শৃঙ্খলার জন্য পুরস্কারপ্রাপ্ত এসআই নুর বাদ পড়লেন ‘শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে’
- তাহমিনা আক্তার
- প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৫, ০৪:৩৮ PM , আপডেট: ১৭ মে ২০২৫, ০৭:৩৮ PM
মো. নুর সাদিক। ৪০তম ক্যাডেট ব্যাচের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাব–ইন্সপেক্টর (এসআই)। দীর্ঘ এক বছর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর চাকরিতে যোগদানের কিছুদিন পূর্বে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তাকে অব্যাহতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। চাকরি হারিয়ে ৪০তম ক্যাডেট ব্যাচের এই এসআই জানান, তার স্বপ্ন ছিল এই চাকরিতে যোগদান করে পরিবারের আর্থিক দায়িত্ব নেওয়ার। কিন্তু সেখানে তিনি এখন পরিবারের বোঝা হয়ে রয়েছেন।
নুর সাদিকের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার ছোট বিনাইরচর গ্রামে। তার বাবা একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি বাবা-মায়ের দ্বিতীয় সন্তান। ক্যামব্রিয়ান কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন সাদিক।
পুলিশের ট্রেনিংয়ে যোগদান প্রসঙ্গে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে নুর সাদিক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে পুলিশের নীল পোশাকের প্রেমে পড়ে যাই। এত তীব্র আকর্ষণ অনুভব করি যে, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন ভুলে এসআইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। ২০১৯ সালে ৩৮তম ব্যাচ এর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করি, কিন্তু সফল হতে পারিনি। পরের বছর ৩৯তম নিয়োগে আবেদন করি। তবে দুর্ভাগ্যবশত প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং টেস্টেই বাদ পড়ে যাই, ফলে ফিল্ড পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাইনি। এদিকে হাতে আছে আর একটি নিয়োগ পরীক্ষা, তারপর বয়স শেষ। তবুও হাল ছাড়িনি। অবশেষে আল্লাহর অশেষ কৃপায় ৪০তম ব্যাচে ১১টি নক আউট পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে ১ বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য যোগদান করি।’
এদিকে, চাকরিতে যোগদানের মাত্র ১২ দিন আগে অব্যাহতি পান নুর সাদিক। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এত হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর এক মিথ্যা অভিযোগে আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হlলো। আমি নাকি পাসিং প্যারেড থেকে দেরিতে মাঠ ত্যাগ করেছি এবং অন্যদেরকে উসকানিমূলক কথাবার্তা বলেছি। সারদায় প্রশিক্ষণকালে শৃঙ্খলা মেনে চলার জন্য মাস্টার প্যারেডে সিনিয়র কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়। আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, তিনটি মাস্টার প্যারেডেই ‘গুড সার্ভিস’ ক্যাটাগরিতে আমার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘এ চাকরিতে যোগদানের পথটা আমার জন্য খুব মসৃণ ছিল না। আমি টিউশন করে নিজের পড়ার খরচ নিজে যুগিয়েছি। এরপর একটা বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দিই। এসআইয়ের ট্রেনিংয়ে যোগদানের জন্য আমাকে সে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। কিন্তু আমাকে বিনা অপরাধে অব্যাহতি দেওয়া হলো। এখন চাকরির জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কিন্তু পুলিশ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার কথা জানার পর কেউ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাবার স্বল্প আয়ে ৮ সদস্যের পরিবারের সংসার খরচ চালানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। তার ঋণের বোঝা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ভেবেছিলাম চাকরি পেয়ে বয়স্ক বাবা-মা, ছোট ভাইয়ের দায়িত্ব নেব, কিন্তু সেখানে আমি পরিবারের বোঝা হয়ে গেলাম। তার ওপর মানুষের কটু কথা, সামাজিকভাবে প্রতিনিয়ত হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছি। আমিসহ আমার পুরো পরিবার ট্রমাটাইজড হয়ে আছি। আমি আমার অধিকার ফেরত চাই। রাষ্ট্রের বোঝা নয়, রাষ্ট্রের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ চাই।’