জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষার্থীর সংখ্যা এগিয়ে থাকলেও প্রশ্ন শিক্ষার মান নিয়ে

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য বর্তমানে ৫০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এই প্রতিষ্ঠানটির অধীনে সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি দুই হাজার ২৬০টি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স রয়েছে। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানে ডিগ্রি পাস কোর্সও পাঠদান করা হচ্ছে।

অন্যান্য উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা অনেক বেশি হলেও ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতে এখনও বেশ পিছিয়ে রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো। জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষার্থী-শিক্ষকের অনুপাত ১:৩০ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। অথচ বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত সরকারি কলেজে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ১:৮৯ আর বেসরকারিতে ১:৪৯।

আরও পড়ুন: শিক্ষার মান উন্নয়নে সব কিছুই করা হচ্ছে: শিক্ষামন্ত্রী

সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাস্তবায়নাধীন একটি প্রকল্পের এক অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৪ দশমিক ৪১ শতাংশ আর এরই মধ্যে শুধু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে সাড়ে ১৭ শতাংশ। শিক্ষার্থীর সংখ্যায় এগিয়ে গেলেও নিজেদের অধিভুক্ত কলেজে শিক্ষার মান নিয়ে সন্তুষ্ট নন খোদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারাই।

জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর সুপারিশে কথা ছিল ২০১৮ সালের মধ্যে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত কমিয়ে আনার। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে ওই সুপারিশ কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে। দেশে পুরোনো ২৮৯টি সরকারি কলেজে প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষা ক্যাডার পদের মধ্যে প্রায় তিন হাজারের বেশি পদ শূন্য রয়েছে।

আরও পড়ুন: শিক্ষার মান গবেষণার ওপর নির্ভর করে: জাফর ইকবাল 

এছাড়া ২০১৬ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সারাদেশের ৩৩১টি বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণের আওতায় নেয়া হয়েছে। এসব কলেজেও আরও প্রায় সাড়ে ১২ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে। নতুন নিয়োগ স্থগিত থাকায় ওইসব কলেজেও শিক্ষক সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, আমরা ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ১:৩০ করার সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি কলেজের বৈষম্য কী নিরসন হয়েছে?

জাতীয় শিক্ষানীতিতে উচ্চশিক্ষা সর্ম্পকে বলা হয়েছে, উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য হবে জ্ঞান সঞ্চারণ ও নতুন জ্ঞানের উদ্ভাবন এবং সেই সঙ্গে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা। বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রগুলোর জন্য স্বশাসন ব্যবস্থা অপরিহার্য। তবে তা যথানিয়মে নির্ধারিত নীতিমালার আওতায় বাস্তবায়িত হবে এবং সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অর্থ প্রস্তাবিতভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না সে বিষয়ে সরকারি তদারকির ব্যবস্থা থাকবে।

আরও পড়ুন: শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত: আন্তর্জাতিক মান নেই ৪৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে

গত ১১ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাস্তবায়নাধীন কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টর (সিইডিপি) এক অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, আমরা কলেজের সংখ্যা বাড়িয়েছি, অনার্স-মাস্টার্স চালু করেছি, কিন্তু কলেজের অবকাঠামো উন্নয়ন, বিজ্ঞান গবেষণা, শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও শিক্ষার মানোন্নয়নের দিকে নজর দেইনি।

শিক্ষানীতিতে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে প্রচলিত উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা বাংলাদেশের মতো একটি স্বাধীন দেশের প্রয়োজন সম্পূর্ণভাবে মেটাতে সমর্থ নয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চশিক্ষার সামগ্রিক ব্যবস্থায় পুনর্বিন্যাস আবশ্যক। মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং ক্ষেত্রবিশেষে (যথা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ব্যবসায়) বাস্তব প্রশিক্ষণ দিতে পারে সেই আলোকে বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথ নিয়মানুসারে চালিত হতে হবে।

সিইডিপির অনুষ্ঠানে বলা হয়, দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে মোট ২৪ দশমিক ৪১ শতাংশ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক দশমিক ৭৭ শতাংশ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দশমিক ০৭ শতাংশ, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দশমিক ০৯ শতাংশ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীভুক্ত কলেজে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে ১৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

ওই অনুষ্ঠানে সিইডিপির পরামর্শক ড. শামসুল আরেফিন জানান, দেশের সরকারি কলেজগুলোতে ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত এক দশমিক ৮৯ শতাংশ, যা বেসরকারি কলেজে এক দশমিক ৪৯ শতাংশ। 

১৯৯২ সালে দেশে বেসরকারি কলেজে অনার্স কোর্স চালু হয়েছে। তবে বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স পাঠদানকারী শিক্ষকরা সরকার থেকে বেতনভাতা (এমপিও) পান না। যদিও সম্প্রতি কিছু সংখ্যক কলেজের অনার্স-মাস্টার্স পাঠদানকারী শিক্ষককে এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের কারণে সম্প্রতি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা প্রশাসন।

কলেজে উচ্চশিক্ষা সর্ম্পকে অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ জানান, অধিকাংশ সরকারি কলেজে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষক দিয়ে উচ্চশিক্ষায় পাঠদান হচ্ছে, একইভাবে বেসরকারি কলেজেও আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে সরকারি শিক্ষকরা পাঠদান করছেন। এর কারণ হলো- অনেক সরকারি কলেজে পদের তুলনায় শিক্ষক নেই, আর বেসরকারি কলেজগুলো অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের বেতন-ভাতাই ঠিকমতো দিতে পারছেন না।

বেসরকারি কলেজগুলো শিক্ষক-কর্মচারীদের নামমাত্র অংকের বেতন দিতে গিয়েই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টিউশন ফি আদায় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার আউট সোর্সিং শিক্ষকদের বেতন যোগাতে সরকারি কলেজগুলোও নানাভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে।

সিইডিপির অনুষ্ঠানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন (কারিকুলাম) ড. মুহাম্মদ বিন কাসেম বলেন, বেসরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষার মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এই ধরণের কলেজের অন্যতম মূল সমস্যা হলো আর্থিক সংকট।

তিনি আরও জানান, সরকারি কলেজগুলো ১৫ টাকা, ২০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২৫ টাকা হারে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন নিচ্ছে। বেসরকারি কলেজগুলো টিউশন ফি নিচ্ছে গড়ে ১৫০০ টাকার মতো। এই বৈষম্য কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন ড. মুহাম্মদ বিন কাসেম।


সর্বশেষ সংবাদ