প্রতীমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব

প্রতীমা বিসর্জন
প্রতীমা বিসর্জন  © সংগৃহীত

বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে শেষ হলো হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সকালে দর্পণ-বিসর্জনের মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানো হয়। এরপর দুপুর গড়াতেই শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য হলো মানুষের মনে থাকা কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসার মতো আসুরিক প্রবৃত্তিগুলোর বিসর্জন। এসব ত্যাগ করেই মানুষকে ভ্রাতৃত্ববোধ ও শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানায় এ উৎসব।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠী তিথিতে চন্ডীপাঠ, বোধন ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দুর্গাপূজা। টানা পাঁচদিন ঢাকাসহ সারাদেশের হাজারো মণ্ডপে চলে দেবী দুর্গার আরাধনা। দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্তি ঘটে এ ধর্মীয় আয়োজনের।

ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, বিসর্জনের মাধ্যমে দেবী দুর্গা ফিরে যান কৈলাসে, স্বামীর গৃহে। আবার আগামী শরতে তিনি ফিরে আসবেন পিতৃগৃহে, এই পৃথিবীতে।

প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে ছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাজধানীর বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীতে একে একে বিসর্জন দেওয়া হয় প্রতিমাগুলো। সড়কে ছিল পুলিশের টহল, নদীতে দায়িত্ব পালন করে নৌপুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস।

আরও পড়ুন: সরলেন তামিম, মির্জা আব্বাস-সালাহউদ্দিনের ছেলে, বিসিবি নির্বাচনেও কি হারছে বিএনপি?

বিকেলে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য বিজয়া শোভাযাত্রা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ভক্তরা ট্রাকে করে প্রতিমা নিয়ে পলাশী মোড়ে এসে সমবেত হন। সেখান থেকে শত শত ট্রাক শোভাযাত্রা নিয়ে এগিয়ে যায় সদরঘাটের দিকে। শোভাযাত্রাটি ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে শুরু হয়ে শহীদ মিনার, হাইকোর্ট, পুলিশ হেডকোয়ার্টার, গোলাপ শাহ মাজার ও কোর্ট এলাকা পেরিয়ে পৌঁছে যায় নদীর ঘাটে।

শোভাযাত্রা ও বিসর্জন ঘিরে শহরের রাস্তায় ছিল উৎসুক জনতার ভিড়। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রতিমা বিসর্জন না দিয়ে রাখা হলেও, দেবীর পূজায় ব্যবহৃত ফুল, বেলপাতা ও ঘট বিসর্জন দেওয়া হয়। প্রথা অনুযায়ী, বিসর্জনের পর নদী থেকে শান্তিজল এনে মঙ্গল ঘটের মাধ্যমে তা গৃহে ধারণ করা হয়, যা পরবর্তী বছর পূজায় ব্যবহৃত হবে।

রামকৃষ্ণ মিশনেও অনুষ্ঠিত হয় সন্ধ্যা আরতি ও প্রতিমা বিসর্জন। মিশনের পুকুরে প্রতিমা বিসর্জনের পর ভক্তরা শান্তিজল গ্রহণ করেন এবং মিষ্টিমুখ করেন।

এ বছর সারাদেশে মোট ৩৩ হাজার ৩৫৫টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুধু ঢাকা মহানগরীতেই পূজা হয়েছে ২৫৮টি মণ্ডপে। প্রতিটি মণ্ডপে শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব আয়োজনের লক্ষ্যে প্রশাসনের পাশাপাশি মণ্ডপ কমিটির পক্ষ থেকেও নেওয়া হয় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অধিকাংশ মণ্ডপে ছিল সিসিটিভি ক্যামেরা এবং স্বেচ্ছাসেবক টিম।


সর্বশেষ সংবাদ