খুলনা বিভাগের গুণী শিক্ষক নির্বাচিত হলেন পারভীনা খাতুন
- যশোর প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০:০২ AM , আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০:০৯ AM
যশোর জেলা ও খুলনা বিভাগে মাধ্যমিক শাখায় (সাধারণ) গুণী শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন পারভীনা খাতুন। তিনি যশোর শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারি শিক্ষক।
এর আগেও, বহুমুখি প্রতিভার অধিকারী এই নারী জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ২০১৭ ও ২০২৩ ও শ্রেষ্ঠ গার্ল গাইড শিক্ষক ২০১৭ হওয়ার সম্মান অর্জন করেন। পেয়েছেন বিভিন্ন সংবর্ধনা, সম্মাননা ও পদকও।
জানা গেছে, পারভীনা খাতুনের জন্ম যশোর জেলার মাঠচাকলা গ্রামে নানাবাড়িতে। তার পৈত্রিক নিবাস যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার পাতিবিলা হায়াতপুর গ্রামে। তিনি কবিতা, ছড়া, ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, ভ্রমণকাহিনী ইত্যাদি রচনা করেছেন।
পরভীনা খাতুনের পিতা মো: আজিজুর রহমান ও মা হাসিনা খাতুন। একমাত্র কন্যা মুহাসিনা হক। গ্রামের চিরাচরিত নিয়ম অনুসারে অল্প বয়সে পারিবারিকভাবে বিয়ের পর স্বামীর সংসারে চলে যান তিনি। কিন্তু শিক্ষার প্রতি অদম্য বাসনা তাকে থামাতে পারেনি। শিক্ষার প্রতি অনুরক্ততা দেখে উদারভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন স্বামী মাহবুবুল হক রবি। ফের পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেন তিনি। স্বামী, সংসারের প্রতি কর্তব্য পালনের পাশাপাশি একে একে শিক্ষা জীবনের শেষ ধাপ অতিক্রম করে চাকরি জীবনে প্রবেশের পর বিএড, এমএড, পিজিটি, এমফিলসহ বহুবিধ প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেন। শিক্ষা জীবনের প্রায় সকল ধাপেই গৌরবের সাথে প্রথম বিভাগ অর্জন করেন।
পারভীনা খাতুন বলেন, শিক্ষণ শিক্ষকের কাজ। শিক্ষক হলেন এমন একজন মানুষ যার আদর্শ, নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ, দর্শন, চলন, বলন, ভূষণ এসব অনুসরণযোগ্য হবে। আর তাকে শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, সমাজের সর্বস্তরের মানুষ অনুসরণ করবে এবং উত্তম মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে ও উন্নত সমাজ গঠন করবে। শিক্ষকতা এমন একটি পেশা যে পেশার পেশাজীবীদের দ্বারা অন্য পেশার পেশাজীবী তৈরি হয়। ভবিষ্যতের রাজনীতিবিদ, রাষ্ট্রনায়ক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, কবি, সাহিত্যিক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, ব্যবসায়ী-সবার হাতে খড়ি হয় শিক্ষকদের হাতে। এজন্যই শিক্ষককে মানুষ গড়ার কারিগর বলা হয়।
আরও জানা যায়, শৈশব থেকেই তিনি লেখালেখির প্রতি আগ্রহী ছিলেন। শিক্ষকতা ও সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি উপস্থাপনা ও নাট্য নির্দেশনায়ও সমানভাবে সপ্রতিভ। নিজে নাটক রচনাও করেন। শিশু কিশোরদের প্রতি রয়েছে তার বিশেষ ভালোবাসা। তিনি সবসময় শিশুদের নিয়ে ভাবেন, তাদের উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করতে চান। সে কারণে দেখা যায় তার কবিতা ও নাটকের বেশিরভাগই শিশু কিশোরদের নিয়ে লেখা। এসব লেখায় শিশুদের মনন বিকাশে তার আন্তরিক প্রচেষ্টা পরিস্ফুটিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রাথমিকের ৯৭ শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা, বহিষ্কার ৬৮ জন
তার কবিতায় প্রতিবাদ ও বিদ্রোহের সুর যেমন উচ্চারিত হয়েছে, তেমনি আবহমান গ্রাম-বাংলার সহজ-সুন্দর রূপও ফুটে উঠেছে। তার লেখা নাটক-খুকির স্বপ্ন, কংকালের হাসি, কোচিং বিড়ম্বনা, মোবাইল ছাড়ো বই ধরো, গরিবের ছেলে, বৌ শাশুড়ির সংসার, স্বপ্নরাজ্য, রাখালবন্ধু, হিংটিং, আজব দুনিয়া।
তার লেখা অধিকাংশ নাটক বাংলাদেশ টেলিভিশন, জাতীয় শিশু কিশোর নাট্য উৎসব, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি, ঝিনাইদহ শিল্পকলা একাডেমি, ফরিদপুর জসীমউদ্দীন অডিটোরিয়ামসহ কয়েকটি জেলায় মঞ্চায়ন হয়েছে। খুকির স্বপ্ন নাটকটি শিশু একাডেমির নাটক বিষয়ক প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে।
ভারতের মধ্যপ্রদেশের পাহাড়ি পাঁচমারিতে আন্তর্জাতিক অ্যাডভেঞ্চার প্রশিক্ষণ ও মালয়েশিয়ার পিনাং জর্জ হেরিটেজ সিটিতে আন্তর্জাতিক ক্যাম্পিং সফলতার সাথে সম্পন্ন করেন তিনি। এসব বিষয়ে তার লেখা ভ্রমণ কাহিনী মধ্যপ্রদেশের পাহাড়ি পাঁচমারী, জর্জ হেরিটেজ সিটি পিনাং মালয়েশিয়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তার লেখা ছোটগল্প-স্বপ্নের মৃত্যু, সেউতি এবং একমাত্র উপন্যাস ‘কোনো এক বিকেলের গল্প’ ও মোটিভেশনাল লেখা ‘ঘুরে দাঁড়াও’ পাঠক সমাদৃত হয়েছে।
প্রকাশিত লেখার মধ্যে- কাব্যগ্রন্থ’-‘দ্রোহ’, ‘চার স্বাদের চার নাটক’ (এই বইটিতে চারটি নাটক স্থান পেয়েছে- ক. খুকির স্বপ্ন, খ. কংকালের হাসি, গ. কোচিং বিড়ম্বনা, ঘ. মোবাইল ছাড়ো বই ধরো), ১৯৭১ গণহত্যা যশোর উপশহর, আফরাঘাট ও ভায়না গণহত্যা, ঘুরে দাঁড়াও।
আরও পড়ুন: প্রাথমিকের শিক্ষকদের জন্য জরুরি নির্দেশনা অধিদপ্তরের
জার্নালে ৫টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে, ঝিকরগাছা সরকারি এম.এল মডেল হাইস্কুল (জার্নাল) হেরিটেজ আরকাইভস অব বাংলাদেশ হিসট্রি ট্রাস্ট, ‘মহেশপুর গণহত্যা’(জার্নাল), ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলাধীন নতুন আবিষ্কৃত গণহত্যা: একটি জরিপ প্রতিবেদন, পথ চলার গল্প (আন্তর্জাতিক কর্মসূচি), ক্যাম্পিং এ মালয়েশিয়া ও ১৯৭১ এ যশোর উপশহর ছিল একটি কসাইখানা।
এসবের পাশাপাশি পারভীনা খাতুন রচনা করেছেন একাধিক শিক্ষামূলক নিবন্ধ, যা স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। শিক্ষকতা ও সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি তিনি যুক্ত আছেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথেও। তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য, বাংলাদেশ গার্ল গাইড এসোসিয়েশনের জেলা কমিটির কার্যকরী পরিষদের সদস্য, যশোর শিল্পকলা একাডেমির সদস্য, বিদ্রোহী সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সদস্য, শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সদস্য, যশোর ইনস্টিটিউটের আজীবন সদস্য, প্রাচ্যসংঘ যশোরের নির্বাচিত মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা, শিল্পী সৃষ্টি যশোরের উপদেষ্টা। আলোচক হিসেবে একাধিকবার বাংলাদেশ টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করেছেন।