চীনের এক গ্রামে ৩৩ জন পিএইচডি: শিক্ষাকে ঘিরে অনন্য ঐতিহ্য
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৫ AM
চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ফুজিয়ান প্রদেশের দুর্গম পাহাড়ি গ্রাম পেংদাও। ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন হলেও শিক্ষার দিক থেকে গ্রামটি অনেক শহরকেও ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় ছয় হাজার মানুষের এই ছোট্ট গ্রামটি আজ পরিচিত ‘পিএইচডি গ্রাম’ নামে। কারণ, এখান থেকে এখন পর্যন্ত ৩৩ জন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
এই সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান স্থানীয় গুও পরিবার এবং তাদের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা তহবিলের। প্রতিবছর গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দির প্রাঙ্গণে আয়োজিত হয় বর্ণাঢ্য বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান। এতে শিক্ষার্থীদের শুধু আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয় না, বরং শিক্ষাকে পারিবারিক ঐতিহ্য ও সামাজিক গৌরবের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এ বছর প্রায় ২ লাখ ১৭ হাজার ইউয়ান (৩০ হাজার মার্কিন ডলার) বৃত্তি হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি প্রোগ্রামে, ১৫ জন মাস্টার্সে এবং আরও অনেকে স্নাতক স্তরে।
আরও পড়ুন: বিদেশে উচ্চশিক্ষা: চীনের সেরা ১০ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জেনে নিন
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা যে লাল ফিতা পরিধান করেন, তাতে লেখা থাকে—‘আমাদের বংশের গৌরব’। অর্থাৎ ব্যক্তিগত অর্জনকে দেখা হয় সামগ্রিক সাফল্য হিসেবে। গ্রামটির প্রধান ভবনে টাঙানো লাল রঙের স্ক্রলে ঝুলছে ডক্টরেট ডিগ্রিধারীদের নাম ও তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। এটি শুধু শিক্ষার কৃতিত্ব নয়, বরং পুরো সম্প্রদায়ের সম্মানের প্রতীক।
ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায় এ গ্রামে আবাদযোগ্য জমি কম থাকায় মানুষ দীর্ঘদিন দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেছে। কিন্তু কৃষির সীমাবদ্ধতা পুষিয়ে দিতে তারা বেছে নিয়েছেন শিক্ষা। অভিভাবকেরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সন্তানদের পড়াশোনার গুরুত্ব বোঝাতে সচেষ্ট থেকেছেন। ফলে শিক্ষাকে এখানে শুধু ব্যক্তিগত ইচ্ছা নয়, বরং সাংস্কৃতিক দায়িত্ব হিসেবে দেখা হয়।
গুও পরিবারের শিক্ষা তহবিলের পরিচালক গুও দোংইউ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য শুধু শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় উৎসাহিত করা নয়। এই পুরস্কার তাদের দেশপ্রেম, সমাজসেবা ও ঐতিহ্য রক্ষার চেতনায় অনুপ্রাণিত করে।’
আরও পড়ুন: জেনে রাখুন বিশ্বসেরা ২৯ স্কলারশিপের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট
বর্তমানে পেংদাও গ্রামের পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা চীনের সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়, হংকং বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান থেকে সাফল্যের স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় গ্রামটি এখন অনন্য এক প্রতীকে পরিণত হয়েছে—যেখানে দারিদ্র্য জয় করে শিক্ষাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে মর্যাদা ও প্রজন্মান্তরের সাফল্যের গল্প।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট