খেলাধুলা শুধুই বিনোদনের মাধ্যম নয়; এটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মনোবল ও জাতীয় পরিচয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ছোট-বড় সব শ্রেণির মানুষই খেলাধুলাকে ভালোবাসে। বাংলাদেশে অসংখ্য মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে খেলাধুলা। মাঠে, ক্লাবে কিংবা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলাধুলা দেশের প্রতিনিধিত্ব করে, পাশাপাশি সব শ্রেণির মানুষকে ঐক্যবদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করে।
বাংলাদেশের ক্রিকেট আজ জাতীয় গর্বের প্রতীক। ক্রিকেট শুধু খেলা নয়, এটি আমাদের অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয় বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। ওই জয়ের পথ ধরে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো অংশ নেয় ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে। এরপর শুরু হয় ক্রিকেট উন্মাদনার নতুন অধ্যায়। ২০১২ সালের এশিয়া কাপ, ২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ, ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স গোটা জাতিকে গর্বিত করেছে। এ সাফল্য শুধু খেলোয়াড়দের নয়, প্রতিটি ক্রিকেটপ্রেমী বাংলাদেশির আনন্দ ও আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন।
ফুটবলও বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের খেলা। একসময় ফুটবলই ছিল দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অবকাঠামোগত দুর্বলতা, পেশাদার লিগে অনিয়ম, খেলোয়াড় তৈরির ঘাটতি ও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে ফুটবলের মান অনেকটা কমে গেছে। টেলিভিশন ও সামাজিক মাধ্যমে ইউরোপীয় ফুটবলের প্রভাবও দেশীয় আগ্রহে ছায়া ফেলেছে। অন্যদিকে ক্রিকেটের উত্থান জাতীয় গর্বের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ফুটবলকে কিছুটা পেছনে ঠেলে দিয়েছে। তবু ফুটবলের প্রতি মানুষের ভালোবাসা অটুট রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় দলে নতুন প্রজন্মের প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের অন্তর্ভুক্তি ফুটবলপ্রেমীদের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। সবাই বিশ্বাস করে, বাংলাদেশ ফুটবলের স্বর্ণালী দিন আবার ফিরে আসবে।
ক্রিকেট ও ফুটবলের পাশাপাশি হকি, ব্যাডমিন্টন, সাঁতার, দাবা, অ্যাথলেটিক্স ও টেনিসে বাংলাদেশের উপস্থিতিও প্রশংসনীয়। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে গড়ে উঠেছে নানা ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান ও একাডেমি। তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ বাড়ছে, ভবিষ্যতের ক্রীড়াঙ্গনে তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেই আশা করা যায়।
খেলাধুলার গুরুত্ব শুধু সাফল্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে, মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখে, শৃঙ্খলা ও সময়ানুবর্তিতা শেখায় এবং দলগত কাজের মূল্যবোধ গড়ে তোলে। এসব গুণ তরুণ সমাজকে আত্মনির্ভরশীল, দায়িত্বশীল ও প্রতিযোগিতামূলক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে।
একটি সুস্থ জাতি গঠনের ক্ষেত্রেও খেলাধুলার ভূমিকা অনস্বীকার্য। নিয়মিত খেলাধুলা শরীর ও মন দুটোই সুস্থ রাখে এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করে। আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা শুধু ব্যক্তিগত গৌরব অর্জন করেন না, দেশের মর্যাদা ও জাতীয় অহংকারও বৃদ্ধি করেন। সব মিলিয়ে বলা যায়, খেলাধুলা হলো সুস্থ, শক্তিশালী ও সচেতন জাতি গঠনের অন্যতম হাতিয়ার। এটি কেবল বিনোদনের উৎস নয়; এটি দেশের আত্মমর্যাদা, যুবশক্তি ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস-এর ‘খেলাধুলা’ বিভাগে দেশ-বিদেশের ক্রীড়াঙ্গনের খবর, বিশ্লেষণ, ফিচার, প্রতিবেদন ও সাক্ষাৎকার নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়। এ বিভাগের অধীনে আছে ‘ক্রিকেট’, ‘ফুটবল’, ক্যাম্পাস স্পোর্টস’ ও ‘অন্যান্য খেলা’ শিরোনামের উপ-বিভাগে। প্রতিটি বিভাগে পাঠকেরা পেয়ে থাকেন সর্বশেষ ও নির্ভরযোগ্য ক্রীড়া-আপডেট।