হাঙ্গেরিতে উচ্চশিক্ষা, রয়েছে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ
- সাগর হোসেন
- প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২২, ০৯:১৯ PM , আপডেট: ২৮ আগস্ট ২০২২, ০৯:১৯ PM
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম দেশ হাঙ্গেরি। দানিয়ুব নদীর তীরে অবস্থিত রাজধানী বুদাপেস্টসহ অন্য বড় শহরের মধ্যে রয়েছে দেব্রেসেন আর মিসকালো। শুধুমাত্র হাঙ্গেরি নয় ইউরোপের রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক, সামাজিক ও যোগাযোগব্যবস্থার কেন্দ্রস্থল বুদাপেস্ট।জীবনযাত্রার মানের দিক থেকে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্ট মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের সবচেয়ে বাসযোগ্য শহর হিসেবে বিবেচিত হয়।
ফোর্বস ম্যাগাজিন বুদাপেস্টকে বসবাসের জন্য ইউরোপের ৭ম উপযুক্ত শহর হিসেবে মর্যাদা দিয়েছে। এই দেশে প্রায় ৯৩,০৩০ বর্গকিলোমিটার আয়তনে বসবাস করে প্রায় ১ কোটি লোকের বসবাস। এই দেশের অফিসিয়াল ভাষা হাঙ্গেরিয়ান এবং মুদ্রার নাম ফরিন্ট (HUF)। এছাড়া হাঙ্গেরির শতকরা ৯৯ শতাংশ মানুষ ইংরেজি ভাষা জানে এবং এই ভাষায় কথা বলতে পারে। সুতরাং খুব সহজেই ইংরেজি ভাষা দিয়ে যোগাযোগ করা যায়।
কেন যাবেন হাঙ্গেরিতে
হাঙ্গেরির শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয় ইংরেজি ও হাঙ্গেরি ভাষায়। এই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রিসার্চের জন্য বিখ্যাত৷ এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রমকে বাস্তবধর্মী করে তুলতে থাকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও ফ্যাক্টরি এটাচমেন্ট। হাঙ্গেরিতে পড়াশুনার খরচও ইউরোপের অন্যান্য দেশের থেকে কম। হাঙ্গেরি সেনজেন ভুক্তদেশ হওয়ায় ইউরোপের ২৫টি দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করার সুযোগ রয়েছে। দেশটির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মান অনেক উন্নত এবং ডিগ্রি অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের ডিগ্রির চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
এ কারণে বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য হাঙ্গেরিকে বেছে নিচ্ছেন। হাঙ্গেরিতে উচ্চশিক্ষার জন্য সাধারণত বছরে ২ বার আবেদন করা যায়।বর্তমানে প্রতি বছর প্রচুর শিক্ষার্থী দেশটিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য পাড়ি জমাচ্ছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই চাকরির অনুমতি নিয়ে হাঙ্গেরিতে স্থায়ী হয়ে থাকেন।
উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা
উচ্চশিক্ষার লক্ষ্যে ১৩৬৭ সালে হাঙ্গেরিতে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয় দেশটিতে। হাঙ্গেরি তার গবেষণা এবং উদ্ভাবনের জন্যও ব্যাপক খ্যাতি পেয়েছে। হাঙ্গেরির ডিগ্রির গ্রহণযোগ্যতা পুরো পৃথিবীব্যাপী। এখানকার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশ্ব র্যাঙ্কিং বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। হাঙ্গেরির ব্যাচেলর ডিগ্রি, মাস্টার ডিগ্রি, ডক্টরেট ডিগ্রি ছাড়াও বিভিন্ন স্বল্প মেয়াদি কোর্সের উপর উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারবেন।
হাঙ্গেরির উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয় হলো- ইউটভাস লরান্ড ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেব্রেসেন, সেমেলউইস ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সেগেড, বুদাপেস্ট ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি অ্যান্ড ইকোনমিকস, ইউনিভার্সিটি অব পেকস ও সেন্ট ইসভান ইউনিভার্সিটি প্রভৃতি।
যেসব বিষয় পড়ানো হয়
মেডিসিন, ফার্মেসি, দন্ত চিকিৎসা (ডেন্টিস্ট্রি), অর্থনীতি, প্রকৃতি বিজ্ঞান, শিল্প এবং সংগীত বিদ্যা, ব্যবসায় প্রশাসন, সামাজিক বিজ্ঞান, মানবিক, পরিবেশ বিজ্ঞান, খাদ্য বিজ্ঞান, কম্পিউটার সায়েন্স, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে পারেন।
স্বল্প টিউশন ফি
হাঙ্গেরিতে আপনি নামমাত্র টিউশন ফি প্রদান করে আপনার পড়াশুনার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবেন। হাঙ্গেরিতে পড়াশুনা করতে আপনার প্রতি বছর ২৫০০ ইউরো থেকে ১০,০০০ ইউরো প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য হাঙ্গেরিকে সেরা সাশ্রয়ী-অধ্যয়ন-গন্তব্য হিসাবে বলা হয়।
বৃত্তির সুযোগ
যদিও হাঙ্গেরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন ফি অনেক কম,তারপরেও এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতি বছর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য নানা ধরনের বৃত্তি প্রদান করে থাকে।শিক্ষার্থীদেরকে টিউশন ফি°র সমপরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয় বৃত্তির মাধ্যমে।অনেক বৃত্তি আছে যেগুলার মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পড়াশুনার সুযোগ দেওয়া হয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের। পাশাপাশি জীবনযাত্রার খরচও প্রদান করে থাকে।
জীবনযাত্রার খরচ
হাঙ্গেরিতে অন্যান্য দেশের তুলনায় জীবনযাত্রার খরচ অনেক কম। আপনি সহজেই ২০০ থেকে ২৫০ ইউরো দিয়ে মাসের সব ধরনের চাহিদা (সেরা মানের খাবার, ডরমিটরিতে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকা, যাতায়াত এবং কেনাকাটা) মিটিয়ে নিতে পারবেন হাঙ্গেরিতে।
পার্টটাইম চাকরি এবং স্থায়ী বসবাসের সুযোগ
হাঙ্গেরিতে শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি পার্ট কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন। তবে তা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত। সাধারণত সপ্তাহে ২৪ ঘণ্টা কাজের সুযোগ দেওয়া হয় হাঙ্গেরিতে। তবে মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত সময় কাজের ফলে ছাত্রত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এছাড়া হাঙ্গেরিতে শিক্ষার্থীদের কেনাকাটার ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়ে থাকে৷ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিস কিনতে ছাড় দেওয়া এবং পরিবহনে ৫০% কম ভাড়া নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন : বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য কোন ব্যাংকে, কীভাবে স্টুডেন্ট ফাইল ওপেন করবেন
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্টাডি রেসিডেন্স পারমিটের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে তাদের চাকরি সুরক্ষিত করার জন্য এক বছরের বেশি সময় দেওয়া হয়। এক বা দুই বছর চাকরি চালিয়ে যাওয়ার পরে, শিক্ষার্থীরা হাঙ্গেরিতে স্থায়ী বসবাসের অনুমতির জন্য আবেদন করতে পারে।
ভিসার আবেদন
হাঙ্গেরির স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া অন্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় তুলনামূলকভাবে সহজ। আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
আপনার আবেদনের জন্য কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন তা নির্ভর করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর। তাই আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েব সাইট থেকে বিস্তারিত সব কিছু জেনে নিয়ে । সাধারণত নিম্নোক্ত ডকুমেন্টস আপনার আবেদনের সময় প্রয়োজন হতে পারে:
- পূরণকৃত আবেদন ফর্ম
- সকল একাডেমিক সার্টিফিকেট ও মার্কশীট এর সত্যায়িত কপি
- আইইএলটিএস (ন্যূনতম ৬.০)/জার্মান B2 সনদ
- এনআইডি/পাসপোর্ট কপি
- মোটিভেশন লেটার/সিভি/রেফারেন্স লেটার
- কাজের অভিজ্ঞতা/রিসার্স পেপার (যদি প্রয়োজন হয়)
অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনলাইন পরীক্ষা নিয়ে থাকে। তাই এই ব্যাপারে অবশ্যই ভালো করে খোঁজ নিতে হবে। প্রয়োজনে বিশেবিদ্যালয়ের Admission Office-এ যোগাযোগ করতে পারেন অথবা তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন। অন লাইন পরীক্ষা নেওয়ার পর আপনাকে ফলাফল জানিয়ে দিবে কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে কন্ডিশনাল অফার লেটার দিতে পারে। সেক্ষেত্রে শর্ত পূরণ ও নির্দিষ্ট ব্যাংক একাউন্টসে টিউশন ফি প্রদান করলেই অফার লেটার দিয়ে থাকে।
যোগ্যতাসমূহ
হাঙ্গেরিতে স্নাতক এ পড়তে গেলে আপনাকে অবশ্যই HSC অথবা ডিপ্লোমা পাশ হতে হবে৷ অনেক কোর্সে ভর্তির জন্য আপনাকে এন্ট্রান্স এক্সাম দিতে হতে পারে। অথবা প্রিপেরোটরী কোর্সে ভর্তি হতে হবে। স্নাতক কোর্স গুলোর অধিকাংশই হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় করানো হয়। তবে অল্প সংখ্যক ইংরেজি কোর্সও আছে। এছাড়াও IELTS স্কোর ৫.০ থেকে ৬.০ আর TOEFL স্কোর ৬০ থেকে ৮০ থাকতে হবে। আর স্নাতকোত্তর এ পড়ার জন্য স্নাতক আর পিএইচডি প্রোগ্রামে পড়তে গেলে স্নাতকোত্তর এর ডিগ্রীর প্রয়োজন হবে।পাশাপাশি IELTS স্কোর ৫.৫ থেকে ৬.৫ আর TOEFL স্কোর ৭০ থেকে ৯০ থাকতে হবে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, শিক্ষার্থীদের আইইএলটিএস থাকলেও হয়। ভালো একাডেমিক ফলাফল এক্ষেত্রে আইইএলটিএসের বিকল্প হতে পারে। ভর্তি নিশ্চিত হয়ে গেলে এবং কয়েক হাজার ইউরো ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকলে, কোনো বাধা ছাড়াই আপনি আবাসিক পারমিট কার্ড পাবেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রোগ্রাম ভেদে যোগ্যতার তারতম্য হয়। তাই আবেদনের সময় আপনাকে আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে খুঁটিনাটি বিষয়সমূহ জেনে নিতে হবে।