পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে সরব কুবির শিক্ষকরাও

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়  © সংগৃহীত

স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে শিক্ষার্থীদের দাবি জোরালো হচ্ছে। ইতোমধ্যে সারাদেশে আন্দোলনের ঘোষণাও দিয়েছেন তারা। আর শিক্ষার্থীদের এ দাবির সাথে একমত পোষণ করে সরব হচ্ছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষক ক্যাম্পাস খুলে পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. শেখ মকছেদুর রহমান বলেন, 'করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করছে ঠিকই কিন্তু তেমন ফলপ্রদ হচ্ছে না। সমস্যা হচ্ছে, অনলাইন ক্লাসে একদিকে যেমন ছাত্র-ছাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না অন্যদিকে শিক্ষকদের জন্যও স্বস্তিদায়ক নয়। আবার ব্যবহারিক শিক্ষা নির্ভর বিষয়ে অনলাইন পাঠদান তেমন কার্যকর নয়। তাই প্রত্যক্ষ পাঠদানের কোন বিকল্প নেই। সত্য কথা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯% শিক্ষার্থী এখন হতাশাগ্রস্ত! এ ছেলে-মেয়েদের দিকে তাকানো যায়না! প্রকৃতপক্ষে হতাশা থেকে আমরা শিক্ষক সমাজ শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিতে চাই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছাত্রছাত্রীদের মত শিক্ষকগণও ক্লাসে ফিরতে চায়, পরীক্ষা নিতে চায়। প্রয়োজনে আমরা শিক্ষর্থীদেরকে সেকশন করে শিফট ভিত্তিক ক্লাস করাবো, বড় পরিসরে বড় হলরুমে এক বেঞ্চে একজন করে বসিয়ে পরীক্ষা নিব। এখন প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সরকারি সিদ্ধান্ত।' 

তিনি আরও বলেন, 'শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে করোনার বিস্তার বেশি হবে'- এ যুক্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন। আমরা দেখছি দূর পাল্লার গাড়ি ব্যতীত জেলার অভ্যন্তরে সকল প্রকার গাড়ি-ঘোড়া চলছে, গার্মেন্টসসহ সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলা, অফিস চলছে, দোকানপাট, প্রার্থনালয় সবই উন্মুক্ত। এখানে যদি করোনার বিস্তার না ঘটে তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে করোনার বিস্তার ঘটবে এমন চিন্তা অমূলক নয় কি? মনে প্রশ্ন জাগে, করোনার দোহাই দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের কোন ষড়যন্ত্রের মধ্যে পড়ে যাচ্ছিনাতো? স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে করোনা সহজে যাবে না, তাই করোনার মধ্যে থেকেই আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। পরিশেষে, সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ রাখছি, আর দেরি না করে এখনই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার ঘোষণা দিন।'

আরও দেখুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ছে, ঘোষণা আসতে পারে কাল

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ও লোক প্রশাসন বিভাগের প্রধান মো. রশিদুল ইসলাম শেখ প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু একটা করুন। কিভাবে আমরা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাগুলো নিতে পারি। আসলেই তারা বঞ্চিত হচ্ছে। দয়া করে আমাদেরকে নির্দেশনা দিন।

লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বলেন, সারা দুনিয়ায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাশ, পরীক্ষা, রেজাল্ট প্রকাশ, নতুন ভর্তি কার্যক্রম সবই অনলাইনে চলছে। ব্যতিক্রম শুধু আমরা। এভাবে আর কতদিন, কয় মাস, কয় বছর? ছেলেমেয়েদের বয়স বেড়ে যাচ্ছে। অধিকাংশই পড়াশুনার বাইরে চলে গিয়েছে। ওদের জন্য মায়া লাগে, খারাপ লাগে। পরীক্ষা না থাকলে অনলাইন ক্লাশে যেমন মনোযোগ আসে না, পড়াশুনাও তেমন একটা হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন তথা স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অচিরেই একটি কার্যকরী উপায় খুঁজে বের করার জন্য এগিয়ে আসা উচিত।

বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোকাদ্দেস-উল ইসলাম বলেন, 'সবই খোলা খালি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। আর কত? আর দীর্ঘ না হোক শিক্ষার্থীদের ছাত্রজীবন। অন্তত পরীক্ষাগুলো অফলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক।'

আরও দেখুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন আজ

সিএসই বিভাগের শিক্ষক শাহরিয়ার অনিক বলেন, ছাত্র-ছাত্রীরা মার্কেটে যাচ্ছে, কক্সবাজার যাচ্ছে, বাজারে যাচ্ছে, আত্নীয়-স্বজনদের বাসায় যাচ্ছে, মসজিদে যাচ্ছে, ব্যাংকে যাচ্ছে, অফিস আদালতে যাচ্ছে, বাইক দিয়ে ট্যুর দিচ্ছে, খেলাধুলা করছে, আড্ডা দিচ্ছে, সবই হচ্ছে। শুধু একটা জিনিসই হচ্ছেনা সেটা হচ্ছে পড়াশোনা, এটাই সবচেয়ে লেস ইম্পর্টেন্ট ইস্যু এখন। সরকার কে যেই মহলই ঠিকমতো চাপ দিতে পারছে, সেই মহলই সীমিত পরিসরে তাদের কাজ চালু করতে পারছে। শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে এই দেড় বছর সময়ে চাপ দেয়ার কেউ নাই বুঝলাম, কিন্তু কেউ কি কোনো বিকল্প চিন্তাও করতে পারেনি? যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ, অন্তত ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষাগুলো নেয়ার ব্যবস্থাটা করে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা মোটামুটি দায়িত্বশীল, তাদের অন্ততঃ সুযোগ করে দিন পরীক্ষা দেয়ার৷ এমন কঠিন দায়বদ্ধতা নিয়ে একজন শিক্ষক হিসেবে নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে।

একাউন্টিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুবব্রত সাহা বলেন, 'কর্তৃপক্ষ দয়া করে এখনি অফলাইনে পরীক্ষা এবং যথাসম্ভব দ্রুত ক্লাস নেওয়া শুরু করুন। প্রায় শিক্ষার্থীর ওপরই পারিবারিক দায়িত্ব রয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় দেশ শিক্ষার্থীদের দেড় বছরের সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। যদি একজন বাস কন্ডাক্টর, হোটেল কর্মচারী, পোশাক শ্রমিক স্বাস্থ্যবিধি মেইনটেইন করতে পারে তাহলে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী কেন তা পারবেনা।'

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক মাহমুদুল হাসান খান বলেন, 'মাননীয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্তত পরীক্ষাগুলো নেওয়ার ব্যবস্থা করুন। আমাদের আগামী প্রজন্মদেরকে হুমকির মুখে ফেলে দিবেন না।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মাহমুদুল ইসলাম রাহাত বলেন, করোনাকে সঙ্গী করেই আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে হবে। চীন থেকে আরো ছয় লাখ ভ্যাকসিন আসলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দিয়ে, দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া উচিত। তারপর পর্যায়ক্রমে স্কুল কলেজ খুলে দেয়ার চিন্তা করা যায়।

 


সর্বশেষ সংবাদ