী হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়রা আজমিরা এরিন সহ অন্যান্য কর্মীরা। মিছিল শেষে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাবেশ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সমাবেশ শেষে আনুমানিক ২ টা ৪৫ মিনিটে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আল মামুন সিমনসহ নেতাকর্মীরা হলে যাওয়ার জন্য রওনা হলে পথিমধ্যে কিছু ছাত্রলীগ কর্মী লাঠিসোটা নিয়ে ধাওয়া করে। এসময় তারা আল মামুন সিমনকে মারধর করেন। সিমনকে মারধর করতে দেখে জিন প্রকৌশল ও জৈব প্রযুক্তি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম তার নিজস্ব মুঠোফোন বের করে ভিডিও ধারণ করতে থাকলে ঐ শিক্ষার্থীকেও মারধর করে হামলাকারীরা। এক পর্যায়ে সিমন ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে পুলিশি পাহারায় যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মারধরের ঘঠনায় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আল মামুন সিমন বলেন, মৌলবাদ বিরোধী একটি মিছিল ও সমাবেশ করেছি আজ। যবিপ্রবিতে আমার অনার্স শেষ হয়েছে, সামনে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হবো। অনেকদিন পর ক্যাম্পাসে এসেছি। মিছিল করার পরে হলের দিকে যাচ্ছিলাম, হঠাতই সভাপতি সোহেল রানা ও সম্পাদক তানভির ফয়সালের অনুসারী মনিরুল ইসলাম হৃদয়, রাইসুল হক রানা, মোহাম্মদ রাফি, রাকিব, লিমন, শাহিনুর, সোহেল রানা, রকি, লাবিব শোয়েব, রাব্বি, মেহেদীসহ প্রায় ৪০ জন ছাত্রলীগকর্মী হকিস্টিক ও লাঠিসোঁটা দিয়ে আমাকে এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করে।
মারধরের শিকার জিন প্রকৌশল ও জৈব প্রযুক্তি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম বলেন, ক্লাস শেষ করে মাঠে খেলা দেখছিলাম। হঠাৎ কিছু ছেলে হাতে লাঠি চাপাতি রড বাশ সহ সিমন ভাইতে মারতে মারতে আসে। দেখলাম আশেপাশে এতগুলো লোক কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করছেনা। তারপর আমি পকেট থেকে মোবাইল বরে করা মাত্রই সবাই আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। বড় ডান্ডা দিয়ে আমার হাত, মাথা ও পিঠে অনেক বাড়ি দিয়েছে। ঐ শিক্ষার্থী আরো জানান, আমি ওদের বলি ভাই আপনারা আমার ফোন চেক করেন, ভিডিও করিনি আমি। আমার কোনো কথা না শুনেই বেলাল, শাহিনুর, সোহেল রানা, লাবিব সহ প্রায় ৪০ জন ছাত্রলীগকর্মী বহিরাগত বলে আমার উপর হামলা চালায়। এমনকি প্রক্টর ড. হাসান মোহাম্মদ আল ইমরান স্যারের সামনে আমাকে মারধর করা হয় এবং আমাকে জীবন নাশের চেষ্টা করা হয়।
আহত ছাত্রলীগকর্মী নৃপেন্দ্র নাথ রায় বলেন, হলের রান্না শেষ না হওয়ায় বাহিরে খেতে যাচ্ছিলাম তখন শান্ত ও সিমনরা দুটি গাড়ি নিয়ে আসে এবং আমাকে থামিয়ে বলে তুমিতো দূর থেকে এসে খুব রাজনীতি করছো। তারপর আমি একটু তর্কাতর্কি করছি, এক পর্যায়ে আমাকে চড় থাপ্পড় মারে। আমি প্রতিরোধ করতে গেলে পাশে থাকা ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে। তারপর আমি হলের মধ্যে দৌড়ে গিয়ে বড় ভাইদের ডাকি, তারপর আমি মেডিকেলে যাই।
এবিষয়ে যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটির তিনজন যাদের একজন আজকেই প্রথম ক্যাম্পাসে আসে সহ-সভাপতি সিমন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিহাব, দ্বীপ, ছাত্র হলের সাবেক সভাপতি যার বিশ্বিবদ্যালয়ে এখন ছাত্রত্ব নাই এবং ছাত্রী হলের সাবেক সম্পাদক যিনি শহরে থাকেন শশুর বাড়িতে। তাদের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে একটি মিছিল হয় এবং মিছিল পরবর্তীতে তারা প্রশাসনিক ভবনের সামনে বক্তব্য প্রদান করে। মিছিল শেষ করে এদের কেউ কেউ চলে গেছে। পরবর্তীতে সিমনসহ অপরিচিত তিনজন মিলে আমাদের ছাত্রলীগের কর্মী এবং হিন্দু ছাত্র পরিষদের সহ-সভাপতি নৃপেনকে আটকে মারপিট করেছে, যার ফলে তার মাথা ফেটে গেছে। তারপর তার বন্ধুরা পাল্টা ধাওয়া দিলে সে চলে যায়। সিমনকে মারধর এর বিষয়ে সোহেল রানা বলেন, মারধরের অভিযোগ মিথ্যা, তাদের কে শুধু ধাওয়া দেওয়া হয়েছে। তারপর প্রক্টর স্যার সুন্দরভাবে তাদেরকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়। এর বাইরে কোন কিছু হয়নি।
সংঘর্ষের ঘটনায় যবিপ্রবি প্রক্টর ড. হাসান মোহাম্মদ আল ইমরান বলেন, আমি দুটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। দুপুরের দিকে একদল শিক্ষার্থী দুজন শিক্ষার্থীর উপর অতর্কিত আক্রমন করে তাদেরকে আহত করে। আহত শিক্ষার্থীদের পুলিশ প্রটেকশন এর মাধ্যমে সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেছি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা মাননীয় উপাচার্য মহোদয়ের কাছে তদন্ত কমিটি গঠন এর আবেদন জানাবো। এবং তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এর মাধ্যমে আমরা সুষ্ঠু বিচারকার্য সম্পন্ন করবো।
যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে মারামারি করবে এবং মারামারি করে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধ করে দিবে এটি অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এর আগেও তারা শিক্ষকদের গাড়ি বন্ধ করে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত করেছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও যশোর জেলা রাজনীতিবিদদের এটি দেখভাল করা উচিৎ। তারা আহত শিক্ষার্থীদের অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখে। এছাড়াও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধরসহ মারামারির অভিযোগের তদন্তের ভিত্তিতে যারা এ ঘটনা গুলোয় দোষী সাব্যস্ত হবে আমি তাদের অবশ্যই বিচার করব।