দেশের প্রথম কলসেন্টারভিত্তিক ব্লাডব্যাংক 'ব্লাডম্যান'

দেশের প্রথম কলসেন্টারভিত্তিক ব্লাডব্যাংক 'ব্লাডম্যান'
দেশের প্রথম কলসেন্টারভিত্তিক ব্লাডব্যাংক 'ব্লাডম্যান'  © টিডিসি ফটো

আপনি বসবাস করেন যানজটের শহর ঢাকায়। হঠাৎ করেই আপনার কাছে ফোন এলো- পরিচিত একজনের খুব ইমার্জেন্সি রক্ত দরকার। কিন্তু আপনি তো সুপারম্যান বা স্পাইডারম্যান নন; হাসপাতালে যেতে যেতেই আপনার সেই রোগীর মৃত্যু হয়ে গেল। অথচ আপনার রক্ত পেলে হয়ত বেঁচে খাকতে পারত সে। এমন সমস্যার সমাধান কী হতে পারে?

এই সমস্যার সমাধান করতেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের থেকে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন শাহরিয়ার হাসান জিসান। বিভিন্ন সময় তিনি দেখেছেন কিভাবে সময়মতো প্রয়োজনীয় রক্ত না পেলে রোগী মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়ে যায়। এই উপলব্ধি থেকেই ২০১৪ সালে বন্ধুদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন অনলাইনভিত্তিক ব্লাডব্যাংক– ব্লাডম্যান।

ব্লাডম্যান চেষ্টা করে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে– দ্রুততম সময়ে মুমূর্ষু রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় রক্তের ব্যবস্থা করতে। ব্লাডম্যানের রয়েছে রক্তদাতাদের একটি বড় ডাটাবেইজ, একটি ২৪ ঘণ্টারকলসেন্টার এবং জিপিএস সুবিধাসহ একটি মোবাইল অ্যাপ।

এর পাশাপাশি রয়েছে একটি অভিনব সুবিধা যার মাধ্যমে ঢাকার যানজট সমস্যার মধ্যেও ঠিক সময়মতো রোগীর কাছে রক্তদাতাকে পৌঁছে দেয় ব্লাডম্যান। প্রয়োজনে রক্তদাতাকে মোটরসাইকেলে করে রোগীর কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। রক্তের প্রয়োজনে যে কেউ ০১৬২৭২৬০৯৩৩ নম্বরে ফোন করলেই মাত্র ৩০০ টাকার একটা সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে পেতে পারেন এই সুবিধা। ব্লাডম্যানের ওয়েবসাইটের ঠিকানা: www.bloodman.org

জিসান বলেন, কল সেন্টারে ব্যয় নির্বাহ, কর্মচারীদের বেতন, মোটরসাইকেলে তেলের খরচ ও আনুষঙ্গিক খরচ চালানোর জন্য এই টাকাটুকু ব্যয় করা হয়। তবে অসহায় বা দরিদ্র রোগীদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই সুবিধা দিয়ে থাকে ব্লাডম্যান।

তিনি আরও বলেন, ২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। গ্রাম থেকে কোনো আত্মীয় স্বজন ঢাকার কোনো হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এলে রক্তের প্রয়োজন হলেই ফোন করতো। তখন থেকেই মাথায় ভাবনা ঘুরছিলো অনলাইন ভিওিক কিছু কীভাবে করবো।

ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সায়েন্সে পড়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের ডাটাবেইজ বা তথ্যভাণ্ডার নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা ছিলো জিসানের।

২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ৭ বন্ধুকে সাথে নিয়ে জিসান প্রতিষ্ঠা করেন অনলাইনভিত্তিক সংগঠন 'ব্লাডম্যান'।

বর্তমানে ব্লাডম্যানের ১৮৪ জনের একটি টিম কাজ করছে এবং প্রয়োজনে মানুষের কাছে রক্তাদাতাকে পৌঁছে দিচ্ছেন তারা। গড়ে প্রতিদিন ১৬ জন রোগী ররক্তের প্রয়োজন মেটাচ্ছে ব্লাডম্যান।

গত ৪ বছরে তারা অন্তত১৬ হাজার রক্তদাতাকে রোগীর কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। ব্লাডম্যানের চিকিৎসা-সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখেন সংগঠনটির সহঃপ্রতিষ্ঠাতা ডা: মঞ্জুর হোসাইন চৌধুরী। এছাড়াও, অন্যান্য কার্যক্রমগুলো তদারক করেন অন্যতম আরো তিন সহপ্রঃপ্রতিষ্ঠাতা নিয়াজ মাহমুদ, আরজে সালমান এবং নাঈম।

মাসিক স্বাস্থ্য ক্যাম্প আয়োজনের মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান করে ব্লাডম্যান। এছাড়াও, হাসপাতাল ও বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যৌথভাবে নিয়মিত রক্তদান কর্মসূচিও আয়োজন করে থাকে সংগঠনটি।

২০১৬ সালে 'গ্লোবাল লিডারশিপ এ্যাওয়ার্ড' অর্জন করে ব্লাডম্যান। আর ২০১৭ সালে বিজয়ী হয় 'ব্র্যাক আর্বান ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ' প্রতিযোগিতায়। সেই সুবাদে ব্র্যাকের কাছ থেকে অফিস স্পেস এবং ৫ লক্ষ টাকা অনুদান পায় সংগঠনটি।

বাংলাদেশ সরকারের অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন প্রকল্পে কর্মরত জিসান জানান ব্লাডম্যান নিয়ে তার স্বপ্নের কথা। ব্লাডম্যানের একটি বড় লক্ষ্য হলো ইউনিয়ন পর্যায়ে ডাটাবেইজ তৈরি করা। প্রান্তিক পর্যায়ের ৮০ভাগ মানুষই জানেনা তাদের ব্লাড গ্রুপ কি। এ ধরনের একটি ডাটাবেইজ থাকলে প্রয়োজনের সময় যে কোন জায়গায় সাপোর্ট দিতে পারবে ব্লাডম্যান।

জিসান বলেন, আমাদের অন্যতম একটি লক্ষ্য হচ্ছে ব্লাডম্যানকে সম্প্রসারিত করা।পরিবহন ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করা যাতে একজন রোগীর কাছে আমরা সহজেই রক্তদাতাকে পৌঁছে দিতে পারি।

এদিকে, এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো 'আরবান ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ' প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছে বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা - ব্র্যাক। গতবারের মতো এবারো আগ্রহী ব্যক্তি বা সংগঠনগুলো আইডিয়া বা প্রজেক্ট প্রোপোজাল সহ অনলাইনে আবেদন করতে পারবে। যাচাই-বাছাই শেষে, এবারো ৫টি সংগঠন বা ব্যক্তিকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। তারা ব্র্যাকের পক্ষ থেকে পাবে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অনুদান, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং ইনকিউবেশন সুবিধা। আরবান ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ ২০১৮-এর অনলাইন রেজিস্ট্রেশন চলবে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।


সর্বশেষ সংবাদ