জবিতে ডায়ারিয়ার প্রকোপ: ছাত্রীদের আতঙ্ক কাটেনি

বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল
বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল  © ফাইল ছবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে চারদিনে অর্ধশতাধিক ছাত্রী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার খবরে শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা জানান, ১৬ তলা হলে গত এক সপ্তাহে ৭-৮ জনের ডায়রিয়ার হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু আজকে অর্ধশতাধিক আক্রান্তের খবর শুনে তারা বিস্মিত হয়ে পড়েছেন। এ খবরে তাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হলের ২য় ও ১৬তম তলায় ইতোমধ্যে দুইটা পানির ফিল্টার লাগানো হয়েছে। একইসঙ্গে আগামী সপ্তাহের মধ্যে পুরো হলে আরও ১৪টি ফিল্টার স্থাপনের প্রস্তুতিও চলছে। হলের পানি সরবরাহ করার জন্য ওয়াসার লাইন নয়, রয়েছে গভীর নলকূপ।

হলে হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ বিষয়ে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, পানির কারণে যে ডায়রিয়া হচ্ছে একথা পুরোপুরি সত্য নয়। তবে এটা ঠিক যে হলে মাত্র ক্যান্টিনে মাত্র দুইটি ফিল্টার। তাই হলে পানি নিতে একটু সময় লাগে। যদি পানির কারণেই সমস্যা হতো তাহলে তাদের সকলের হতো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ডায়রিয়ার চিকিৎসা নেয়া ছাত্রীরা জানান, চলতি মাসের ২৭ তারিখে ১২ জন, ২৮ তারিখে ১২ জন, ২৯ তারিখে ১৪ জন এবং ৩০ তারিখে ১৫ জন শিক্ষার্থী ডায়রিয়ার প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। আজ ৩১ তারিখে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬ জন।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মিতা শবনম বলেন, গণমাধ্যমে ছাত্রী হলের ডায়রিয়া অর্ধশতাধিক ছাত্রী আক্রান্ত এ তথ্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এখানে চিকিৎসা নেয়া সকলে ছাত্রী হলের না। এমনকি এই সংখ্যার ভেতর ছেলেরাও ছিলেন। চিকিৎসা নেয়া ছাত্রীদের মধ্যে অধিকাংশ ছাত্রী হল বহির্ভূত। আর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কেউ আসেনি।

আরও পড়ুন: ঐতিহ্য ও গৌরবের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

তিনি আরো বলেন, সারাদেশেই এখন ডায়রিয়ার প্রকোপ অনেক বেশি বেড়েছে। বিশেষ করে ঢাকা শহরে এই মাত্রাটা একটু বেশি। সুতরাং এখনে হলের বা পানির দোষ দিলে হবে না। সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

পার্শ্ববর্তী সুমনা হাসপাতালের ম্যানেজার বরুণ বলেন, গত চারদিনে ডায়রিয়াজনিত সমস্যা নিয়ে ২৬ তারিখে মাত্র একজন জবি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিলো। এ যাবৎকালীন সময়ে আর কেউ ভর্তি হয়নি ডায়রিয়াজনিত কারণে। পাশ্ববর্তী ঢাকা ন্যাশনাল হাসপাতালে খোঁজ নিজে জানা যায়, সেখানে মাত্র দুইজন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিলো তার মধ্যে হল প্রভোস্ট নিজে একজনকে ভর্তি করেছিলেন।

অন্যদিকে হলের ক্যান্টিন পরিচালক নূর মোহাম্মদ মামুন বলেন, আমাকে একজন ফোন করেছিলো আমি বলেছি যে পানিতে একটু আয়রণ আছে; ভাত লাল হয়ে যায়। কিন্তু পানিতে জীবানু আছে বা পানির কারণে ডায়রিয়া হয়েছে- এ কথা আমি বলিনি। এমনকি আমরা রান্না-বান্নাও অনেক পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে করি।

হল প্রভোস্ট ড. শামীমা বেগম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পানিতে আয়রণ আছে এ কথা সত্য। কিন্তু আয়রণযুক্ত পানি খেলে ডায়রিয়া হয় না। একইসঙ্গে পানিতে কোন প্রকার জীবানু নেই। গতকাল আমি হলের পানি পরীক্ষা করিয়েছি। এতে কোনো জীবানু পাওয়া যায়নি। সুতরাং হলের পানির কারণে ছাত্রীদের ডায়রিয়া হয়েছে এ কথা মোটেও ঠিক নয়।

‘‘হলের পানি তো আমিও খাচ্ছি সারাক্ষণ, আমার ব্যাগেও এই পানি রাখি। আমাদের যত কর্মচারী আছে সবাই একই পানি খাচ্ছে। সুতরাং হলের পানির কারণে যে ডায়রিয়া হচ্ছে এটা ভিত্তিহীন। সব থেকে বড় কথা হলো আমাদের এই পানি ওয়াসার পানি না। গভীর নলকূপ বসিয়ে আমাদের পানি তোলা হয়।’’

আবহাওয়াজনিত কারণে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে জানিয়ে শামীমা বেগম বলেন, ছাত্রী হলের পানিতে ও খাবারে কোন সমস্যা নেই। যদি তাই হতো তাহলে সবাই আক্রান্ত হতো। যেসব শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হয়েছে তারা বাইরের খাবার খেয়েছে নয়তো গরমের মধ্যে আবহাওয়াজনিত কারণে এমন সমস্যা হয়েছে। তবে যেটা প্রাকাশিত হয়েছে যে ‘হলে অর্ধশতাধিক ছাত্রী আক্রান্ত’- এটা সঠিক নয়।


সর্বশেষ সংবাদ