অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন
‘প্রাথমিক শিক্ষকের দিনে টিফিন ভাতা সাড়ে ৬ টাকা, শিক্ষা বাঁচবে কীভাবে?’
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৫৯ AM , আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১৪ AM
সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন কাঠামো, মর্যাদা সংকট এবং দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান বাস্তবতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন।
আজ শনিবার (১ নভেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি দীর্ঘ পোস্টে তিনি এসব বিষয়ে মন্তব্য করেন।
তিনি লেখেন, দেশের প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের গ্রেড এখনো ১৩তম। অর্থাৎ সরকারি বেতন কাঠামোতে এই শিক্ষকরা রাষ্ট্রের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। অথচ এই শিক্ষকদের অধিকাংশই স্নাতক ডিগ্রিধারী এমনকি অনেকেই মাস্টার্স ডিগ্রিধারীও। গ্রেড অনুযায়ী শিক্ষকদের মূল বেতন মাত্র ১১ হাজার টাকা। বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা মিলিয়ে সর্বসাকুল্যে একজন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক মাসে পান প্রায় ১৯ হাজার ৫০০ টাকার মতো। ২০১৫ বেতন স্কেল অনুসারে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের দৈনিক টিফিন ভাতার পরিমাণ কত জানেন? দৈনিক সাড়ে ৬ টাকা টিফিন ভাতা পান। বর্তমান বাজারে কিংবা ২০১৫ সালের বাজার মূল্যেই এই টাকা দিয়ে কি খেতে পারতেন?
পুলিশের এসআই পদ ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বেতন গ্রেড তুলনা করে লিখেন, ২০১৫ বেতন স্কেল অনুসারে বাংলাদেশে পুলিশের এসআই পদের গ্রেড কত আর বেতন কত প্রাথমিক স্কুলের বেতন গ্রেড কত, পুলিশের এসআই পদের গ্রেড কত জানেন? ১০ম গ্রেড। আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা বেতন গ্রেড কত জানেন? ১০ম গ্রেড। পুলিশের এসআই আর প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক এই দুই গ্রেডের মানুষদের জীবন যাত্রার মান কি এক সমান? পুলিশের এসআই পদে যারা নিয়োগ পায় তাদের অনেকের গাড়ি বাড়ি আছে। তারা বিলাসবহুল জীবন যাপন করে কারণ বেতন তাদের উসিলা। আসলে তারা তাদের বেতন নিজেরা বানিয়ে নেয়। কিন্তু শিক্ষকদের এই সুযোগ নাই। অনেকেই যেটা করেন সেটা হলো প্রাইভেট পড়ায়। সেটা আবার প্রাথমিকের শিক্ষকরা তেমন একটা পায় না। যার জন্য দেখবেন বাংলাদেশের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের জীবন যাত্রার মান পৃথিবীতে নিকৃষ্ট।
মাধ্যমিক শিক্ষকদের বেতন কাঠামো প্রসঙ্গে তিনি জানান, বাংলাদেশের সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকরা সাধারণত ১১তম গ্রেড (মূল বেতন ১২,৫০০ টাকা) থেকে শুরু করে পদোন্নতি এবং বিএড (B.Ed) ডিগ্রির ওপর ভিত্তি করে দশম গ্রেডে (মূল বেতন ১৬,০০০ টাকা) উন্নীত হতে পারেন। এই শিক্ষকদেরতো ঘুষ দুর্নীতি করে নিজের বেতন নিজেরা বানাতে পারে না। তবে তারাও একটা পথ বের করে ফেলেছে। সেটা হলো প্রাইভেট পড়ানো বা কোচিং-এ পড়ানো। এইটা করে দেশের বারোটা বাজিয়ে ফেলা হয়েছে। প্রাইভেট ও কোচিং-এ পড়ার ডিমান্ড তৈরি করতে শিক্ষকরা স্কুলের শ্রেণিকক্ষে পড়ায় না। ফলে শিক্ষার্থীরা যেই সময়ে খেলতে পারতো সেই সময়ে প্রাইভেট বা কোচিং-এ পড়ে। অভিভাবকরা তাদের পেছনে অতিরিক্ত সময় ও অর্থ ব্যয় করে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের এই ধান্দাবাজি বুঝে ফেলে। তখন শিক্ষার্থীরা কী শিখবে? পুরো জাতিকে এইভাবে ধান্দাবাজে পরিণত করা হয়েছে।
ইউনেস্কোর শিক্ষায় জিডিপির ৬% বরাদ্দের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, যৌক্তিক কারণ আছে। কারণ হলো শিক্ষকদের ভালো বেতন দেওয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেশি বরাদ্দ দেওয়া ইত্যাদি কারণে যাতে শিক্ষকরা আদর্শবান থাকতে পারে। শিক্ষকরা নষ্ট হলে দেশ যে ধ্বংসের দিকে যায় তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ বাংলাদেশ। আশা করেছিলাম এই সরকার অন্তত একটি ভালো কাজ করে যাবেন। সেটি হলো শিক্ষার আমূল সংস্কার। কারণ রাজনৈতিক সরকার আসলে কিছুই করবে না। এই সরকার বড় কিছু করে গেলে রাজনৈতিক সরকার এসে আর পরিবর্তন করতে পারবে না।